চিরতরে বন্ধ হোক অগ্নি সন্ত্রাস

নাশকতা রোধে নতুন সরকারকে নিতে হবে কঠোর পদক্ষেপ

প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

আওয়ামী লীগ আবার সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ পঞ্চমবারের মতো সরকার গঠন করবে। বিগত ১৫ বছরের শাসন আমলে আওয়ামী লীগ দেশের উন্নয়নে অনেক অবদান রেখেছে। দেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। তবে বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে কঠিন সংকট হচ্ছে নাশকতা ও অগ্নি সন্ত্রাস। মানুষ অপঘাতে মারা যাবে এটা কোনো অবস্থায় মেনে নেয়া যায় না। বিগত দিনে যারা আগুন সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা না গেলে আগামী পাঁচ বছর দেশ পরিচালনায় আওয়ামী লীগ সরকার শান্তিতে থাকতে পারবে না।

ঘর থেকে বের হয়ে মানুষ নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারবে কি না সেই অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে গত কয়েক বছর কেটেছে। আবার যদি সেই আগুন সন্ত্রাস ফিরে আসে তবে সেটা হবে মানুষের জন্য সবচেয়ে চরম দুর্ভাগ্যের বিষয়। নতুন সরকার জনগণের কল্যাণে নতুন মেয়াদে কি পদক্ষেপ নিবে সেটা আলোচ্য বিষয়। তবে নতুন সরকার যাতে স্বস্তিতে দেশ পরিচালনা করতে না পারে সে জন্য আবার জ্বালাও পোড়াওয়ের মতো নাশকতামূলক পন্থা অবলম্বন করবে বিএনপি-জামায়াত। বিএনপি-জামায়াতের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় তারা এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়।

তবে বিষয়টা লক্ষ্য করলে অনুধাবন করা যায় যে, বিএনপি- জামায়াত অবরোধ-হরতালের ডাক দেয়ার আগের দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে বাস, ট্রাক ও ট্রেনে আগুন দেয়া হয়। মানুষ যাতে ঘরের বাইরে না যায় সেজন্য অগ্নি ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চায় বিএনপি-জামায়াত এমন অভিযোগ আওয়ামী লীগ অব্যাহতভাবে করে আসছে। তবে সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পরই প্রথমে অগ্নি সন্ত্রাসকে চিরতরে বন্ধ করতে সবোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করবে। নির্বাচন এলেই ‘বিএনপি-জামায়াতের’ নির্বাচনবিমুখ চরিত্রটি প্রকাশ পায়। সেই সঙ্গে শুরু হয় আগুন সন্ত্রাস। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামায়াত হরতাল অবরোধ ডেকে- যে নাশকতা করেছে সে সম্পর্কে দেশবাসী অবহিত। বাংলাদেশ যখন নির্বাচনের পথে হাঁটছে, ঠিক সেই সময় আবারও আগুন-সন্ত্রাস ও খুনের রাজনীতির ঘৃণ্য চিত্র দেখায় বিএনপি। সবশেষ গত শুক্রবার ঢাকার গোপীবাগে যশোর থেকে আসা বেনাপোল এক্সপ্রেস নাশকতার আগুনে চারটি তাজা প্রাণ ঝরে যায়।

বেশ কয়েকজন দ্বগ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নির্বাচন প্রতিহত করতে ২০টির বেশি ভোটকেন্দ্র আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজবাড়ীর একটি স্কুলে পাহারায় থাকা গ্রাম পুলিশের একজন সদস্যকেও হত্যা করা হয়েছে। রামুতে রাখাইন মন্দিরে মধ্যরাতে আগুন দিয়েছে। ডেমরা ও কুমিল্লায় দুটি বাসে আগুন দিয়েছে। ভোলায় বেসরকারি হাসপাতালে হামলা ও ভাঙচুর করেছে। ২৮ অক্টোবরের পর থেকে ভোটের আগের দিন পর্যন্ত ‘বিএনপি-জামায়াত’ ৬৫৮টির বেশি যাত্রীবাহী বাসে আগুন ও যানবাহন ভাঙচুর করেছে। রেলে নাশকতার ঘটনা ঘটিয়েছে ২১টি। ১৭টি ট্রেনে আগুন দিয়েছে। এসব ঘটনায় ১০ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া এসব ঘটনায় ২০ জন বাসচালক ও হেলপার দগ্ধ হয়েছেন। ২৮ অক্টোবরের পর থেকে এ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে কমপক্ষে চার শতাধিক বোমা বা ককটেল হামলা হয়েছে।

এই সময় ১৫০ জন পুলিশ সদস্য আহত ও একজন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছে। হামলা হয়েছে অর্ধশতাধিক সাংবাদিকের ওপর। আওয়ামী লীগের ছয়টি কার্যালয়ে হামলা করা হয়েছে। খুলনায় আদালতের এজলাসকক্ষ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নাশকতার ঘটনা ঘটাতে গিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা হাতেনাতে ধরাও পড়েছে। এসব ঘটনার পিছনে কারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা না হলে এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে। সে কারণে নাশকতা রোধে নতুন সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। কেননা মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব।