সৌহার্দ্যপূর্ণ হোক বিশ্ব ইজতেমা

ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠায় একক নেতৃত্ব দরকার

প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

আগামী ২ থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি এবং ৯ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে ঢাকার অদূরে টঙ্গির তুরাগ তীরে। আয়োজক দুই পক্ষকে পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে সমন্বয়ের মাধ্যমে ইজতেমা আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। গত বুধবার বিকালে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভায় তিনি এই আহ্বান জানান। আইজিপি বলেন, আসন্ন বিশ্ব ইজতেমা শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ করার জন্য সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ইজতেমায় অংশ নেওয়া মুসল্লিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। সভায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা ট্রাফিক বিভাগ এবং গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ ইজতেমার নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। সভায় উপস্থিত তাবলীগের উভয় পক্ষের মুরুব্বিরা ইজতেমাকে কেন্দ্র করে গৃহীত সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। ইজতেমাস্থলের নিরাপত্তায় পোশাকে ও সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। এছাড়া, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, ডগ স্কোয়াড, নৌ টহল, বিস্ফোরক দ্রব্য বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত টিম দায়িত্ব পালন করবে। ইজতেমাস্থলের নিরাপত্তায় আকাশে র‌্যাবের হেলিকপ্টার টহল থাকবে। সভায় ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের প্রতিনিধি ও তাবলীগের মুরুব্বিরা উপস্থিত ছিলেন।

১৯৬৭ সাল থেকে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে তিন দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমা নিয়মিত হয়ে আসছে। তবে মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে ২০১১ সাল থেকে বিশ্ব ইজতেমা দুই পর্বে আয়োজন করে আসছে সরকার। ২০১৭ সালের শেষের দিকে তাবলিগ জামাতের নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধ চরমে ওঠে। পরে সরকারি কর্তৃপক্ষের মধ্যস্থতায় ২০১৮ সাল থেকে দুই পক্ষ আলাদাভাবে তাবলিগ জামাতের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। এবার প্রথম পর্বের ইজতেমায় মাওলানা জুবায়ের আহমদ পক্ষের অনুসারীরা অংশ নেবেন। দ্বিতীয় পর্বে অংশ নেবেন মাওলানা ওয়াসিফুল ইসলাম পক্ষের অনুসারীরা। আমাদের সমাজে একটি কথা এই বলে প্রচলিত যে, এক জায়নামাজে দুইজন নামাজ আদায় করতে পারেন, তবে এক রাজ্যে দুই রাজা থাকতে পারে না। প্রশ্ন উঠছে, তাবলিগ জামাতের নেতৃত্ব নিয়ে এতো বিরোধ হবে কেন। তাবলিগ জামাতের এক পক্ষে যিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন, ইসলামের প্রতি তার যেমন মহব্বত, ঠিক তেমনি অন্যপক্ষও ইসলামের প্রতি অনুরূপ অনুরাগী। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ইসলামের মৌলিক দিক দিয়ে তো কোনো বিরোধ থাকার কথা নয়। আলেম ওলামারা ইসলামের খেদমত করবেন। ইসলামের অনুশাসন প্রতিটি মানুষের জীবনে প্রতিষ্ঠিত করবেন মানুষকে দ্বীনের রাস্তায় দাওয়াত দিবেন। মানুষকে হেদায়েত করবেন। কেননা, আলেমণ্ডওলামায়ে কেরামকে আমাদের সমাজে অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখা হয়। তারাই যদি নেতৃত্ব নিয়ে কোন্দলে জড়িয়ে যান, তাহলে সেটা হবে অত্যন্ত দুঃখজনক। লোক সমাগমের দিক দিয়ে পবিত্র হজের পর তাবলিগ জামাতের ইজতেমাকে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় সমাবেশ হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রতি বছর ইজতেমায় অনেক বিদেশি মেহমানও আসেন। তারা যদি আমাদের দেশের মুরব্বীদের এমন আচরণ লক্ষ্য করেন তা হলে সেটা হবে অত্যন্ত লজ্জার কথা।

তবলিগ জামাতের লোকজন নিজের পয়সা খরচ করে মানুষকে কোরআন ও হাদিসের কথা শোনান। তারা দুনিয়া ও আখেরাতের মুক্তির জন্য মানুষকে ইসলামের অত্যবশ্যকীয় অনুশাসনগুলো মেনে চলার জন্য আহ্বান জানান। মানুষ হেদায়েত হয়। আল্লাহর রাস্তায় সময় দেয়। যারা অন্যকে ইসলামের অনুশাসন মেনে চলার নসিয়ত করেন, তারা যদি নিজেদের মধ্যে মনোমানিল্য ও নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন তাহলে দেশ-বিদেশের মুসল্লিদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও তবলিগ জামাতের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। একক নেতৃত্ব ছাড়া কোনো কাজ সফল হয় না। কেন দুই পর্বে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে, কেন দুইজন মুরব্বী দুটি পক্ষের নেতৃত্ব দেবেন। সেই প্রশ্ন যতদিন থাকবে, ততদিন মানুষ তাবলিগ জামাতের প্রতি পুরোপুরি শ্রদ্ধাশীল হবে না। সেই সঙ্গে বিদেশি মেহমানরাও খুশি হবেন না। তারা এতো অর্থকড়ি ও সময় নষ্ট করে বাংলাদেশে আসেন। তাদের আগমনের সঙ্গে বাংলাদেশের ভাবমূর্তির সম্পর্ক রয়েছে, সেই সম্পর্ক যেন অটুট থাকে, সেই কামনা থাকবে।