ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পণ্যমূল্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা

রোজায় অসৎ ব্যবসায়ীদের জন্য হোক সতর্ক বার্তা
পণ্যমূল্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা

আগামী মাসের ৮ তারিখ রাতে পবিত্র শবে মেরাজ পালিত হবে। তার পর শবে বরাত এবং তার পরই আসবে পবিত্র রমজান মাস। রমজান মাসে মানুষ রোজা পালনের পাশাপাশি বেশি বেশি এবাদত-বন্দেগি করার পরিকল্পনা করে থাকেন। এই মাসটিতে স্বাভাবিকভাবে মানুষের প্রাত্যাহিক খরচ বেড়ে যায়। আর এই সুযোগটি গ্রহণ করে আমাদের দেশের কতিপয় অসাধু ব্যাবসায়ী। তারা রোজার মাস শুরু হওয়ার আগেই সিন্ডিকেট করে পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দেন। কৃত্রিম সরবরাহ সংকট তৈরি করে আর্থিকভাবে লাভবান হন। বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশে রমজান মাসে পণ্যের দাম কমে আর আমাদের দেশে দাম বাড়ে। তবে কেন বাড়ে সেই প্রশ্নের জবাব কেবল ব্যবসায়ীরাই ভালো দিতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রমজান মাসে পণ্য মূল্য বৃদ্ধির পেছনে ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফাকে চিহ্নিত করে দ্রব্যমূল্য যাতে মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে থাকে, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নবগঠিত মন্ত্রিসভার সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা অসৎ ব্যাবসায়দের জন্য একটি সতর্কবার্তা বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি বলেছেন, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ এবং জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখাই হচ্ছে নতুন মেয়াদে তার সরকারের মূল কাজ। নির্বাচনি ইশতেহারে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে মানুষের ক্রয়সীমা কমে যাচ্ছে। ফলে মানুষ সুষম খাবার খাদ্য সংগ্রহ করতে পারছে না। সুষম খাবারের অভাবে নতুন প্রজন্ম একটি পুষ্টিহীন জাতিতে পরিণত হচ্ছে। পুষ্টিকর খাদ্যের সংস্থান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পণ্যের মূল্য বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী আরেকট কথা বলেছেন, আমাদের প্রধান কাজ হলো চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা। টুঙ্গিপাড়ায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে তার নিজ নির্বাচনি এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে নির্বাচন-পরবর্তী শুভেচ্ছা ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি টুঙ্গিপাড়ায় মন্ত্রিসভার অনানুষ্ঠানিক বেঠকেও রমজান মাসের আগেই দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতি রোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে মন্ত্রীদের নির্দেশনা দেন। গতকাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মন্ত্রীরা অফিস শুরু করার প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে এবং টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করার পর প্রথম কোনো বৈঠকে এই ধরনের নির্দেশনামূলক বক্তব্য দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাজারে খাদ্যদ্রব্যের কোনো ঘাটতি নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, মনে হচ্ছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল জনগণের ভোগান্তি বাড়াতে ইচ্ছাকৃতভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি করে। তবে এটি রোধ করার জন্য যথাযথভাবে তদারকি বাড়াতে হবে। দেশে উৎপাদন বাড়ানোর ওপরও জোর দিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, ইয়েমেনে হুতিদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের হামলার কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে আরেকটি আঘাত আসতে পারে। কেন না, করোনার অভিঘাত ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্বব্যাপী খাদ্য সরবরাহব্যবস্থা ভেঙে পড়ে এবং জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পায়। ইয়েমেনে হুতিদের অবস্থানে হামলার কারণেও তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তেলের দাম বৃদ্ধি পেলে সব পণ্যের মূল্যও বৃদ্ধি পায়। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিষয়টিও উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের ওপর অনেক দেশের কুদৃষ্টি রয়েছে। বিএনপির অগ্নিসংযোগের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আগামী দিনে নতুন সরকারকে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে চলতে হবে।

তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখতে সকল প্রকার ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করতে সবার কাছে দোয়া কামনা করেন। এদিকে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু গতকাল প্রথম দিন সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে এসে নিজের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনার কথা জানিয়েছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমার দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম কর্মসূচিটি হবে দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনা। তিনি বলেন, ‘সরকার পণ্য উৎপাদন করে না, আমদানিও করে না। উৎপাদনকারী ও ভোক্তার মধ্যে সমন্বয় করে মাত্র। উৎপাদনকারীদের হাত থেকে পণ্যটি ভোক্তার হাতে পৌঁছানো পর্যন্ত জার্নিটা যেন স্মুথ হয়, সরকার সেই লক্ষ্যে কাজ করবে। নতুন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে, সেই প্রতাশা থাকবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত