ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ান

শুরু করতে হবে বস্ত্র বিতরণ
শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ান

দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া শৈত্যপ্রবাহের বিস্তার দিন দিন বাড়ছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে শীতের তীব্রতাও। এই কঠিন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে। শৈত্যপ্রবাহের সঙ্গে ঘন কুয়াশার কারণে দেখা মিলছে না সূর্যের উজ্জ্বল কিরণের। সঙ্গে কনকনে ঠান্ডা বাতাসে বেড়েছে শীতের অনুভূতিও। বর্তমানে দেশের ১৩টি জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে চলে এসেছে। আবহাওয়া অফিস জানাচ্ছে উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, যার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়ছে। এই কুয়াশা কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকছে। কুয়াশার কারণে প্লেন চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন ও সড়ক যোগাযোগে সাময়িকভাবে বিঘ্ন ঘটছে। আগামীকাল দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে, তবে পরের দিন ফের কমার আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। ঘন কুয়াশায় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কমে এবং উত্তরের ঠান্ডা বাতাসের কারণে সারা দেশেই এখন তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগবালাই। চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। আবহাওয়ার এমন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে সংকটে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ। শীতের কারণে কোনো কাজে হাত দিচ্ছে না অনেকেই। আবার অনেকে শীতের মধ্যে কাজে যেতে অনীহা প্রকাশ করছে। জীবন রক্ষায় শীর্তাত মানুষ অধিকাংশ সময় ঘরে লেপ-কম্বল জড়িয়ে অবস্থান করছে। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হচ্ছে না। রাস্তাঘাট, হাট-বাজারের লোক সমাগম কমে গেছে। নির্বাচন শেষ হওয়ায় এখন আর হোটেল-রেস্টুরেন্টে ভিড় কমে গেছে। রাস্তাঘাটে যানবাহনের সংখ্যাও কম। যানবাহন রাস্তায় বের হলেও যাত্রী পাচ্ছে না। সববেশি দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন বয়োবৃদ্ধ ও শিশুরা। নানা রকম রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছে তারা। দরিদ্র জনগোষ্ঠী শীত নিবারণ করার জন্য খড়কুটো জ্বালিয়ে তাপ পোহাতে গিয়ে দ্বগ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। হাসপাতালে দ্বগ্ধ রোগী আসছে। প্রকৃতির এমন আচরণের সঙ্গে লড়াই করে থাকতে গিয়ে দরিদ্র মানুষ কাহিল হয়ে পড়ছে। শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় হিড়িক পড়েছে গরম কাপড় কেনাকাটায়। কম্বল, সোয়েটার, জ্যাকেট, ব্লেজার, কোর্ট, শার্ট-প্যান্টসহ বিভিন্ন ধরনের শীতের পোশাকের বেচা-কেনা বাড়ছে। নতুন কাপড়ের পাশাপাশি বিদেশ থেকে আসা এ পুরোনো গরম পোশাকের বেচা-বিক্রি জমে উঠেছে। বিদেশি গরম কাপড় না আসলে নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের দুর্ভোগ আরো বেড়ে যেত। তবে যাদের শীতের কাপড় কেনার সামর্থ্য নেই তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে হবে। এই শীতের মধ্যে যার যে রকম প্রয়োজন তার সেই রকম প্রয়োজনে এগিয়ে আসতে হবে সামাজিক দায়বধ্যতা থেকে। প্রতি বছর শীতের সময় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন শীতার্ত মানুষের জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে সাহায্য কামনা করে। এ বছর এসব সংগঠন এখনো মাঠে নামেনি। আশা থাকবে এসব সামাজিক সংগঠন আর বিলম্ব না করে শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াবে। মানুষের কাছ থেকে অর্থকড়ি সংগ্রহ করবে। গরম কাপড় যোগাড় করবে এবং শীত থাকতে তা শীতার্ত মানুষের কাছে পৌঁছে দেবে। মানুষ মানুষের জন্য এই মতবাদে তারা উজ্জীবিত হবে এমন কামনা সবার। শীতের এই দাপট যে কেবল বাংলাদেশে তা নয়। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে গতকাল তাপমাত্রা ৩ দশমকি ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে।। এমন পরিস্থিতিতে দেশটির আবহাওয়া বিভাগ দিল্লি ও আশপাশের এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করেছে। এর আগের রাতে দিল্লির তাপমাত্রা নামে ৩ দশমিক ৯ ডিগ্রিতে। মূলত ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিসহ আশপাশের এলাকায় শৈত্যপ্রবাহ বইছে। দিল্লি ও ভারতের অন্যান্য অংশে আবহাওয়া সংক্রান্ত পরিস্থিতির কারণে ১৮টি দিল্লিগামী ট্রেন বিলম্বিত হয়েছে। কুয়াশার মধ্যে দৃশ্যমানতা কম থাকায় দিল্লি বিমানবন্দরে বেশ কয়েকটি ফ্লাইট অপারেশন বিলম্বিত হয়। মুম্বাই-গুয়াহাটিগামী ইন্ডিগো এয়ারের একটি প্লেন ঢাকায় জরুরি অবতরণ করেছে। মূলত ঘন কুয়াশার কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত