উচ্চশিক্ষা এবং প্রসঙ্গ কথা

প্রদীপ সাহা

প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

সাধারণ অর্থে জ্ঞান বা দক্ষতা অর্জনই ‘শিক্ষা’। ব্যাপক অর্থে, পদ্ধতিগতভাবে জ্ঞান লাভের প্রক্রিয়াকেই শিক্ষা বলা হয়। তবে শিক্ষা হলো সম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনের অব্যাহত অনুশীলন।

বাংলা ‘শিক্ষা’ শব্দটি এসেছে ‘শাস’ ধাতু থেকে, যার অর্থ শাসন করা বা ‘উপদেশ দান করা’। অন্যদিকে, শিক্ষার ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘এডুকেশন’ শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ ‘এডুকেয়ার’ বা ‘এডুকাতুম’ থেকে, যার অর্থ বের করে আনা অর্থাৎ ভেতরের সম্ভাবনাকে বাইরে বের করে নিয়ে আসা বা ‘বিকশিত করা’। প্রাগৈতিহাসিককালে শিক্ষা শুরু হয়েছিল বয়স্ক ব্যক্তিদের দ্বারা যুবকদের সমাজের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতার প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে। প্রাক-শিক্ষিত সমাজ মূলত মৌখিকভাবে এবং অনুকরণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। গল্প বলার মাধ্যমে জ্ঞান, মূল্যবোধ এবং দক্ষতা এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের কাছে স্থানান্তরিত হয়েছে। কথায় বলে, শিক্ষার শেষ নেই। শিক্ষা একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া, যা মানুষ জন্মের পর থেকে মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত শেখে। ক্যারিয়ারের একটা প্রান্তে এসে অনেকেই মুখোমুখি হন একটি প্রশ্নের। আর তা হলো, তার শিক্ষাটা কী পর্যন্ত হবে- ডাবল মাস্টার্স, পিএইচডি, নাকি এমবিএ? একটা সময় ছিল যখন শুধু আন্ডার গ্র্যাজুয়েট করলেই ভালো বেতনের এবং নির্ভরশীল একটা চাকরি পাওয়া যেত।

সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এখন বদলে যাচ্ছে সবকিছু। আর এর সঙ্গে বেড়েছে প্রতিযোগিতাও। আজকাল অন্তত একটা মাস্টার্স ডিগ্রি ছাড়া ভালো চাকরি পাওয়া বা আশা করা প্রায় অসম্ভব। এর সঙ্গে আপনি যদি বহিরাগত বা বিদেশি হন, তাহলে তো কথাই নেই! পিএইচডি, একাধিক মাস্টার্স, এমনকি পিএইচডির সঙ্গে এমবিএ করেছে, এমন লোকও একেবারে কম নয়। তা ছাড়া সবক্ষেত্রে বিষয়গুলো এক নয়। যেমন ডাক্তারি পড়লে খুব একটা উচ্চশিক্ষার সরাসরি প্রয়োজন নেই। আবার ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বা কম্পিউটার সায়েন্স পড়লে শুধু একটা মাস্টার্স থাকলেই ভালো চাকরির সুযোগ রয়েছে। তবে যাদের পরবর্তীতে শিক্ষকতা বা গবেষণায় যাওয়ার ইচ্ছে আছে, তাদের জন্য শুধু মাস্টার্স না করে সরাসরি পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়া ভালো। অবশ্য যদি ইচ্ছে না থাকে, তাহলে অন্তত এমবিএ করাটাই হয়তো বুদ্ধিমানের কাজ হবে, বিশেষ করে আজকের অবস্থায়। সভ্য সমাজ রাষ্ট্র পরিচালনা এবং বিভিন্ন পেশায় নেতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বহুকাল ধরেই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নির্ভর করে আসছে। ক্রম উন্নয়নশীল কারিগরি শিক্ষা এবং তার অনুষঙ্গী হিসেবে সমাজ কাঠামোর জটিলতা যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, তার ফলে উচ্চশিক্ষার পরিধি ও পরিসর সময়ের সঙ্গে সম্প্রসারিত হচ্ছে এবং এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একাদশ বা ডিগ্রি পাসকোর্সের শিক্ষা কার্যক্রম ঠিকমতো চালাতেই হিমশিম খাচ্ছে, সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালাতে কর্তৃপক্ষকে কতটা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তা সহজেই অনুমান করা যায়। কোনো কোনো শিক্ষকের দায়িত্ব পালনে উদাসীনতার বিষয়টি বার বার আলোচনায় আসে। এসব কারণে উচ্চশিক্ষাও এখন অনেক ক্ষেত্রে হয়ে পড়েছে গাইডনির্ভর। উচ্চশিক্ষার জন্য কলেজে ভর্তি হয়ে যারা গাইডের ওপর নির্ভর করেন, তারা কী মানের দক্ষতা নিয়ে কর্মজগতে প্রবেশ করবেন তা এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আমাদের দেশের যেসব শিক্ষিত তরুণ আগামী দিনে কর্মজগতে প্রবেশ করবেন, তারা যাতে নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মজীবন সংশ্লিষ্ট ন্যূনতম দক্ষতা অর্জন করতে পারেন, সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।

অনেকেই আছেন যারা বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের স্বপ্ন দেখেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পড়াশোনার জন্য বিদেশে যাওয়ার ঘটনা ঘটে সাধারণত উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর। অবশ্য কেবল আন্ডার গ্র্যাজুয়েট পর্যায়েই নয়, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট বা পিএইচডি করতেও বিদেশে যান অনেকে। শিক্ষার ক্ষেত্র কখনো নির্দিষ্ট গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকে না। কেউ যদি প্রসারিত দৃষ্টিভঙ্গি ও বিচিত্র দক্ষতায় নিজেকে সমৃদ্ধ করতে চান, তবে দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। তবে সঠিক পরিকল্পনার অভাবে এবং বাস্তব জ্ঞান না থাকার কারণে এ স্বপ্ন মাঝেমধ্যে দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়। বাংলাদেশ থেকে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী বৃত্তি নিয়ে বিদেশে পড়তে যেতে যান। কেউ স্নাতকোত্তর অথবা কেউ পিএইচডি করতে যান। অনেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য যান। তবে শুধু বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিলেই হবে না, শিক্ষার মানের বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।