ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ভোট উৎসবে বিষাদের ছায়া

ট্রেনে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারা কল্পিত নাশকতা
ভোট উৎসবে বিষাদের ছায়া

আবার যাত্রীবাহী ট্রেনে আগুন। আবার পোড়া লাশ। জীবন্ত মানুষ পোড়া লাশ হয়ে আপনজনের কাছে ফিরে যাবে সেটা তো সহ্য করার মতো ঘটনা নয়। ট্রেনে আগুন দেয়ার ঘটনায় যারা মারা গেছেন তাদের আত্মীয়-স্বজনকে শান্ত¡না দেবে কে, কে তাদের পরিবারের সদস্যদের দায়-দায়িত্ব নেবে, কীভাবে তাদের সংসার চলবে, আর কেনই বা তারা আগুনের কাছে পরাজিত হলো- এসব প্রশ্নের উত্তর কে দেবেন। আজ জাতীয় নির্বাচনের দিনে হরতাল পালন করছে বিএনপি-জামায়াত। আর তার ঠিক একদিন আগে রাজধানীর গোপীবাগে ট্রেনে আগুন দেয়ার ঘটনায় অন্তত চারজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে অনেকে। এসব মানুষের দোষ কি ছিল! সেই প্রশ্নের জবাব কে দেবে সেটাও একটা প্রশ্ন। জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারা দেশ নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে রয়েছে। রয়েছে গোয়েন্দা তৎপরতা। তাহলে কেন আবার ২০১৩-১৪ সালের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে। কেন অতীত থেকে শিক্ষা নেয়া হয় না। কেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নাশকতাকারীদের পরাস্ত করতে পারছে না- সেটা একটি প্রশ্ন। দেশের আর কোন কোন রাষ্ট্র যন্ত্রকে মানুষের নিরাপত্তা বিধানের জন্য সম্পৃক্ত করা যেতে পারে সে ব্যাপারেও ভাবতে হবে। এভাবে আগুনে পুড়ে মারা যাওয়ার জন্য দেশটাকে স্বাধীন করেনি এদেশের মানুষ। স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্রারান্টি কে দেবে। কার কাছে মানুষ তার জীবনের নিরাপত্তা পাবে সেটাও জানতে হবে। মানুষের দেয়া আগুনে মানুষ মারা যাবে এটা ধারাবাহিকভাবে ভাবলে মানুষ হয়তো পাগল হয়ে যাবে। কেন না এই চিন্তাশক্তি মানুষের নেই। বাসের পর এখন আগুন দেয়ার জন্য ট্রেনকে বেছে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এসব দুর্বৃত্তও এই দেশের মানুষ। তবে তাদের আইনের আওতায় আনা কি অসম্ভব। সেটা নিয়েও মানুষের ভাবনা রয়েছে। নতুন করে চারজনের প্রাণহানি হয়েছে গতকাল শুক্রবার রাতে ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ ট্রেনে দেয়া আগুনের ঘটনায়। ট্রেনটির ইঞ্জিন রুম ও পাঁচটি বগি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। ট্রেনটি শুক্রবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে যশোরের বেনাপোল স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসছিল। রাত ৯টার দিকে ট্রেনটিতে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। সাতটি ইউনিট প্রায় সোয়া ১ ঘণ্টা চেষ্টার পর রাত ১০টা ২০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পুড়ে যাওয়া পাঁচটি বগিই ছিল এসি কার। বগিগুলোর জানালা বন্ধ থাকায় হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন উদ্ধারকারীরা। এসি বগি হওয়ায় জানালা খুলতে না পেরে দরজার কাছে হুড়োহুড়ি করে যাত্রীরা আহত হয়েছেন এবং ধোঁয়ায় অনেকে অজ্ঞান হয়ে সেখানেই পড়ে ছিলেন। বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি গত নভেম্বর মাস থেকে নতুন রুট পদ্মা সেতু হয়ে চলাচল করছে। এর আগে, ১৯ ডিসেম্বর ভোরে ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে দুর্বৃত্তের দেওয়া আগুনে এক নারী ও তার শিশু সন্তানসহ চার যাত্রী দগ্ধ হয়ে মারা যান। এ ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত তাদের খোঁজ পাওয়া গেলে হয়তো গোপীবাগের ঘটনাটি পরিহার করা যেত। বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন পরিকল্পিতভাবে দেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। সাধারণ মানুষ, শিশু, নারীদের প্রতি এ ধরনের আচরণ অমানবিক যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আগুনের কোনো রাসায়নিক দাহ্য পদার্থ থাকারও আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। কোনো ধরনের নাশকতার ঘটনা ঘটলে তখন দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা একটা মুখস্থ বুলি উচ্চারণ করে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তারা বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তারা আছেন তারা যেসব আলামত সংগ্রহ করবেন। আমরা চেষ্টা করব কী কারণে ঘটনাটি ঘটেছে সেটি জানার জন্য। এমন বক্তব্য দেয়ার মধ্য দিয়েই কি তাহলে দায়িত্ব শেষ হয়ে গেল, তদন্তকারী কর্মকর্তারারা ঘটনা তদন্ত করলেন কি না সেটা মনিটরিং করার প্রয়োজন আছে কি না সেই তাগিদ হয়তো অনেকে অনুভব করেন না। তবে হরতালের আগেই নাশকতার এমন ঘটনার মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে ভয় ছড়ানোই দুর্বৃত্তদের মূল লক্ষ্য ছিল বলে মনে করা হয়। সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত করতেই এই নাশকতা। তবে একটি জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারা পরিকল্পিত নাশকতা। রাজধানীর গোপীবাগ এলাকায় বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের চারটি বগিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় হতাহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে গভীর শোক প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নাশকতা কি না তা খতিয়ে দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে আহতদের চিকিৎসার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেন তিনি। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়ে গতকাল সকাল থেকে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল কমসূচি পালনের ডাক দেয়ার আগে ট্রেনে এ ধরনের আগুন দেয়ার ঘটনা এমন প্রশ্নের জন্ম দেয়। সারা দেশ নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে আনা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধানদের বক্তব্য শুনে মানুষ অনেকটা আশ্বস্ত হয়ে ভোট কেন্দ্রে যাবে এমন ধারণা করা হলেও গোপীবাগের আগুন মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। ভোট উৎসবে গোপীবাগের আগুন বিষাদের ছায়া ফেলেছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত