ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাজার নিয়ন্ত্রণে ভোক্তাবিষয়ক মন্ত্রণালয় জরুরি

এস এম নাজের হোসাইন
বাজার নিয়ন্ত্রণে ভোক্তাবিষয়ক মন্ত্রণালয় জরুরি

দেশের ১৮ কোটি ভোক্তার জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় না থাকায় সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নীতিনির্ধারণী মহল, প্রশাসন, গণমাধ্যমসহ সব মহলের কাছে ভোক্তাদের মনোবেদনা, ভোগান্তি জানানো সম্ভব হচ্ছে না। তারা ভোক্তাদের কথা শোনার চেয়ে ব্যবসায়ীদের কথা শুনতে আগ্রহী। কারণ ভোক্তারা অসংগঠিত, তাদের সংগঠন শক্তিশালী নয়। আর ব্যবসায়ীদের কথা শুনলে তার বিপরীতে প্রতিদান দেবার সক্ষমতাও তাদের আছে।

পঞ্চমবারের মতো ও টানা চতুর্থ মেয়াদে দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা। দায়িত্ব গ্রহণের প্রাক্কালে দেশের আপামর জনসাধারণের প্রত্যাশা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে বর্তমান মন্ত্রিসভা ও জাতীয় সংসদ সদস্যরা সরকারের রূপকল্প ২০৪১ অনুযায়ী বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্য আয়ের দেশে উপনীত করা, দুর্নীতিমুক্ত সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও নাগরিকের অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রশাসনিক কাঠামোতে সংস্কার আনতে সক্ষম হবেন। দেশের মানুষ নাগরিক হিসাবে যোগ্য সম্মান পাবে, একই সঙ্গে নাগরিকের মৌলিক অধিকার বিশেষ করে ভোক্তা অধিকার (সুশিক্ষা, সুচিকিৎসা, নিরাপদ খাদ্য, জ্বালানি নিরাপত্তা, বস্ত্র, নিরাপদ আবাসন, নিরাপদ সড়ক যাতায়াত, আইসিটি, ব্যাংকিং ও আর্থিক অধিকারগুলো) সুরক্ষিত হবে। নাগরিককের মুক্তচিন্তা ও মতামতের প্রতিফলন ঘটানোর অধিকারগুলো রাষ্ট্র নিশ্চিত করবেন।

জাতির পিতার কন্যা হিসেবে এবং মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব প্রদানের কারণে দেশের মানুষ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, শেখ হাসিনার হাত ধরেই দেশের শাসনতান্ত্রিক, সুশাসন প্রতিষ্ঠাসহ অনেকগুলো যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধিত হবে।

সেকারণে জনপ্রত্যাশা হলো সাধারণ জনগণের নিত্যদিনকার সমস্যা নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য মূল্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ, মজুতদারী, ফড়িয়া ও কালোবাজারি নিয়ন্ত্রণে সরকার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বাজারে অসাধু সংঘবদ্ধ ব্যবসায়ী বা সিন্ডিকেট রোধে প্রতিযোগিতা আইনের যথাযথ প্রয়োগ, নিত্যপণ্য মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়-ক্ষমতার মধ্যে রাখার প্রতিশ্রুতির বাস্তব প্রতিফলনে প্রাইস কমিশন গঠন ও বাস্তবায়ন, পণ্যমূল্যের সিন্ডিকেট, বাণিজ্যে অনৈতিকতা রোধ ও সব সেবা-সার্ভিসে অব্যবস্থা নিরসনে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ০৯ পরিবর্তন-পরিমার্জন করা, নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যের আপদকালীন বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে টিসিবিকে কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা; শহর-নগরে বসবাসকারী নাগরিকদের জীবনমান রক্ষায় বিদ্যমান ‘বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯১’ পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জন করে জনস্বার্থে তা কার্যকর করা, সহজ শর্তে দীর্ঘমেয়াদি কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ দিয়ে নগরে বসবাসরত নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের জন্য ফ্ল্যাট বরাদ্দের ব্যবস্থা করা, সীমিত আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য সহজ শর্তে গৃহনির্মাণ ঋণ, খাদ্যে ভেজাল, ফরমালিন ও বিভিন্ন কেমিক্যাল মিশ্রণ রোধে নিরাপদ খাদ্য আইন ১৩ বাস্তবায়ন জোরদার করা, সিন্ডিকেটভিত্তিক বর্তমান গণপরিবহন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো, রেলপথকে আরো আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ করে রেলপথের সেবা সাধারণ জনগণের আওতায় নিয়ে আসা, সরকারি নাগরিক সেবাপ্রদানকারী সংস্থাগুলোর নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষে ভোক্তাদের সত্যিকারের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ভোক্তা প্রতিনিধি নির্বাচনে ক্যাব প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত, বাজার তদারকিকে স্থানীয় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের অত্যাবশ্যকীয় কাজের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য নির্দেশনা প্রদান, সরকারিভাবে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি ভোক্তা অধিকার সংগঠনগুলোকেও পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান, আর্থিক ও ঋণ কেলেঙ্কারি রোধ, ব্যাংক ও আর্থিক খাতে গ্রাহকদের অধিকার সংরক্ষণ, ভোগান্তি নিরসনে ব্যাংক, আর্থিক খাতে সংস্কার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা, গ্রাহকদের অধিকার সুরক্ষা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় গ্রাহকদের সত্যিকারের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা, সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি ও কোচিং বাণিজ্য, প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ, নিয়ন্ত্রণহীন টেলিকম ও আইটি খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ভোক্তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, ওষুধ ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণহীন ভেজাল, মূল্য আদায়ের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, সরকারি হাসপাতালগুলোতে সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত ও গ্রাহক ভোগান্তি নিরসন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করা, কৃষি খাতে সত্যিকারের কৃষক পর্যায়ে ভর্তুকি পৌঁছানো নিশ্চিত, প্রণোদনা বাড়ানো ও নিশ্চিত করা, কৃষকের পণ্যের বিক্রয়মূল্য ও খোলা বাজারে খুচরা বিক্রয়মূল্যের একটি সীমা নির্ধারণ, খুচরা বাজারে মূল্য বৃদ্ধিকারীদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা প্রদান করবেন।

কারণ মন্ত্রিসভায় বা সরকারের বিভিন্ন অংশে যারা দায়িত্বপালন করছেন, তারা সরাসরি ভোক্তা না হলেও এ সমস্যাগুলো থেকে তাদের আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীসহ সাধারণও রেহাই পাচ্ছে না।

সে কারণে দেশের মানুষ প্রতিনিয়তই এ ধরনের সমস্যাগুলোতে জর্জরিত এবং জীবন ও জীবিকা নির্বাহ কঠিন হয়ে পড়েছে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-সহ ব্যবসা-বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট অনেকেই ভোক্তা স্বার্থ সুরক্ষার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি বিভাগ কিংবা একটি পৃথক মন্ত্রণালয় গঠনের প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার দাবি রাখে। কারণ ঐতিহাসিকভাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রধান ভূমিকা ও কাজ হলো ব্যবসা সম্প্রসারণ ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সুরক্ষা দেয়া।

দেশে শিল্প বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানির যারা চালিকা শক্তি, তাদের প্রতি অধিকতর সহানুভূতিশীল থাকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য স্বাভাবিক বিষয়। দেশে ন্যায্য ব্যবসার চর্চা থাকলে হয়তো ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম অংশীজন ভোক্তাদের বিষয়টি বিবেচনার সুযোগ সৃষ্টি হতো। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষে এই দায়িত্ব পালন করে সব পরিস্থিতিতে ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণ করা সম্ভব। নয়।

দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যে ক্রমামত সিন্ডিকেট, অতিমুনাফায় মরিয়া ও অসুস্থ প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশের কারণে বড় ব্যবসায়ীরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে কীভাবে ঠকানো যায়, সেটাই মুখ্য বিষয় হয়ে যায়, সেখানে একটা স্বার্থের বড় সংঘাত থাকে। প্রশাসনিক বিন্যাসের বেলায় আমরা যদি উপমহাদেশের ইতিহাসের দিকে তাকাই, তাহলেও একটি মৌলিক ভিন্নতা লক্ষ্য করি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রণালয়ের কাঠামোগত উত্তরাধিকার বহন করে চলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভারতকে নয়, পাকিস্তানকেই বেশি অনুসরণ করেছে।

স্বাধীনতার পরে পাকিস্তানি আমলাতান্ত্রিক কাঠামোকে পুরোপুরি গ্রহণ করে যাবতীয় প্রশাসনিক বিন্যাস ও কাঠামো পুনর্গঠন করা একটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। পাকিস্তানি কাঠামোর বৃত্ত ভেঙে বেরিয়ে আসার প্রয়োজনীয়তা অনুভবে নিয়েছি। কিন্তু বাস্তবে সেটি আমরা অনেক ক্ষেত্রে আজও করে দেখাতে পারিনি। ক্যাব ভোক্তাসংক্রান্ত পৃথক মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি তুলে আমাদের অতীতের ইতিহাসের দিকে তাকানোর একটি সুযোগ করে দিয়েছে। আমরা অনেকেই জানি ভারতীয় নীতিনির্ধারকরা রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা লগ্নে ১৯৪৭ সালেই ভোক্তাবিষয়ক পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রণালয় গঠন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

ভারত শুরুতেই অন্তত কাঠামোগত দিক থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিল। কেউ বলতে পারেন যে আমলাতান্ত্রিক কাঠামো বদল করাটাই খুব কার্যকরবিষয় হয়তো হবে না। পেঁয়াজ, চাল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের কৃত্রিম সংকটের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে গুটিকয়েক অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারসাজি নিয়ে প্রতিনিয়তই আলোচনার বিষয় হলেও তাদের কারসাজি থেকে ভোক্তাদের সহসা মুক্তি মিলছে না। দেশের ১৮ কোটি মানুষই ক্রেতা-ভোক্তা হলেও তাদের স্বার্থ ও অধিকার সুরক্ষায় কোনো পৃথক মন্ত্রণালয় নেই। ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি ক্ষুদ্র অধিদপ্তরের মাধ্যমে কিছু উদ্যোগ নেয়া হলেও এটিও প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য।

আর ভোক্তাদের অধিকার ও সুবিধা প্রদানের জন্য সবকিছুর ভার দেয়া হয়েছে ব্যবসায়ীদের উপর। ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভোক্তা স্বার্থের বিষয়টি দেখভাল করার কারণে ভোক্তা স্বার্থ বার বার উপেক্ষিত ও ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে।

বিষয়গুলো অনেকটাই বিড়ালকে মাছ পাহারা দেয়ার মতো। ফলে ব্যবসায়ীরা মুক্ত বাজার অর্থনীতির নামে একবার পেঁয়াজ, একবার চাল, একবার মসলা, একবার সয়াবিন এভাবে পুরো বছরজুড়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে জনগণের পকেট কাটছে। অন্যদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মূল কাজ হলো- দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ।

সেকারণে দেশের ভোক্তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যের বার্ষিক চাহিদা নিরূপণ, উৎপাদন, যোগান, বাজারজাতকরণে প্রতিবন্ধকতা নিয়ে অনুসন্ধান, ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণে চিন্তা করার সময় ও সুযোগ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের থাকে এদিকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হলেও জেলা পর্যায়ে একজন কর্মকর্তা দিয়ে কোনো প্রকার লজিস্টিক সুবিধা ছাড়াই তারা কাজ করছে। আর নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ খোদ রাজধানী ঢাকা শহরে তার কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া কঠিন। যদিও সরকার ভোক্তা সংরক্ষণ আইন, নিরাপদ খাদ্য আইনসহ নানা উদ্যোগ নিলেও তার সুফল জনগণ পাচ্ছে না। সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত ও ভোক্তাদের অধিকার সুনিশ্চিত করতে হলে আইন প্রয়োগে সরকারি প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে পৃথক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা ছাড়া কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।

দেশের ১৮ কোটি ভোক্তার জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় না থাকায় সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নীতিনির্ধারণী মহল, প্রশাসন, গণমাধ্যমসহ সব মহলের কাছে ভোক্তাদের মনোবেদনা, ভোগান্তি জানানো সম্ভব হচ্ছে না। তারা ভোক্তাদের কথা শোনার চেয়ে ব্যবসায়ীদের কথা শুনতে আগ্রহী। কারণ ভোক্তারা অসংগঠিত, তাদের সংগঠন শক্তিশালী নয়।

আর ব্যবসায়ীদের কথা শুনলে তার বিপরীতে প্রতিদান দেবার সক্ষমতাও তাদের আছে। ফলশ্রুতিতে ভোক্তাদের হয়রানি, ভোগান্তির চেয়ে ব্যবসায়ীদের সমস্যাগুলো সরকার যেরকম গুরুত্ব দিচ্ছে, তেমনি গণমাধ্যমগুলোও বেশি করে প্রচারিত হচ্ছে। যার অন্যতম দৃষ্টান্ত পেঁয়াজের মূল্যের সেঞ্চুরি গণমাধ্যম ও প্রশাসন ব্যবসায়ী তোষণনীতির কারণে ২০ টাকার পেঁয়াজ অনেক সময় আড়াইশ টাকায় কিনতে বাধ্য হয়েছে। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে আলু-পেঁয়াজ মজুত করে দাম বাড়িয়ে জনগণের পকেট কাটলেও সরকার জনগণের কষ্ট লাঘবে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হয়নি। দেশের ‘ভোক্তারা’ সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক জনগোষ্ঠী হলেও সরকার প্রতিনিয়ত নানা বিষয়ে নীতিনির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তাদের অংশগ্রহণ একেবারেই নগণ্য। ভোক্তারা সুসংগঠিত নয় ও তাদের সংগঠন শক্তিশালী না থাকায় অনেক ক্ষেত্রেই সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় ভোক্তাদের ওপর কী প্রভাব ফেলবে, সে বিবেচনায় উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে বার বার। এ অবস্থায় ভোক্তাস্বার্থ বিবেচনা, সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় ভোক্তাদের স্বার্থের বিষয়টি তুলে ধরা, ভোক্তাস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কার্যক্রমে সমন্বয় সাধন, চাহিদা, উৎপাদন, আমদানির সঠিক পরিসংখ্যান সংরক্ষণ; সর্বোপরি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল থেকে দরিদ্র, স্বপ্ন আয় ও নিম্নমধ্যবিত্তের ভোক্তারা যাতে বঞ্চিত না হয়, সে লক্ষ্যে জীবনযাত্রার ব্যয় সহনীয় পর্যায়ে রাখার উদ্দেশ্যে ১৫ থেকে ২০টি অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য ও পণ্য চিহ্নিত করে সেসব খাদ্য পণ্যের সরবরাহ পরিস্থিতি সন্তোষজনক পর্যায়ে এবং মূল্য স্থিতিশীল রাখার দায়িত্ব অর্পণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি পৃথক ডিভিশন অথবা একটি পৃথক স্বতন্ত্র একটি ‘ভোক্তাবিষয়ক মন্ত্রণালয়’ (Consumers Affairs Miryfeno) দাবিতে পরিণত হয়েছে। তাই পৃথক মন্ত্রণালয় থাকলে অবশ্যই সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নীতি নির্ধারক মহলে ভোক্তাস্বার্থের দিকগুলো বেশি মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে আসবে। কারণ একজন পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী, সচিব ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অন্তত সারাক্ষণ ভোক্তাদের সমস্যাগুলো সমাধানে তৎপর থাকেবে।

২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের অন্যতম নির্বাচনি অঙ্গীকার ছিল নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় ও স্থিতিশীল রাখা। করোনা পরবর্তী সময় থেকেই ক্যাবসহ বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন এ বিষয়ে সরকারের করণীয় নিয়ে দাবি জানিয়ে আসলেও এ বিষয়ে সরকারের দৃশ্যমান কোনো রাজনৈতিক উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। অধিকন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তার উপর অর্পিত দায়িত্বানুসারে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সুরক্ষায় নিয়োজিত ছিলেন। আর ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সুরক্ষা করতে গিয়ে অনেক সময় সাধারণ ভোক্তাদের স্বার্থ তাদের কাছে গৌণ হয়ে যায়। যার খেসারত দিতে হচ্ছে ১৮ কোটি ভোক্তাকে। তাই দেশের সাধারণ ভোক্তাদের অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণে পৃথকভাবে ভোক্তা অধিকার মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা। হলে দেশীয় ভোক্তারা অবশ্যই উপকৃত হবেন। ভোক্তাদের মনোবেদনা ও ভোগান্তির বিষয়গুলো দ্রুত সরকারের নীতি-নির্ধারকদের নজরে আসা ও সমাধান অনেক বেশি সহজতর হবে। আর বর্তমান সরকার যেহেতু নতুন করে দায়িত্ব নিচ্ছেন, সেকারণে ১৮ কোটি মানুষের স্বার্থ বিবেচনা করে বিষয়টি অধিক গুরুত্ব পাবে, সে প্রত্যাশা করি। তাই এ মুহূর্তে ভোক্তাদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় বা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অবিলম্বে একটি নতুন বিভাগ খুলে জনপ্রত্যাশা পূরণে প্রধানমন্ত্রী এগিয়ে আসবেন- এটাই আশা করা যায়।

লেখক : ভাইস প্রেসিডেন্ট কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত