রোজায় স্থিতিশীল বাজার পরিস্থিতি

কৃত্রিম সংকট তৈরি করলে কঠোর ব্যবস্থা

প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

আগামী রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকার বাড়তি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এতে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে পণ্যের মজুত ও সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রেখে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা। এ লক্ষ্যে নিত্যপণ্যের মজুত, আমদানি এবং এলসির প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তথ্য সংগ্রহের পর পণ্যভিত্তিক সরবরাহ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আগামী রোববার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে এসব তথ্যের আলোকে মূল্য ও সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে সভা করবে। এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানিয়েছেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য রমজান মাসের বাড়তি চাহিদার কারণে বাজারে যেন পণ্যের কোন সঙ্কট তৈরি না হয়। একইসাথে মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা। এ লক্ষ্যে এরইমধ্যে আমরা পণ্যের মজুত, আমদানি এবং এলসির তথ্য সংগ্রহ করছি এবং নির্বাচনের পরপরই স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সভা করব।’ তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের আমদানিতে যেন কোনো সমস্যা তৈরি না হয় সেদিকে বাড়তি মনোযোগ দেওয়া হবে। মজুতকৃত পণ্য বাজারে সঠিকভাবে সরবরাহ ও মূল্য যাচাই করতে বিশেষ তদারকি করা হবে। এবার কেউ পণ্যের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরির চেষ্টা করলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সাধারণত প্রতিবছর রমজান মাসকে সামনে রেখে চাল, গম, ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, শুকনা মরিচ, ডিম, খেজুরসহ নিত্যপণ্যের সরবরাহ ও মূল্য তদারকিতে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে। বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

এতে জনজীবনে অনেক দুর্ভোগ নেমে এসেছে। বাজারের ওপর সরকারের মূলত কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বিভিন্ন অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বিপাকে ফেলছেন। একবার যে পণ্যের দাম বাড়ে, তা আর কমে না। সরকারি বিভিন্ন সংস্থা এ ব্যাপারে কাজ করলেও, তা তেমন কার্যকর ভূমিকা না রাখায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আসছে না। নিত্যপণ্যের লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধির ফলে নানা পেশাজীবীর মানুষ, শিক্ষার্থীসহ সাধারণ জনগোষ্ঠীর জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছেন। নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় সব দ্রব্যের মূল্য ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই তুলনায় মানুষের আয় দ্রব্যমূল্যের সমানুপাতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে না। লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির ফলে দেশের বেশিরভাগ মানুষ তাদের চাহিদা মেটাতে অক্ষম হয়ে পড়ছেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বর্তমানে সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের করণীয় হচ্ছে টিসিবির মাধ্যমে পণ্য বিক্রি আরও বাড়ানো। বর্তমানে অসংখ্য শিক্ষিত বেকার যুবক চাকরির জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাদের মধ্য থেকে আগ্রহী এবং যোগ্য ব্যক্তিদের মনোনীত করে টিসিবি বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে সফল ব্যক্তিদের একটি সনদ প্রদান বা নিবন্ধনের মধ্যে নিয়ে আসা যেতে পারে। এতে একদিকে যেমন বেকারত্বের সমস্যা কমে যাবে, অন্যদিকে দ্রব্য সঠিক দামে ক্রেতারা ক্রয় করতে পারবেন। এ ছাড়া পচনশীল খাদ্যপণ্য, যেমন আলু, মরিচ, বেগুন ও পটোলসহ বিভিন্ন সবজি যথাযথ সংরক্ষণের জন্য উপজেলাভিত্তিক হিমাগার স্থাপন করা যেতে পারে। এক তথ্যমতে জানা গেছে, দেশে সংরক্ষণের অভাবে বছরে ৩০ শতাংশ খাদ্যপণ্য নষ্ট হয়। ফলে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাপ কমাতে উপজেলাভিত্তিক হিমাগার অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে। সরকারের পাশাপাশি ক্রেতা ও বিক্রেতাদেরও সচেতন হতে হবে। সংশ্লিষ্ট সবার প্রচেষ্টায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশে পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপণ্য সামগ্রীর দাম কমিয়ে দেয়া হয়। ব্যবসায়ীরা লাভের চেয়ে রোজাদারদের সন্তুষ্টি অর্জনের ওপর অধিক গুরুত্ব দেন। অথচ আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা রমজান মাসের বেচা-বিক্রির মাধ্যমে অর্জিত মুনাফা দিয়ে সারা বছর সংসার পরিচালনা করার সুযোগ খোঁজেন। রোজার আগেই সিন্ডিকেটগুলো সচল হয়ে উঠে। আইন-আদালতের ভয়ে তারা বিচলিত নয়। রমজান মাসে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হলেও তাতে সাময়িক সুফল পাওয়া যায়। তবে স্থায়ী কোনো সুফল মিলে না। আসল কথা হচ্ছে মানুষের বিবেক। বিবেক জাগ্রত না হলে কোনো আইন-কানুন ব্যক্তির চরিত্র পরিবর্তন করতে পারবে না। মানুষের মধ্যে মানবিক গুণাবলি জাগ্রত হলে অনেক সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।