নতুন বছরে নতুন সরকার

বিএনপির নৈরাজ্য মোকাবিলা করাই হবে বড় চ্যালেঞ্জ

প্রকাশ : ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

দেখতে দেখতে আরো একটি বছর কেটে গেল। নতুন খ্রিষ্টীয় বছর ২০২৪কে স্বাগত। আগামী ৭ই জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করলেও আওয়ামী লীগসহ ২৯টির মতো রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে। প্রার্থী সংখ্যাও কম নয়। এবারের নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করার জন্য সব দল ও মতের মানুষের জন্য দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হলেও এর বাইরে বিপুল সংখ্যক নেতা এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। দলীয়ভাবে তাদের নিরুৎসাহিত করা হয়নি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। যার যতটুকু জনপ্রিয়তা রয়েছে তিনি তার প্রমাণ দিবেন এই নির্বাচনে। অতীতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে অনেকে হতাশ হতেন। তাদের হতাশা কাটাতে তাদের জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ অবাধ করে দেয়া হয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশদারীত্বমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশন সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। দেশি-বিদেশি বিপুল সংখ্যক পর্যবেক্ষক এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এই নতুন সরকার ক্ষমতায় আসবে। নতুন সরকার কীভাবে গঠিত হবে সেটা নির্বাচনের আগে ধারণা করা না গেলেও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আগামী দিনে দেশ পরিচালিত হবে এমন প্রত্যাশা করে এ দেশের মানুষ। নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে কতটা লাভবান হলো সেই বিচার-বিশ্লেষণ করার সময় এসে গেছে। বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য দেশ-বিদেশের অনেকে অনেক প্রচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বলে অনড় অবস্থানে থাকায় দলটি নির্বাচন থেকে ছিটকে পড়ল। বিএনপির নির্বাচনে না আসার একটি প্রধান কারণ হচ্ছে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডন প্রবাসী তারেক রহমান দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না বলেই তারা দলীয় নেতাদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখলেন। নির্বাচন হচ্ছে নেতাদের প্রাণ। তারা নির্বাচন আসলে উজ্জীবিত হন। অথচ সারা দেশে যখন নির্বাচনি ডামাডোল চলছে তখন বিএনপি নেতারা ঘরবন্দি। বিএনপির কর্মীরা ভোটের দিন কি করবেন তা নিয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভি বলেছেন, পরিবারকে সময় দিতে। আগামী রোববার বিএনপির নেতাকর্মীরা পরিবারকে সময় দেবেন। তাহলে বিগত ১৫ বছর আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিএনপি নেতাকর্মীরা কোথায় ছিলেন সেই প্রশ্ন উঠতেই পারে। বিএনপি নির্বাচনে আসলে জাতীয় সংসদে তাদের একটা প্রতিনিধিত্ব থাকত। তারা দেশের মানুষের কথা তুলে ধরতে পারত। বিএনপি নামক রাজনৈতিক দল কাদের নিয়ে জিয়াউর রহমান গঠন করেছিলেন সেটাকে ভিত্তি ধরলে বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতা প্রতীয়মান হবে। দীর্ঘদিনের পথ-পরিক্রমায় বিএনপির নেতাকর্মীরা আগামী দিনে হতাশ হয়ে যাবেন এটাই স্বাভাবিক। কেননা তারা আওয়ামী লীগের মতো আদর্শিকভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ নয়। আওয়ামী লীগ ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকার সময় দলকে যেভাবে ঘুচিয়ে এনেছিল সেই পরিশ্রমের ফসল আজ তারা ভোগ করছে। আগামী রোববারের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নুতন সরকার নতুন করে দেশ পরিচালনা করবে, মানুষের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করবে। আওয়ামী লীগ সরকার আগামী দিনে দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে সরকারের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। দেশের চলমান উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত করার সুযোগ পাবে। আওয়ামী লীগ আরো ৫টি বছর ক্ষমতায় থাকলে দেশের চলমান মেগাপ্রকল্পগুলো হয়তো শেষ হয়ে যাবে। তখন বাংলাদেশের চেহারা কেমন হবে সেটা এই মুহূর্তে কল্পনা করা সম্ভব নয়। দশ বছর আগে মেট্রোরেল কি জিনিস তা সাধারণ মানুষ জানত না। তবে এখন মানুষ যানজটের এই রাজধানীতে কত অল্প সময়ে গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছে সেটা তো তখন কল্পনাও করা যায়নি। একটা একটা মেগাপ্রকল্প উন্নয়ন ও স্বস্তির এক একটা মাইল ফলক। আওয়ামী লীগ সরকার আগামী ৫ বছর দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে মানুষের কল্যাণে আরো বেশি আত্মনিয়োগ করতে পারবে। তবে সেই সুযোগ বিএনপি দেবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কেননা বিএনপি কাগজে-কলমে যেভাবে অবরোধ-হরতাল অসহযোগ আন্দোলনের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে তাতে দেশের স্থিতিশীলতা অক্ষুণ্ণ রাখা কঠিন না হলেও সরকার পরিচালনা স্বস্তিদায়ক হবে না। আগামীতে যে সরকারই ক্ষমতায় অসুক না কেন তাকে আগুন সন্ত্রাসের মতো নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। বিএনপি বিদেশি আদালতের মাধ্যমে ঘোষিত একটি সন্ত্রাসী দল হওয়ায় তাদের চরিত্রের প্রতিফলন ঘটবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। ক্ষমতার বাইরে থেকে বিএনপি আগামী পাঁচ বছর কি করবে সেটা নিয়েই যত আশঙ্কা। বিএনপি ঘরে বসে পরিবারকে সময় দেবে না। তারা সরকারকে রাষ্ট্র পরিচালনায় পদে পদে বাধাগ্রস্ত করবে। নতুন সরকার বিএনপির এসব নৈরাজ্য কীভাবে মোকাবিলা করবে সেটা নিয়েই ভাবতে হবে। কেননা দলটি দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন প্রতিহত করার ডাক দিয়েছে। সেই সঙ্গে হুমকি দিয়েছে নতুন সরকারকে দেশ পরিচালনা করার সুযোগ দেয়া হবে না।