ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পরিবেশবান্ধব পর্যটন উন্নয়ন জরুরি

অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার দেব
পরিবেশবান্ধব পর্যটন উন্নয়ন জরুরি

হাজার মাইলের যাত্রা শুরু হয় এক ধাপ ভ্রমণ দিয়ে, যা মানুষকে স্থান পরিবর্তনের মাধ্যমে মনে নতুন শক্তি জোগাতে সহায়তা করে। মানবজীবন সংক্ষিপ্ত কিন্তু পৃথিবী প্রশস্ত, তাই যত তাড়াতাড়ি পৃথিবীর বিভিন্ন পর্যটন আকর্ষণ অন্বেষণ শুরু করা যায়, ততই ভালো। পর্যটক আকর্ষণের অন্যতম প্রধান উপাদান হচ্ছে প্রাকৃতিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, ঐতিহাসিক, প্রত্নতাত্ত্বিক এবং পৌরাণিক নিদর্শনগুলো। পর্যটন উন্নয়নের জন্য যাতায়াতব্যবস্থার উন্নয়ন, আবাসনসুবিধা, স্থানীয় প্রসিদ্ধ খাবারের সুব্যবস্থা, পর্যটন নিরাপত্তা ও চিত্তবিনোদনের জন্য পর্যটনশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব শ্রেণির উপকরণ। সেই সঙ্গে ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থান কিংবা তীর্থস্থানে দর্শনার্থীদের ভ্রমণকে কেন্দ্র করে পর্যটন শিল্পের বিকাশ হচ্ছে। পরিবেশবান্ধব পর্যটনের জন্য যেসব আবাসন তৈরি করা হচ্ছে, সেগুলোকে জ্বালানিদক্ষ করে গড়ে তোলা, সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করা, পানি ব্যবস্থাপনা ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষা, প্রকৃতিকে নির্ভর করে পর্যটন আকর্ষণ তৈরি করা। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করার ক্ষেত্রে পর্যটন খাতের বিনিয়োগের ভূমিকা অনন্য। পরিবেশবান্ধব পর্যটন উন্নয়নে বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে সমন্বিত অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও একটি সমাজকে টেকসই উন্নয়নের দিকে ধাবিত করে। বাংলাদেশে করোনা-পরবর্তী মুহূর্তে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির অন্যতম একটি জায়গায় রয়েছে অভ্যন্তরীণ পর্যটন। এখন গ্রিন ট্যুরিজমভিত্তিক পর্যটক আকর্ষণগুলোতে পর্যটকসংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। পর্যটনে সবুজ বিনিয়োগ মূলত পর্যটনের জন্য যেসব আবাসন তৈরি করা হচ্ছে, সেগুলোকে জ্বালানি দক্ষ করে গড়ে তোলা, সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের জন্য বর্জ্য ও পানি ব্যবস্থাপনা, জীববৈচিত্র্য রক্ষা এমনকি সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষার মধ্য দিয়ে পরিবেশবান্ধব পর্যটন ত্বরান্বিত করা সময়ের যুগোপযোগী কার্যক্রম। সবুজ পর্যটন শুধু রূপকভাবে, পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা পর্যটন উন্নয়নের দিকনির্দেশকগুলো ব্যবহার করা হয় এবং ভ্রমণ প্রক্রিয়ায় সব দিকজুড়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করা আবশ্যক। ইকো ট্যুরিজম উন্নয়নের জন্য সবুজ পর্যটন একটি পূর্বশর্ত যার মূল লক্ষ্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক সম্প্রতি ও পরিবেশগত মান রক্ষা। করোনা-পরবর্তী অর্থনীতিকে চাঙা করার জন্য পৃথিবীর অন্যতম মজবুত অর্থনীতির দেশ অস্ট্রেলিয়া এখন পরিবেশবান্ধব ও পর্যটন প্রসারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। সেই সঙ্গে পর্যটনশিল্পে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধিকল্পে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ের অন্যতম মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে ‘আই লাভ অস্ট্রেলিয়া’ স্পন্সর পেজের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যটক আকর্ষণ করছে। পৃথিবীর অন্যতম স্মার্ট পর্যটননগরী হেলসিংকি (ফিনল্যান্ড) ইউরোপিয়ান পর্যটকদের পাশাপাশি নর্থ আমেরিকান পর্যটকদের আকর্ষণে স্মার্ট ট্যুরিজমের অন্যতম উপাদানগুলোর মধ্যে ইন্টারনেট অব থিংকস; আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেনস ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেনসনির্ভর রোবট সার্ভিস চালু করেছেন। সিঙ্গাপুর চাঙ্গি এয়ারপোর্ট আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেনস বেসড রোবট দিয়ে এয়ারপোর্ট ক্লিনিং ও এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি সিস্টেম উন্নয়নের পাশাপাশি স্মার্ট সেবা প্রদান করছে, যা টেকসই ও পরিবেশবান্ধব পর্যটন উন্নয়নে অন্যতম। বাংলাদেশে প্রায় ১ হাজার ২০০ পর্যটন আকর্ষণ রয়েছে। এর মধ্যে অপরূপ সৌন্দর্যের পর্যটন আকর্ষণ সাগরকন্যা কুয়াকাটা। একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যাওয়ায় পর্যটকদের কাছে এই পর্যটনকেন্দ্র অধিক জনপ্রিয়। এ ছাড়াও সমুদ্রের অসীম জলরাশি, সমুদ্রবক্ষে জেলেদের মাছ ধরার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য, সমুদ্রপাড় ঘেঁষা বন-বনানী, কুয়াকাটাকে পর্যটক-দর্শনার্থীর কাছে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। অন্যদিকে, ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত ঘিরে হোটেল, মোটেল ও রেস্তোরাঁসহ নানাবিধ অবকাঠামো উন্নয়নের কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের রিপোর্টেও পর্যটন খাত থেকে দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাবের ক্ষেত্রে সবগুলো দেশের শীর্ষে রয়েছে স্পেন। এখন বাংলাদেশের পর্যটন মূলত অভ্যন্তরীণ পর্যটনকেন্দ্রিক এবং এই মুহূর্তে পরিবেশবান্ধব পর্যটন উন্নয়নের মধ্যদিয়ে টেকসই উন্নয়ন প্রাধান্য পাচ্ছে। বাংলাদেশের সবুজ ছাদ বান্দরবান, বর্ণাঢ্য নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর আবাসভূমি ও লেকসিটি রাঙামাটি, পাহাড়ি অঞ্চলের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য, হাওর-বাঁওড়, ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, বিভিন্ন ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রভৃতি পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। পর্যটনশিল্পে পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ আকর্ষণে নিম্নলিখিত উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমের ওপর অধিক গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন। পর্যটন প্রচার ও প্রসারে বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড কাজ করছে। তবে এখন স্মার্ট ট্যুরিজম উন্নয়নের জন্য প্রযুক্তিনির্ভর সেবা নিশ্চিতকরণের মধ্য দিয়ে বিশেষ পর্যটন আকর্ষণ স্মার্ট ট্যুরিজম সিটি ও স্মার্ট হোটেল সার্ভিস প্রদানের অন্যতম উপাদানগুলোর মধ্যে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেনস, ইন্টারনেট অব থিংকস, অগমেন্টেড রিয়েলিটি, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, বিগ ডাটা এবং রোবোটিক্স সার্ভিসেস অন্যতম। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে পরিবেশবান্ধব পর্যটন বাস্তবায়নের জন্য পেপারলেস সোসাইটি বিনির্মাণে অন্যতম স্মার্ট ট্যুরিজম।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত