ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শুরু হলো নতুন মন্ত্রিসভার কার্যক্রম

বেফাস ও বিতর্কিত বক্তব্য ডেকে আনতে পারে বিপত্তি
শুরু হলো নতুন মন্ত্রিসভার কার্যক্রম

৩৬ জনের নতুন মন্ত্রীসভা শপথগ্রহণ করেছে। তাদের মধ্যে ২০ জনই নতুন। নতুন সরকারের মন্ত্রীসভার ২৫ মন্ত্রী ও ১১ প্রতিমন্ত্রী। আপাতত দৃষ্টিতে নতুন মন্ত্রীসভা অঞ্চল বিন্যাসের ক্ষেত্রে সুষম হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রবীণ ও নবীনদের সমন্বয়ে গড়ে তোলার কারণে নতুন মাত্রা পেয়েছে। যাদের নতুন মন্ত্রী করা হয়েছে, তারা মন্ত্রণালয় পরিচালনার জন্য দিন দিন দক্ষ হয়ে উঠবেন, সেই প্রত্যাশা দেশের মানুষের। এবারের মন্ত্রীসভায় যারা বাদ পড়েছেন। তারা তাদের দায়িত্ব পালনকালের কর্মকাণ্ড নিয়ে এখন পর্যালোচনা করবেন। তারা এমন সব বিতর্কিত মন্তব্য কিংবা বক্তব্য রেখেছেন, যার কারণে দেশের মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। মন্ত্রীসভার একজন সদস্যকে সব সময় হিসাব- নিকাশ করে কথা বলতে হয়। এমন কোনো বক্তব্য দেয়া ঠিক হবে না, যাতে করে তা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। মন্ত্রীরা ধীরস্থির ও সময়োপযোগী বক্তব্য দেবেন, সেটা সবারই কামনা। তাদের কোনো একটা বেফাস বক্তব্যের কারণে ক্ষমতাসীন সরকার সম্পর্কে মানুষ নানা ধরনের সমালোচনা করার সুযোগ পায়। অতীতে কোনো কোনো মন্ত্রী এমন বক্তব্য দিয়েছেন, যা নিয়ে দেশের গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সরব হয়ে উঠেছে। সরকারবিরোধী মহল তাদের ওই বক্তব্য পুঁজি করে সমালোচনার ঝড় তুলে। কোনো মন্ত্রী যখন কোনো বেফাস বক্তব্য দেন, তখন তার মনে রাখা দরকার তার বক্তব্যের ওপর মানুষের নজরদারি রয়েছে। তার বক্তব্য অনেক সময় রেকর্ডকৃত হয়ে যায়। তিনি পরবর্তীতে অস্বীকার করলেও গণমাধ্যমে তার রেকর্ড থেকে যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তা শেয়ার করে ছড়িয়ে দেয়। অতীতে দেখা গেছে কোনো মন্ত্রী কোনো বেফাস বক্তব্য দিলে তার মন্ত্রণালয় থেকে একটা বিবৃতি দেয়া হয়। এই ধরনের বিবৃতি অতি সাধারণ ব্যাপার। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ওই সব বিবৃবিতে বলা হয়, গণমাধ্যমে মন্ত্রীর বক্তব্য সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়নি। আংশিক কিংবা বিকৃত করে বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। মন্ত্রীর এমন বক্তব্য নিয়ে বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই। যখন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিবাদলিপি দেয়া হয়, তখন প্রকারান্তরে গণমাধ্যমকে দোষারোপ করা হয়। বাধ্য হয়ে গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর বক্তব্য বার বার উপস্থাপন করে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে। ফলে যারা মন্ত্রীর বক্তব্য শুনেননি, কিংবা সে সম্পর্কে জানতেন না তারাও নতুন করে জেনে যান। ফলে লুকোচুরি করতে গিয়ে বিষয়টি আরো সম্প্রসারিত হয়। যারা নতুন মন্ত্রী হলেন, তারা নিসন্দেহে ওই মন্ত্রণালয়ের অভিভাবক ও সরকারের প্রতিনিধি। তাদের বক্তব্য মানে মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য। তাদের বক্তব্য হচ্ছে সরকারের বক্তব্য, দলের বক্তব্য। সে কারণে কথার ছলে কথা বলার রীতিনীতি পরিহার করতে হবে। যারা এবার প্রথম মন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পেলেন, তাদের আরো বেশি পরিশ্রম করতে হবে। অন্যের কাছ থেকে বেশি বেশি পরামর্শ দিতে হবে। অতীতের শিক্ষা নিয়ে তাদের আগামীর পথে এগিয়ে যেতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের ওপর যে আস্থা রেখেছেন, তা যেন অক্ষুণ্ণ থাকে সেই প্রচেষ্টা তাদের করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর মতো নিজেকে জনগণের সেবক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। অথচ তার মন্ত্রিসভার সদস্য হয়ে কেউ যদি ‘প্রভুর’ মতো আচরণ করেন, তাহলে দেশের মানুষ ভালো চোখে দেখবে না। অনেক কাঠখড় পোড়ানোর মধ্যদিয়ে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হয়ে গেল। ভোট গ্রহণের আগের দিনও কোনো কোনো মহল অপেক্ষায় ছিল বাইরের কোনো বৃহৎ শক্তির হস্তক্ষেপে হয়তো বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন বন্ধ হয়ে যাবে। অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণতায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন মোটাদাগে সমালোচনার ঊর্ধ্বে ছিল। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে বিগত স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচন কতটা সহিংস হয়েছে, কত মানুষ হতাহত হয়েছে, সেই পরিসংখ্যান অনেকেরই হয়তো জানা। সে তুলনায় বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকালে মাত্র একজন মানুষ নিহত হয়েছে। অনেক কষ্ট করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বাদশ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সফল হয়েছেন। তবে তার মন্ত্রিসভার সভার কোনো সদস্যের বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে যদি এই অর্জন নস্যাৎ হয়ে যায়, তাহলে দেশের মানুষ বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নিবেদিত নেতাকর্মীরা অনেক বেশি কষ্ট পাবেন। দেশের মধ্যে যারা আওয়ামী লীগ বিরোধী মনোভাব পোষণ করেন, তারা কিন্তু সব সময়ই সরকারের সমালোচক। ছোটখাটো কোনো একটু ত্রুটি পেলে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় তুলে। সে কারণে সব সময় সচেতন ও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। আত্মনিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিএনপি রাজপথের বিরোধী একটি রাজনৈতিক দল। তারা শুধু নির্বাচন বর্জনই করেনি তারা নির্বাচন প্রতিহত করারও আপ্রাণ চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। তারপরও তাদের অপতৎপরতা বন্ধ হবেনা। নতুন মন্ত্রীসভা দেশের জনগণের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করবে। একটি স্থিতিশীল সামাজিকব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে আগামী ৫ বছরে বাংলাদেশ আরো উন্নত ও আরো সমৃদ্ধ ও নৈরাজ্যমুক্ত হবে- সেই কামনা রইল।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত