ঢাকা ১১ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নিরাপত্তা সংকটে দেশের ফেরি সার্ভিস

অধিকাংশের নেই সনদ ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম
নিরাপত্তা সংকটে দেশের ফেরি সার্ভিস

মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটের কাছে গত বুধবার পণ্যবোঝাই ছোট-বড় ৯টি ট্রাক নিয়ে ডুবে যাওয়া ফেরি ‘রজনীগন্ধা’ উদ্ধার হয়নি। তবে উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম ও হামজার সাহায্যে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তিনটি ট্রাক উদ্ধার করা হয়েছে। এ অবস্থায় নারায়ণগঞ্জ থেকে ‘প্রত্যয়’ নামে আরেকটি জাহাজের উদ্ধার কাজে যোগ দেবার কথা রয়েছে। এদিকে, এখনও সন্ধান মেলেনি ফেরির দ্বিতীয় ইঞ্জিনচালক হুমায়ুন কবিরের। ফেরি ডোবার সময় অন্যরা সাঁতরে কিংবা উদ্ধারকারীদের মাধ্যমে তীরে ফিরলেও নিখোঁজ হন হুমায়ুন। ফেরিডুরি ঘটনার পর নৌপথের নিরাপত্তার বিষয়টি আবার প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। ফেরিচালক বেঁচে আছেন নাকি তিনি মারা গেছেন সেই প্রশ্নের জবাব কর্তৃপক্ষ দিতে পারেননি। এদিকে ডুবে যাওয়া ফেরিটি এবং ফেরিটিতে থাকা সব ট্রাক এখনো উদ্ধার করা যায়নি। একটি ফেরি বাল্কহেডের ধাক্কায় ডুবে যেতে পারে এমন বিশ্বাস অনেকেই করেন না বলে প্রতীয়মান হয়। ফেরিটির আয়ুষ্কাল শেষ হওয়ায় সেটির সক্ষমতা কমে যাওয়ায় সামান্য ধাক্কায় ফেরিটির তলা ফেটে ডুবে যেতে পারে এমন ধারণা নৌ-বিশেষজ্ঞদের। মেয়াদোত্তীর্ণ ফেরি দিয়ে চলছে গাড়ি ও মানুষ পারাপার। বুধবার সকালে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাটের কাছে নোঙর করা ফেরি রজনীগন্ধাকে বাল্কহেড ধাক্কা দেওয়ায় দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেন। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ ইউটিলিটি রজনীগন্ধা ফেরি দিয়েই চলেছে গাড়ি পারাপার। ২০১৪ সালে ফেরিটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ফেরির তলা ফেটে পানি ওঠায় আস্তে আস্ত ডুবে যায় ফেরিটি। আর দোষ চাপানো হচ্ছে বাল্কহেডের ওপর। মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিসির পক্ষ থেকে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ডুবে যাওয়া ফেরি উদ্ধারে কাজ করছে ডুবুরি ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। ডুবে যাওয়া ফেরিতে ৯ ট্রাক ছিল। ফেরিটি দৌলতদিয়া থেকে পাটুরিয়া আসার পথে ঘন কুয়াশার কারণে ঘাটের কাছে নোঙর করেছিল। রাত ১২টার দিকে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে রজনীগন্ধা ফেরিটি পাটুরিয়ার দিকে রওনা দিয়ে ঘন কুয়াশায় পাটুরিয়া ঘাটে যাওয়ার আগেই নোঙর করে। এই দুর্ঘটনার পর বলা হচ্ছে নৌ-পথটাকে নিরাপদ করতে নৌ-পুলিশকে যুগোপযোগী করতে হবে। বিআইডব্লিউটিসির ৫৩ ফেরির মধ্যে ৪৭টিরই সনদ নেই। বেশিরভাগই এসব ফেরির ৪০ বছরের বেশি পুরাতন। এছাড়াও ১৮টি রো রো ফেরির মধ্যে ১৪টিরই ফিটনেস সনদ নেই। এছাড়াও নেই বেশিরভাগ ফেরিতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি। অনেক ফেরির বয়স ৪০ বছর পার হয়ে গেছে। আইন অনুযায়ী ৪০ বছরের বেশি বয়সি নৌযানের ফিটনেস সনদ দেয় না বাংলাদেশ নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর। তার পরেও চলছে ফেরি সার্ভিস। ঘটছে দুর্ঘটনা। ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর পাটুরিয়া ঘাটে ডুবে যাওয়া ফেরি শাহ আমানতের মেরামতের তথ্য এবং রজনীগন্ধা ডুবে যাওয়ার কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। দুই বছর আগে পদ্মা সেতুর পিলারে ধাক্কা দেয় ফেরি কাকলি। ঘটনায় দায়ী ফেরি কাকলি তৈরি করা হয় ১৯৭৪ সালে। এ ফেরিটির বয়স ৪৭ বছর ছিল। ছিল না ফিটনেস সনদ। এছাড়া ডাম্প ফেরি থোবাল ১৯৩৮ সালে, ফেরি রায়পুরা, রানীক্ষেত ও রানীগঞ্জ ১৯২৫ সালে তৈরি করা হয়। এগুলোও ফিটনেস ছাড়াই অবাধে চলাচল করছে। বহন করছে বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের সঙ্গে সাধারণ যাত্রী। ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর ঢাকা-মানিকগঞ্জ মহাসড়কে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে কাত হয়ে ডুবে যাওয়া আমানত শাহ বড় ফেরিটি ১৯৮০ সালে ডেনমার্ক থেকে আনা হয়। সে হিসেবে ফেরিটির বয়স হবে ৪০ বছর। অথচ ফেরিটির আয়ুষ্কাল ছিল ২৫ বছর। ২০০৫ সালে এর মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে ২০১০ সালে ফেরি মেরামত করে পুনর্বাসন করে আরও ১০ বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়। তাও ২০২০ সালে শেষ হয়ে গেছে বলে বিআইডব্লিউটিসির সূত্র জানায়। বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে চলাচলকারী বেশির ভাগ ফেরির ফিটনেস সনদের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৪ সালের ২৫ জুলাই। গত সাত বছর ধরে ফিটনেস সনদ ছাড়াই চলছিল এ ফেরিগুলো। শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌ-রুটে ফেরি সার্ভিস বন্ধ থাকায় বিআইডব্লিউটিসির ১৮টি রো রো ফেরি সবগুলো দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে চলাচল করছিল। এসব ফেরির রয়েছে নানা কারিগরি ত্রুটি। অনেক ফেরিতে ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল স্টিয়ারিংয়ের ব্যবস্থা থাকলেও দুর্ঘটনার সময় মেকানিক্যাল স্টিয়ারিং অকার্যকর। বেশিরভাগ ফেরি ১৯৮০ সালে তৈরি করা হয়েছে। নদীমাতৃক বাংলাদেশে ফেরির কোনো বিকল্প নেই। তাবে এসব ফেরিতে যাতে যানবাহন ও মানুষ পারাপার নিরাপদ করা যায় সেদিকে কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত