ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সুস্থ রাজনীতিতে ফিরে আসুক বিএনপি

দল গোছাতে সময় পাবে আগামী পাঁচ বছর
সুস্থ রাজনীতিতে ফিরে আসুক বিএনপি

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের মধ্যদিয়ে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলো। এ নিয়ে টানা চতুর্থ দফায় আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করল। জাতীয় সংসদে বিরোধীদলের ভূমিকায় থাকবে জাতীয় পার্টি। তাদের আসন সংখ্যা ১১ হলেও তারাও সংসদীয় রাজনীতিতে বলিষ্ট ভূমিকা পালন করতে পারেন। দ্বাদশ নির্বাচনের আগের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আর পরবর্তী পরিস্থিতির মধ্যে অনেক পার্থক্য। জাতীয় নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর থেকেই আশঙ্কা ছিল নির্বাচনটি হয়তো আয়োজন করা সম্ভব হবে না। বিএনপির নির্বাচন প্রতিহত করার ধ্বংসাত্মক রাজনীতি মোকাবিলা করতে গিয়ে পুলিশ প্রশাসন অনেক ক্ষেত্রে সফল হয়নি। সেই সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনৈতিক চাপ আওয়ামী লীগ সরকারকে সামাল দিতে হয়েছে। মার্কিন ভিসানীতির সঙ্গে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার ভয়ও ছিল প্রবল। এখনো যে এই ধরনের আশঙ্কা নেই সেটাও বলা যাবে না। বর্তমান পরিস্থিতে আওয়ামী লীগ সরকার স্থিতিশীল পর্যায়ে চলে এসেছে। বিএনপির জন্যও এখন রাজনীতি করার পথ সুগম হয়েছে। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ শেষে বাসায় ফিরে গেছেন। আড়াই মাস পর বিএনপির নয়াপল্টনে অফিসের তালা ভেঙে নেতাকর্মীরা অফিসে বসা শুরু করেছেন। গত বৃহস্পতিবার এই দুটি ঘটনা বিএনপির জন্য অত্যন্ত তাৎপযপূর্ণ। একই সঙ্গে ৯টি মামলায় বিএনপির মহাসচিব মিজা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জামিন পেলেন। রাজনৈতিক অঙ্গনে এটাও একটা ইতিবাচক দিক। গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের দিন পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের পর সমাবেশ প- হয়। এরপর থেকে বিএনপির নয়াপল্টনের অফিসের গেটে তালা ঝোলানো দেখা গেছে। পরের দিন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিট বিএনপি কার্যালয়ের তিন দিকে ‘ডু নট ক্রস: ক্রাইম সিন’ ফিতা টানিয়ে দিয়ে আলামত সংগ্রহ করে। এরপর থেকে সেখানে সবসময় অবস্থানে ছিল পুলিশ। তবে বিএনপির কার্যালয় তালা মারার প্রসঙ্গে গত ১৪ নভেম্বর ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘আমরা বিএনপির কার্যালয়ে তালা মেরে রাখিনি। তাদের কার্যালয়ে তারা যে কোনো সময় আসতে পারবে। এতে আমাদের কোনো বাধা নেই। নিরাপত্তার জন্য পুলিশ মোতায়েন থাকবে।’ তবে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে স্লোগান দিলেই পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। এদিকে পাঁচ মাস ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণের পর গত বৃহস্পতিবার বাসায় ফিরেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গত বছরের ৯ আগস্ট থেকে বিএনপি নেত্রী রাজধানী ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তক্রমে শারীরিক কিছু জরুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দীর্ঘ ১৫৬ দিন চিকিৎসা গ্রহণ শেষে বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় হাসপাতাল থেকে বাসার উদ্দেশে রওনা দেন খালেদা জিয়া। তাকে বহন করা গাড়িটি গুলশানের বাড়িতে যাওয়ার পথে মোটরসাইকেলে করে নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়াকে বাসায় নিয়ে যান। এ সময় নেতাকর্মীরা সরকার ও নির্বাচনবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন। লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত বিএনপির চেয়ারপারসনের রক্তনালিতে অস্ত্রোপচার করা হয় গত ২৭ অক্টোবর। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনে তার রক্তনালিতে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। দুর্নীতির দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দি হন। দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দি ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সাজা ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছিল। তখন থেকে ছয় মাস পর পর তার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপিকে সরকার পতনের রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কেননা দীর্ঘ ১৫ বছর বিএনপি যে কাজটি করতে পারেনি, আগামী ৫ বছর সেটি করতে পারবে এমন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না। বাংলাদেশে মধ্যবর্তী নির্বাচনের সুযোগও নেই। তাহলে আগামী ৫ বছর বিএনপিকে ধৈর্যের সঙ্গে অপেক্ষো করতে হবে। তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। এই দীর্ঘ সময় বিএনপি দল গোছানোর কাজটি করার সুযোগ পাবে। যেহেতু সংসদে বিএনপির কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই তাই তাকে রাজপথে থেকেই সরকারের সমালোচনা করে জনগণের দাবি আদায় করতে হবে। নতুন সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার মতো শক্তি-সামর্থ্য বিএনপির মোটেও নেই। বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপে সরকার কাহিল হয়ে যাবে সেটাও কল্পনাতীত। সে কারণে আগামী ৫ বছর দল গোছানোর মধ্য দিয়ে তারা পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাবে এমন প্রতাশা করছে শান্তিপ্রিয় মানুষ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত