তীব্র শীতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ

সুস্থতার সঙ্গে পড়ালেখা সম্পর্কিত

প্রকাশ : ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে হলে প্রাথমিক থেকে কলেজপর্যায় পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখা যাবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে এ ব্যাপারে আদেশ জারি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে এ ব্যাপারে অফিস আদেশ দেওয়া হয়েছে। চলমান শৈত্যপ্রবাহে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা-সংক্রান্ত আদেশে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন জেলায় বর্তমানে শৈত্যপ্রবাহ চলমান। এ শৈত্যপ্রবাহে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। যেসব জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যাবে, সেসব জেলার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় উপপরিচালকগণ সংশ্লিষ্ট জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহের একাডেমিক কার্যক্রম শীতের তীব্রতা ও স্থানীয় বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার নির্দেশনা প্রদান করতে পারবেন। এতে আরো বলা হয়, জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হলো, যার কার্যকারিতা ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বলবত থাকবে। তীব্র শীতের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার এ সিদ্ধান্ত অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে। কেন না, সকালের দিকে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম যখন শুরু হয়, তখন ঘন কুয়াশা থাকে। থাকে কনকনে শীত। সেইসঙ্গে বাতাস। আর শৈত্যপ্রবাহ বইতে থাকলে তা তো আরো কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হয়। দেশের উত্তরাঞ্চলসহ দেশের অনেক স্থানে দিনের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসছে। বয়স্ক লোকজনই এই কনকনে শীতের মধ্যে তাদের কাজকর্মে যেতে ঘর থেকে বের হওয়ার সাহস পান না। রাস্তাঘাটে জনসমাগত কমে গেছে। দিনমজুর হিসেবে যারা কাজ করেন, তারা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। মানুষ ঘরে থাকলেও শীতের কবল থেকে রেহাই পাচ্ছে না। সারাক্ষণ লেপ-কম্বলের নিচে শুয়ে বসে সময় পার করছেন। রোদের আশায় প্রহর গুনছেন। আকাশে সূর্যের দেখা না মিললে মানুষ সহসা বাইরে বের হচ্ছে না। এই পরিস্থিতির মধ্যে স্কুলপড়ুয়া সন্তানদের নিয়ে ঘরের বের হওয়া একটি কঠিন কাজ। আমাদের সমাজে শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা অত্যন্ত স্পর্শকাতর শ্রেণির। তারা আবহাওয়ার বিরূপ কিংবা দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে না। সে কারণে তারা নানা রকম রোগে আক্রান্ত হয়। যেসব সন্তান স্কুলে যায়, তাদের সকালবেলা তৈরি করে দিতে হয়। তারপর রাস্তায় বের হয়ে হেঁটে কিংবা কোনো যানবাহনে স্কুলে পৌঁছাতে হয়। স্কুলে যাওয়ার পথে প্রচণ্ড শীতে তারা কাহিল হয়ে পড়ে। স্কুলের লেখাপড়ায় তারা ঠিকমতো মন দিতে পারে না। প্রচণ্ড শীতের কারণে শিশুরা সদির্, কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেক শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আবার অনেকে চিকিৎসকের পরামর্শে ঘরে অবস্থান করছে। গত কয়েক দিন ধরে প্রায় পুরো দেশেই জেঁকে বসেছে শীত। পৌষ শেষে এখন শুরু হয়েছে মাঘ মাস। এ মাসে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। পৌষের শুরু থেকেই ঠান্ডাজনিত রোগে কাবু হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। সেটা এখন বেড়েছে। চিকিৎসকদের মতে, শীতে শিশুদের ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরনের রোগ দেখা দেয়। রাজধানীসহ সারাদেশে হাসপাতালে সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত রোগীর চাপ বাড়ছে। চিকিৎসকদের মতে, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি এই দুই মাস রোগী বাড়তে পারে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআরবি) দেওয়া তথ্য মতে, ঢাকার হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ রোগী ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে। তবে অন্যান্য সময় গড়ে ২৫০ জন করে রোগী থাকে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। জানুয়ারি মাসে শিশু হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ জন রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেন। যেটা সাধারণ সময়ে ৩০০ থেকে ৪০০-এর মধ্যে থাকে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। হাসপাতালের রেকর্ড থেকে জানা যায়, গত ১৫ দিনে শুধু ৮০টির মতো শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের শিশু মেডিসিন বিভাগে শীতের প্রকোপে চলতি মাসের শুরু থেকে তার দ্বিগুণের বেশি আসছে। প্রতিদিন সেখানে গত কয়েক দিনে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ রোগী আসছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন শীতজনিত রোগ নিয়ে প্রচুর রোগী আসছে। সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হচ্ছে অনেক শিশু। শীত বাড়লে এই রোগ আরো বাড়বে। শিশুদের গরম কাপড় পরিয়ে রাখতে হবে। সাধারণ সর্দি-কাশিতে যত্ন না হলে জটিলতা বাড়তে পারে। শীতে শিশুদের সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টের প্রকোপ বাড়ে। একই সঙ্গে চর্মরোগ ও ডায়রিয়ার মতো রোগও বাড়ছে। শিশুদের ঠান্ডা থেকে দূরে রাখতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিহিস্টামিন ও অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো যাবে না। শ্বাসকষ্ট হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে। এই পরিস্থিতিতে যেখানে শিশুদের ঘরে থাকার জন্য চিকিৎসকরা পরামর্শ দিচ্ছেন সেখানে স্কুল খোলা রেখে শিশু-সন্তানদের স্বাস্থ্যহানির মতো ঝুঁকির মধ্যে ঢেলে দেয়ার কোনো যৌক্তিতা নেই। কেন না, প্রথম কথা হচ্ছে শিশুদের সুস্থ রাখতে হবে। শিশুরা সুস্থ থাকলেই কেবল তারা পড়ালেখায় মনোনিবেশ করতে পারবে।