ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নতুন পাঠ্য বইয়ে সম্ভাব্য ভুলত্রুটি

নির্ভুল তথ্যসমৃদ্ধ জ্ঞান সারা জীবনের সম্পদ
নতুন পাঠ্য বইয়ে সম্ভাব্য ভুলত্রুটি

নতুন পাঠ্যপুস্তকে কোনো প্রকার ভুলভ্রান্তি, ত্রুটিবিচ্যুতি কিংবা পাঠ্যপুস্তকের মানোন্নয়নে কোনো প্রকার পরামর্শ থাকলে তা জানানোর আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। পাঠ্যপুস্তক বিতরণ উৎসবের দিন পহেলা জানুয়ারি এক বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। এনসিটিবি চেয়ারম্যান প্রফেসর মো: ফরহাদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্মানিত শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষানুরাগী, শিক্ষার্থী আপনাদের সবাইকে ইংরেজি নতুন বছর এবং আমাদের নতুন শিক্ষাবর্ষ ২০২৪-এর শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আজ পহেলা জানুয়ারি সারা দেশে পাঠ্যপুস্তক উৎসব পালিত হচ্ছে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণির সব শিক্ষার্থী আজ তাদের নতুন শ্রেণির নতুন পাঠ্যপুস্তক হাতে পেয়েছে। এবার প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাক্রমের এবং চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ২০২২ সালের শিক্ষাক্রম অনুসারে পাঠ্যপুস্তক পেয়েছে। ‘সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আমাদের অনুরোধ এসব পাঠ্যপুস্তকে কোনো প্রকার ভুলভ্রান্তি, ত্রুটিবিচ্যুতি পরিলক্ষিত হলে কিংবা এসব পাঠ্যপুস্তকের মানোন্নয়নে কোনো প্রকার পরামর্শ থাকলে ই-মেইলে অথবা এনসিটিবির চেয়ারম্যানের ঠিকানায় জানালে আমরা তা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘আপনাদের সহযোগিতা দেশের লাখ লাখ কোমলমতি শিক্ষার্থীর শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে আমাদের সহযোগিতা করবে’। এনসিটিবি একেকটি বইয়ে লেখক-সম্পাদক হিসেবে বেশ কয়েক জনের নাম পর্যন্ত দেখা যায়। বই প্রকাশের আগে কয়েকজন বিষয়-বিশেষজ্ঞের কাছেও পাণ্ডুলিপি পাঠানো হয় তা দেখার জন্য। এমনকি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষা বোর্ডের বিভিন্ন উচ্চতর কর্তাব্যক্তির কাছে বই পৌঁছে দেওয়া হয় মূল্যায়ন করতে। এরপরও পাঠ্য বইয়ে কেমন করে ভুল থাকে, সেই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। প্রতিবছর নতুন বই প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে ভুলত্রুটি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় শিক্ষক-অভিভাবকদের মধ্যে। যাদের জন্য এসব বই, তাদের মধ্যেও প্রতিক্রিয়া কম হয় না। প্রশ্ন হলো, যে পাঠ্যবই লাখ লাখ শিক্ষার্থীর হাতে গিয়ে পৌঁছায়, সেখানে ভুল থাকে কীভাবে? তাহলে কি শিক্ষার্থীরা ভুল জেনেই বড় হবে? তবে পাঠ্যবইয়ের ভুলের সংখ্যা সীমাহীন নয়। তারপরও যে কোনো ধরনের ভুল তো ভুলই। ভুল সীমিত হলেও প্রাথমিক শিক্ষার গণ্ডি পার হওয়ার আগেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমন ধারণা জন্মায় যে, বইয়ের তথ্য সব সময় প্রামাণ্য নয়। সব শ্রেণির বইয়ে কোনো মৌলিক তথ্য একভাবে লেখা হচ্ছে না। তথ্যগত অসংগতির কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দ্বিধা দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। এই দ্বিধা ভবিষ্যতে তাদের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি করে। একাধিক অভিজ্ঞ লোক একটি বই দেখার পরও সেখানে ভুল থাকে। কেননা তাদের কাজের মধ্যে সমন্বয় থাকে না, দায়িত্বজ্ঞানেরও অভাব পরিলক্ষিত হয়। এসব ভুল এড়ানোর উপায় খুঁজে বের করা দরকার। লেখক ও সম্পাদকের মধ্যে কাজের সমন্বয় ঘটানো গেলে অনাকাঙ্খিত ভুলগুলো সুধরিয়ে নেয়া সম্ভব হবে। সম্পূর্ণ পাণ্ডুলিপি তৈরি হওয়ার পর লেখক-সম্পদকদের একসঙ্গে বসা এবং পুরো বই মনোযোগ সহকারে পড়ে দেখতে হবে। পাঠ্যবইয়ে ভুল থাকা অপরাধও বটে। যে কারণে এ নিয়ে আদালতে পর্যন্ত দাঁড়াতে হয়েছে শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডকে। তবু ভুল করা থেকে তারা বেরিয়ে আসতে পারেনি। অতীতের ঘটনা থেকে জানা যায়, যেসব বিশেষজ্ঞ যে বিষয়ের নন তাকে দিয়ে সেই বিষয়ের বই মূল্যায়ন করা হলে তিনি তা নিখুতভাবে মূল্যায়ন করতে পারবেন এমন আস্থা অর্জন করা সম্ভব নয়। অনেকে হয়তো নিজে মূল্যায়ন না করে অন্য অপেশাদার কাউকে দিয়ে মূল্যায়ন করান। যার ফলে সেই মূল্যায়নও যথোপযুক্ত হয় না। অভিযোগ রয়েছে পাণ্ডুলিপি লেখা ও মূল্যায়ন করার জন্য সে সম্মানি দেয়া হয় তা সন্তোষজনক নয়। সে কারণে এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হালকাভাবে গ্রহণ করা হয়। এমন কিছু ভুল থাকে, যেগুলো ভালো প্রুফ রিডার দিয়ে পড়ালেই সংশোধন করে নেওয়া সম্ভব। এনসিটিবিতে অভিজ্ঞ প্রুফ রিডার কয়জন রয়েছেন তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। এনসিটিবির বইয়ে ভাষা-সম্পাদনার কাজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিক শাখার জন্য এটি আরও বেশি প্রযোজ্য। পাঠ্যবইয়ের ভাষাগত সমস্যা থাকলে শিক্ষার্থীরা পরবর্তী শিক্ষাজীবনে তারা পদে পদে বিড়ম্বনার সম্মুখীন হয়। তবে এনসিটিবি’র কর্তপক্ষকে ধন্যবাদ জানান উচিত কেননা তারা বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে পেরেছে এবং নিজেদের সম্ভাব্য ভুলত্রুটি সম্পর্কে তাদের অবহিত করার অনুরোধ জানিয়েছে। সম্ভাব্য ভুলক্রুটির বিষয়টি স্বীকার করে নেয়ার মধ্য দিয়ে এনসিটিবি কর্তৃপক্ষ উদারতারও পরিচয় দিয়েছে। এটা শুভ লক্ষণ। কেননা একটা নির্ভুল তথ্যসমৃদ্ধ জ্ঞান সারা জীবনের সম্পদ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত