ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্রিক গুজব

সতর্ক থাকার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্রিক গুজব

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিক সমাজকে যে কোনো গুজব ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। বুধবার সকালে গণভবনে সিনিয়র সাংবাদিকদের দুটি প্রতিনিধিদল পৃথকভাবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় তিনি গুজবের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এমনি একটা আহ্বান অত্যন্ত সময়োপযোগী বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। কেন না বুধবারও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকালীন ছুটি নিয়ে একটি বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে। এমনি তথ্য গণমাধ্যমে আসার পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে চার দিনের সাধারণ ছুটির কথা জানিয়ে যে প্রজ্ঞাপন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে, সেটি ভুয়া। তবে ৭ জানুয়ারি ভোটের দিন সারাদেশে সাধারণ ছুটির ঘোষণা বহাল আছে। ভুয়া প্রজ্ঞাপনে বলা হচ্ছে, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে ৫ থেকে ৮ জানুয়ারি সরকারি, বেসরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কওমি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভোটাধিকার প্রয়োগ ও ভোটগ্রহণের সুবিধার্থে ও দেশে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য নির্বাচনকালীন ছুটি ঘোষণা করা হলো। ছুটির অবহেলাকারীদের আর্থিক জরিমানাসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, চার দিনের ছুটির ওই প্রজ্ঞাপনটি ভুয়া। প্রকৃত প্রজ্ঞাপনটি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ভার্চুয়াল জগতে বাড়ছে গুজবের সংখ্যা। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে প্রভাবিত করতেই এসব গুজব ছড়ানো হচ্ছে বলে মনে করছেন ফ্যাক্ট চেকার বা তথ্য যাচাইকারীরা। তারা বলেছেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রাজনৈতিক গুজবগুলো ছড়ানো হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। কোনো একটি বিষয় বা তথ্য হয়তো ভুল। অথচ এটাকে ভিন্নভাবে ছড়ানো হচ্ছে। এটা তাদের (যারা ছড়ায়) জন্য পজিটিভ হলেও সমাজে একটা নেতিবাচক বার্তা পৌঁছে যায়। আবার আরেকটি পক্ষ তথ্যটিকে বিকৃত করে ছড়াচ্ছে। এরকমভাবে তারা একটি উদ্দেশ্য নিয়ে রাজনৈতিক গুজবগুলো ছড়াচ্ছে। আর যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করছে তারা হয়ত বুঝে না বুঝে বা একটা আদর্শ থেকে সেগুলো প্রচার করছে। গুজব ছড়ানোর অনেক কারণ আছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে রাজনৈতিক কারণ। অনেক হাইপ্রোফাইল লোকও আছে, আবার ছোট অনেক আমজনতা গুজবও ছড়ান। কেউ জেনে ছড়ান, কেউ না জেনে ছড়ান। কেউ তার সেলিব্রেটি ইমেজ ব্যবহার করে ছড়িয়ে দেন। এ কারণে তাকে অনুসরণকারীরা নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করেন এবং তারাও ছড়াতে থাকেন। যেহেতু আগামী রোববার জাতীয় নির্বাচন। আর সে কারণে এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই গুজব ছড়ানো হচ্ছে। যাতে করে প্রেক্ষাপটকে প্রভাবিত করা যায়। রাজনৈতিক গুজবগুলোর বিষয়ে বেসরকারি ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান এবং রাজনৈতিক দলগুলোর গুজব প্রতিরোধ টিম কাজ করলেও তা যথেষ্ট নয়। জানা গেছে গুজব প্রতিরোধে বিটিআরসি, আইসিটি মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে রয়েছে একটি গুজব প্রতিরোধ কমিটি। এছাড়া তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং তথ্য অধিদপ্তরের দুটি কমিটি রয়েছে। গুজব প্রতিরোধে দুটি জায়গায় কাজ করতে হবে। প্রথমত, মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো। অর্থাৎ আমরা যেটাকে বলি সোশ্যাল মিডিয়া লিটারেসি। সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো কিছু দেখলেই সেটা বিশ্বাস না করা। দ্বিতীয়ত, যাচাই করার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো হাতের কাছে রাখা। গুজব প্রতিরোধে ব্যক্তি সচেতনতাও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নিজেকে আগে সচেতন হতে হবে। ব্যক্তি যখন সচেতন হবে তখন তার সামনে যখন কোনো তথ্য আসবে তখন তিনি তা যাচাই করবেন। আমরা যদি এটাকে শেয়ার না করে অথবা বিশ্বাস না করে যাচাই করি, সামান্যতম জ্ঞান দিয়ে যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এটি যাচাই করার চেষ্টা করি, তাহলে গুজবের পরিধি আস্তে-আস্তে কমে আসবে। গুজব রোধে সরকারি উদ্যোগে সচেতনতা কর্মসূচি গ্রহণ করা যেতে পারে। বিশেষ করে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে। কেন না ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে বিশাল একটি গোষ্ঠী তরুণ, তাই তাদের সচেতন করার বিষয়ে কাজ করতে হবে। তারপর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকেও সচেতন করা যায়। পাশাপাশি যারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গুজব ছড়াচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে গুজবের বিষয়ে কোনো আইন নেই। অন্যান্য আইনের অংশ হিসেবে গুজব যারা ছড়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। কেউ গুজব ছড়ালে তার বিরুদ্ধে করতে হবে মানহানির মামলা। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো আইন নেই। তবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আইন করাটা জরুরি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত