ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

উন্নয়নের অনন্য দিশারি অদম্য জননেত্রী শেখ হাসিনা

রেজাউল করিম খোকন
উন্নয়নের অনন্য দিশারি অদম্য জননেত্রী শেখ হাসিনা

এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণার সময় কবির ভাষায় তিনি বলেছিলেন- ‘মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়/আড়ালে তার সূর্য হাসে;/হারা শশীর হারা হাসি/অন্ধকারেই ফিরে আসে।’

বাংলাদেশে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস রুখে আবারো বিপুল সমর্থন নিয়ে সরকার গঠনের পথে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। গত বুধবার নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নিয়েছেন। গতকাল নতুন মন্ত্রীরাও শপথ নিয়েছেন । টানা চারবার আর সব মিলিয়ে পাঁচবার প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসলেন। মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি ইন্দিরা গান্ধী, শ্রীলঙ্কার সিরিমাভো বন্দরনায়ক, ব্রিটেনের মার্গারেট থ্যাচার বা ইজরায়েলের গোল্ডা মেয়ারকেও ছাপিয়ে গেলেন। প্রশ্নে-সংশয়ে ‘জর্জরিত’ নির্বাচনটি হেলায় উতরে দিয়েছেন বাংলাদেশের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যাকে একে একে সাধুবাদ জানিয়ে গিয়েছেন ভারত, চিন, রাশিয়া, ভুটানসহ নানা দেশের কূটনৈতিক প্রধানরা, কিছুক্ষণ পর পরই অভিনন্দনের ফোন এসেছে রাষ্ট্রপ্রধানদের। বর্তমান বিশ্বে নারী নেত্রী হিসেবে একটানা দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতাসীন থাকার ক্ষেত্রে আগের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছেন তিনি। নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভের পর দেশি-বিদেশি সাংবাদিক, পর্যবেক্ষকদের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি অত্যন্ত উৎফুল্ল মেজাজে। তার কথাবার্তা, ববি ল্যাঙুয়েজ, উপস্থিতিতে ছিল উচ্ছ্বাস-আনন্দ।

পরনে আসমানি ঢাকাই, মাথায় আলগা ঘোমটা, বছর ৭৬-এর প্রধানমন্ত্রী যখন তরতর করে সিঁড়ি ভেঙে নেমে এলেন সবুজ ঘাসে ঢাকা লনে, তাল রাখতে পার্শ্বচরেরা দুদ্দাড়ে দৌড়াচ্ছেন। হাসিনা অনায়াসে মিশে গেলেন অপেক্ষারত ১১টি দেশের সাংবাদিক-পর্যবেক্ষকদের ভিড়ে। প্রত্যেকের চোখে চোখ রেখে জোড় হাতে সৌজন্য বিনিময় করলেন। বিলক্ষণ জানতেন যে, এই ভিড়ে মিশে রয়েছেন আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচনি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকরা, ছুতো খুঁজে নির্বাচনকে অসিদ্ধ বলতে যারা রোববার ছুঁড়ে ফেলেছেন বাংলাদেশ। বিশ্বে নারী নেত্রী হিসেবে একটানা দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতাসীন থাকার ক্ষেত্রে আগের সব রেকর্ড ভাঙা মহিলা প্রধানমন্ত্রী হয়ে কেমন লাগছে- উড়ে এল প্রথম প্রশ্ন। কপাল কুঁচকে এক লহমা ভাবলেন, তারপর বললেন- মানুষ আমাকে দেশ শাসনের দায়িত্ব দিয়েছেন। প্রশাসকের আবার পুরুষ-মহিলা কী! জানালেন, নিজেকে তিনি মহিলা প্রধানমন্ত্রী নন, শুধু প্রধানমন্ত্রী বলেই মনে করেন। তার কথায়, তবে আমি মহিলা তো বটেই। মায়ের জাত। এই বয়সে এসে দেশবাসীকে সন্তানবৎই মনে করি এবং বিনয়। একটু খাদে নামল গলা। হাসিনা বলে চললেন, ইন্দিরা গান্ধী, বন্দরনায়ক, থ্যাচাররা বড় বড় মানুষ। আমি নগণ্য, নেহাতই সাধারণ। অত লেখাপড়ার সুযোগ আমার হয়নি। তবে ছোট বয়সে বাবা-মা, তিন ভাই, দুই ভাবিকে হারিয়েছি। খুনিদের ভয়ে পালিয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছি দেশ থেকে দেশে। গরিব মানুষের দুঃখটুকু আমি বুঝি। তিনি বলেছেন, ১৯৮৬ থেকে এ পর্যন্ত আটবার ভোটে লড়েছি। কখনো রক্ত ঝরিয়ে, কখনো বিনা রক্তপাতে বারে বারে বাংলাদেশে নির্বাচনের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আমরা গণতন্ত্রের দাবিতে লড়াই করে গিয়েছি। এবার দেখি আমাদের নিয়ে কত কথা! কোনো বার আমাদের ভোট নিয়ে অন্যদের এমন আগ্রহ দেখিনি। প্রধানমন্ত্রী জানান, সেই জন্য তারা দুনিয়ার কাছে দরজা খুলে দিয়েছিলেন। যারা প্রশ্ন তুলছে, তারা এসে ভোট প্রক্রিয়া দেখে যাক। উচ্চারণ করলেন, এ বার ভোটে দেশের মানুষ আমাকে নয়, গণতন্ত্রকে জিতিয়েছেন। সেনাশাসকের ঘরে জন্মানো যে দলটি (বিএনপি) ভোট বয়কট করে দেশবাসীকে গণতন্ত্র শেখাতে গিয়েছিল, মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছেন।

প্রাথমিক বিনয়টুকু বাদ দিয়ে চূড়ান্ত আত্মবিশ্বাসী হাসিনা এদিন ছিলেন টি-টোয়েন্টির মেজাজে। মুখোমুখি বসা আমেরিকার পর্যবেক্ষক তাকে প্রশ্ন করার অগেই হাসিনা পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন, ভোট কেমন দেখলেন ঘুরেফিরে? ওয়াশিংটন থেকে আসা সেই পর্যবেক্ষক জবাবে বললেন, প্রাথমিকভাবে তাদের মনে হয়েছে মানুষের মধ্যে ভোট দেওয়ার আগ্রহ ছিল। এটা ভালো। এরপর তার দ্বিতীয় প্রশ্ন, আমেরিকার ভোট আর বাংলাদেশের ভোটের মধ্যে কোনটা বেশি ভালো? পর্যবেক্ষক বললেন, বাংলাদেশের ভোট নিয়ে অনেক বেশি প্রশ্ন উঠেছিল...। এবার মাইক তুলে নিয়ে মুখে হাসি ঝুলিয়ে একটানা তিনি শুনিয়ে গেলেন, আপনারা বড় দেশ, শক্তি বেশি বলে কেউ বলে না। আমরা ছোট দেশ তো। কিন্তু মনে রাখবেন, আমাদেরও সার্বভৌমত্ব আছে। যে যা খুশি বলে যাবেন, আমাদের ভালো লাগে না সেটি। তারপরেই জানিয়ে দিলেন, দিল্লিতে জি-২০ শীর্ষ বৈঠকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার সঙ্গে কথা বলে কেমন উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন। তাকে সুকন্যা ডেকে সেলফিও তুলেছিলেন। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় ফেরায় তার নজরে এবার ২০৪১ সাল। এখন মধ্য আয়ের দেশের মর্যাদা পাওয়া বাংলাদেশকে ২০৪১-এর মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা। এর মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবেন তিনি। সমৃদ্ধ বাংলাদেশে থাকবে দৃঢ় অর্থনীতি, থাকবে না কর্মসংস্থানের সংকট। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দৃঢ়ভাবে বলেছেন, ৭ জানুয়ারি জনগণের অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। এবারের নির্বাচন দেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তিনি আরো বলেন, বিএনপি এবার নির্বাচন হতেই দেবে না। তাদের লক্ষ্য ছিল নির্বাচন হতে দেবে না। তাদের কিছু মুরুব্বি আছে তারাও সেই পরামর্শ দেয়। এমন অবস্থা সৃষ্টি করবে যাতে নির্বাচন না হয় কিন্তু বাংলাদেশের মানুষকে তারা চিনে নাই। ’৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির পিতা বলেছিলেন, কেউ দাবায় রাখতে পারবা না। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে এ দেশের মানুষ এটাই প্রমাণ করেছে। ’৭৫-এর পর থেকে যত নির্বাচন আমরা দেখেছি, তার মধ্যে সবচেয়ে সুশৃঙ্খল এবং অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু, জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে ৭ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোট প- করার জন্য একটি সন্ত্রাসী রাজনৈতিক দলের দু’মাসব্যাপী ধ্বংসাত্মক ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এ জন্য নির্বাচন কমিশনের ধন্যবাদ প্রাপ্য। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা নতুন ইতিহাসও গড়লেন, পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন তিনি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। ২৯৯টি আসনের মধ্যে এখন পর্যন্ত ২৯৮টি আসনের বেসরকারি ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২২২টিতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি একটি করে আসনে জয় পেয়েছে। ক্ষমতাসীনদের পর সবচেয়ে বেশি জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা, ৬২টি আসনে। অবশ্য এর দুটি বাদে ৬০ বিজয়ী আওয়ামী লীগেরই রাজনীতিক। বর্তমান সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি জয় পেয়েছে ১১টি আসনে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪১ দশমিক আট শতাংশ ভোট পড়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সকল বিদেশি পর্যবেক্ষক একমত যে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনের দিন গুরুতর হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ যে কোনো নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনা প্রত্যক্ষ করা যায়। তবে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, অতীতের যে কোনো সাধারণ নির্বাচনের চেয়ে এবারের নির্বাচনে হতাহতের ঘটনা তুলনামূলকভাবে অনেক কম ছিল। নির্বাচন যে কোনো দেশেরই গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির অংশ। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সুনির্দিষ্ট সময়ের ভেতর জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। একটি মহলের দুরভিসন্ধি ছিল দেশে সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি করা। ফলে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে তাদের সুবিধা হয়। কোনো অশুভ শক্তি যাতে বেআইনিভাবে ক্ষমতা দখল না করতে পারে সেজন্য সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া অতীব জরুরি। নির্বাচিত সংসদ সদস্যরাই হবেন সমগ্র দেশবাসীর নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দলই সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করবে। সংসদে বিরোধী দলও তাদের ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করবে। এটিই বিধি। জাতির প্রত্যাশা, নবনির্বাচিত দলটি সরকার গঠনের পর নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি রক্ষায় শতভাগ সক্রিয় ও আন্তরিক থাকবে। দেশের উন্নয়ন এবং দেশবাসীর স্বস্তি ও শান্তি নিশ্চিতে সংবিধানসম্মতভাবে যথোচিত ভূমিকা পালন করবে।শেখ হাসিনার সরকার সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদকে কঠোর হস্তে দমন করেছে। উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের আধুনিক অবকাঠামোকে সমৃদ্ধ করে তুলছে। এই সরকারের হাত ধরেই বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে পারমাণবিক বিশ্বে, স্থান করে নিয়েছে মহাকাশে। বেড়েছে দেশের সমুদ্রসীমা ও ছিট মহলের সীমারেখা। উন্নয়নের মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে শেখ হাসিনার সরকার পশ্চিমাদের ভ্রুকূটিকে অগ্রাহ্য করে, বিশ্ব ব্যাংকের চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেন বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে। মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। বিশ্বমানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে বাস্তুহারা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দানের মাধ্যমে। তৈরি হয়েছে কর্ণফুলী নদীতে বঙ্গবন্ধু টানেল। সড়ক ও যোগাযোগব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরির্তন এসেছে। ঢাকা শহরে ছুটছে স্বপ্নের মেট্রোরেল। স্বনির্ভরতার পথে বাংলাদেশের এই স্বপ্নীল অগ্রযাত্রার কান্ডারী হিসেবে নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশের বিজয়মুকুটে একের পর এক অর্জনের রত্ন নিজ হাতে গ্রথিত করে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। ধারাবাহিকভাবে এই সময়কালে দেশ ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে জাতির পিতা মহানায়ক শেখ মুজিবুর রহমানের উপযুক্ত উত্তরসূরী হিসেবে রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, বিচক্ষণতা, দুঃসাহস ও আত্মবিশ্বাসী ব্যক্তিত্বের এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাতৃভূমি বাংলাদেশকে স্বনির্ভরতার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসে দ্বাদশ সংসদীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে বরাবরের মতোই মার্কিন কূটনৈতিক চাপকে এবার একরকম ব্যক্তিগত দক্ষতায় পরাভূত করেছেন তিনি। দেশের সাধারণ মানুষ, নিজ সংগঠন এবং রাষ্ট্রের সংবিধানের ওপর অটল আস্থা রেখে নব্য কিসিঞ্জার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস কর্তৃক নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার সার্বিক অপচেষ্টাকে একরকম ছুঁড়ে ফেলেছেন তিনি। বিশ্বকে স্তম্ভিত করে তিনি তোয়াক্কা করেননি মার্কিনী নিষেধাজ্ঞার ঘোষণাকেও। একটানা চতুর্থবার নির্বাচনে জয় লাভ করেছে তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। ফলশ্রুতিতে ভবিষ্যতে পৃথিবীর বহু রাষ্ট্রই এই নীতি অনুসরণ করবে- যা একরকম সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে। হয়তো এখানেই রচিত হয়েছে মার্কিন আগ্রাসনের পদস্খলনের পটভূমিকা। ৫৩ বছর আগে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের ভৌগলিক স্বাধীনতা আদায় করেছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানের কাছ থেকে। আজ ৫৩ বছর পর তারই সুযোগ্য দুহিতা জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতে বঙ্গোপসাগরের বৃহত্তম মহীসোপানের উপকূলে অস্তমিত হল বিশ্বমোড়ল আমেরিকার আগ্রাসী মোড়লপনার। শেখ হাসিনার হাত ধরে অর্জিত কূটনৈতিক স্বাধীনতার এই নতুন সৌরভ অচিরেই হয়তো আমাদের মতো পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তকেও সুরভিত করবে। দেড় দশকে অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার করে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখানো শেখ হাসিনা টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকারপ্রধান হওয়ার অনন্য নজির গড়তে চলেছেন। অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে আওয়ামী লীগ; ভোটের প্রচারে দলের প্রধান শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখার গুরুত্বের কথাই বলে আসছিলেন দলটির নেতারা। এবারের ভোটে ২৯৯টি আসনের মধ্যে ২২২টিতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির শক্ত অবস্থান আরো পোক্ত হল। শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বকে ‘হার্ড পাওয়ার’ হিসেবে বর্ণনা করেছে টাইম ম্যাগাজিন, আর বিবিসির ভাষায় সেটা ‘ওয়ান উইমেন শো’।

এবারের নির্বাচনের ইশতেহারেও আওয়ামী লীগ গুরুত্ব দিয়েছে অর্থনৈতিক অগ্রগতির ওপর; ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট সোনার বাংলা গড়ার কথা বলছে দলটি। শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছেন, অগ্রগতির ধারাবাহিকতায় ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চমধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট ‘সোনার বাংলা’য় পরিণত করবেন তিনি। গত ৪ জানুয়ারি নির্বাচনি ভাষণে তিনি বলেন, চলার পথে যদি কোনো ভুল-ভ্রান্তি করে থাকি, তাহলে আপনারা ক্ষমা সুন্দর চোখে দেখবেন- এটিই আমার আবেদন। আবার সরকার গঠন করতে পারলে, ভুলগুলো শোধরাবার সুযোগ পাব। আপনাদের মূল্যবান ভোটে নির্বাচিত হয়ে আরেকটিবার সরকার গঠন করতে পারলে আমাদের গৃহীত কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়ন করে আপনাদের জীবনমান আরো উন্নত করার সুযোগ পাব। সংসদ ও রাজনীতিতে একচ্ছত্র আধিপত্য নিশ্চিতের পর এখন শেখ হাসিনার সামনে দুর্নীতি রোধ এবং মানবাধিকার নিশ্চিতের বিষয়টিই চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন রাজনীতির বিশ্লেষকরা। শেখ হাসিনা বরাবরই বলছেন, তিনি চ্যালেঞ্জ নিতে ভয় পান না। বঙ্গবন্ধুকন্যার ভাষায়, তার রাজনীতি নিজের জন্য নয়, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নেই তার এই পথচলা।

এখন হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি এবং সহিংসতার পথ পরিহার করতে হবে বিরোধী দলগুলোকে। মনে রাখতে হবে, অস্থিরতার ফলে দেশের অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্থবিরতা দেখা দিলে সরকারকে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে। কাজেই সব বিরোধী দলকে আস্থায় এনে দেশ পরিচালনা করাই নতুন সরকারের জন্য সুবুদ্ধির পরিচায়ক হবে। বস্তুত জাতীয় নির্বাচনে বড় বিজয় দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক। বিশেষত রিজার্ভ সংকট ও মূল্যস্ফীতি অর্থনীতির জন্য বড় সংকট সৃষ্টি করেছে। দ্রব্যমূল্য কমিয়ে জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে দেওয়া নতুন সরকারের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব বলে মনে করি আমরা। সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে দেশে সর্বব্যাপী দুর্নীতি দমন করা হবে নতুন সরকারের আরেকটি বড় দায়িত্ব। বস্তুত দুর্নীতি দেশের অর্থনীতির বর্তমান নাজুক অবস্থার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। দুর্নীতির লাগাম টানা না গেলে নতুন সরকারকে পদে পদে সংকটে পড়তে হবে। নতুন সরকার দেশ ও জনগণের স্বার্থে অবিলম্বে এসব ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটিই প্রত্যাশাই করি আমরা। অভিনন্দন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, উন্নয়নের অনন্য দিশারি অদম্য এক জননেত্রী।

অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার ও কলাম লেখক।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত