ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ভোট বর্জনে শূন্য অর্জন বিএনপির

সংসদ থেকে দূরে থাকবে আরো ৫ বছর
ভোট বর্জনে শূন্য অর্জন বিএনপির

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট বর্জন করে বিএনপির অর্জন শূন্য। এবার নির্বাচনে গেলে অর্ধ শতাধিক আসন বিএনপি পেতো বলে আলোচনায় এসেছিল। কিন্তু সেই সুযোগ বিএনপি হারাল। তারেক রহমানকে খুশি করতে গিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজনৈতিকভাবে পরাজয় বরণ করল। আগামী ৫ বছর বিএনপি ক্ষমতার বাইরে থাকবে। ফলে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা নেমে আসবে। নির্বাচন ও ভোটের মাঠে না থাকলে রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা দলীয় সমর্থকদের মধ্যে হারিয়ে যান। আগামী ৫ বছর পর আবার যখন জাতীয় নির্বাচন আসবে তখন হয়তো বিএনপির অনেক নেতা বেঁচে থাকবেন না।

অনেক বয়োবৃদ্ধ ভোটার অন্যের সহায়তা নিয়ে ভোট কেন্দ্রে গিয়েছেন। আবার যারা নতুন ভোটার তারা তাদের পছন্দের মতো প্রার্থীদের ভোট দিয়েছেন। কেন্দ্রে কেন্দ্রে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। ছিল পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা। শীত ও কুয়াশা উপেক্ষা করে ভোটারা কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছান ভোটগ্রহণের অনেক আগেই।

প্রার্থীর কর্মী ও সমর্থকরা মানুষকে ভোট কেন্দ্রে আসতে উৎসাহিত করেন। ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তারা কোনো প্রকার আশঙ্কা ছাড়াই ভোটগ্রহণ করেন। ভোটগ্রহণের আগে বিএনপির নেতারা যেভাবে ভোট বর্জনের হুংকার দিয়েছিলেন তার কোন প্রভাব ছিল না ভোট কেন্দ্রগুলোয়। বিএনপির যেসব নেতা ভোট বর্জনের ডাক দিয়ে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, তারা ভোটের দিন তার জবাব পেয়েছেন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এবারের নির্বাচন একটা ভিন্নমাত্রা পেয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ক্যাশিমেটিক রাজনৈতিক দূরদর্শিতার কারণে।

স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের সঙ্গে লড়াই করেন। প্রার্থী ভোটের লড়াই মানুষকে উৎসাহিত করেছে। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিযোগিতামূলক ভোট বলতে যা বোঝায়, এবারের ভোটে তার কোনো কমছি ছিল না। ভোট বর্জন করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল বিএনপি। এই দলটি এই নির্বাচনে অংশ নেয়নি। বরং অন্যদেরও ভোটে না যাওয়ার জন্য প্রচারণা চালাতে থাকে। তারা এজন্য হরতাল আহ্বান করে। গতকাল হরতালের মধ্যে ভোটগ্রহণ করা হয়। তবে মানুষকে ঘরে রাখা যায়নি। গতকাল হরতালের কোনো বৈশিষ্ট্য রাস্তাঘাটে লক্ষ্য করা যায়নি। তবে পরিবেশটা ছিল ঈদের পরের দিনের মতো। কোলাহলমূক্ত ফুটপাত, রাস্তায় হালকা যানবাহন, ফুটপাতের চায়ের দোকানে মানুষের আড্ডা এবং নির্বাচনি এলাকায় গিয়ে ভোট দেয়ার জন্য রাজধানী ছেড়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যাও কম ছিল না।

শহর থেকে গ্রামের নির্বাচন ছিল অনেকটা বেশি স্বাচ্ছন্দ্যময়। গ্রামের চেহারা পাল্টে গেছে আওয়ামী লীগের বিগত ১৫ বছরে। শহর ও গ্রামের মধ্যে প্রার্থক্য কমে আসায় এখন গ্রাম আর গ্রাম নেই। নগরের সব সুবিধা গ্রামে নিশ্চিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী দিনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের চেহারা আরো পরিবর্তন হবে। বিএনপির ভোটার, সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীদের মধ্যে অনেকে দ্বাদশ নির্বাচনে ভোট দিয়েছে। তবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত- এমন চিহ্নিত নেতাকর্মী হয়তো ভোট দেননি দলীয় পদ-পদবি রক্ষা করার জন্য। এলাকায় কারা বিএনপির সঙ্গে জড়িত তারা এলাকায় পরিচিতি। লোকচক্ষুর ভয়ে তারা হয়তো ভোট কেন্দ্রে যায়নি। তবে এই নির্বাচনে ভোট বর্জনকারীরা চিহ্নিত হয়ে গেল। বিএনপি কাকে খুশি করার জন্য এই নির্বাচন বর্জন করেছে, সেটা পরিষ্কার। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যত দিন না নিশ্চিত হবেন তিনি আগামী দিনে প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না, ততদিন পর্যন্ত বিএনপি কোনো নির্রাচনে অংশ নেবে না। তারেক রহমান লন্ডনে বসে বাংলাদেশের রাজনীতির হাল ধরবেন- এমন রাজনৈতিক প্রজ্ঞা তার মধ্যে নেই। বিএনপির মতো একটি রাজনৈতিক দলের এত বড় একটি পদে থেকে তিনি বিদেশের মাটিতে আয়েসী জীবনযাপন করবেন, আর দেশে বিএনপির নেতাকমীরা তাকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে ধ্বংসাত্মক রাজনীতির জন্য মামলা ও জেলজুলুম ভোগ করবেন, তা কী করে হয়। তারেক রহমান এমন কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন, যিনি বিএনপির মতো একটি দলের নেতৃত্ব দেবেন। তবে যাই হোক এই নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের পরিচয় দিয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত