অর্থনৈতিক উন্নয়নে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা

নতুন পণ্য উৎপাদনের ধারণা পায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান

প্রকাশ : ২১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

রাজধানীর অদূরে পূর্বাচলে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে আজ ২৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে মেলার উদ্বোধন করবেন। এবারের বাণিজ্য মেলার লে-আউট প্ল্যান অনুযায়ী বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্যাভিলিয়ন, রেস্টুরেন্ট ও স্টলের মোট সংখ্যা ৩৫১ এবং দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মোট বরাদ্দকৃত প্যাভিলিয়ন, রেস্টুরেন্ট ও স্টলের সংখ্যা ৩০০টি।

ইপিবি জানিয়েছে, এবারের বাণিজ্য মেলায় দেশীয় পণ্যের পাশাপাশি ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, হংকং, সিঙ্গাপুর, নেপালসহ বিভিন্ন দেশ অংশ নেবে। পণ্য প্রদর্শনের পাশাপাশি দেশীয় পণ্য রপ্তানির বড় বাজার খোঁজার লক্ষ্য রয়েছে। দেশীয় পণ্যের প্রচার, প্রসার, বিপণন, উৎপাদনে সহায়তার লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ইপিবির যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এ মেলা হতো শেরেবাংলা নগরে। কোভিড মহামারির কারণে ২০২১ সালে মেলার আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। এরপর মহামারির বিধিনিষেধের মধ্যে ২০২২ সালে প্রথমবার মেলার আয়োজন করা হয় পূর্বাচলে বিবিসিএফইসিতে। এবার তৃতীয়বারের মতো স্থায়ী ভেন্যু বাংলাদেশ-চীন এক্সিবিশন সেন্টারে বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। চীনের অর্থায়নে পূর্বাচলে স্থায়ী বাণিজ্যমেলা কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। এখন থেকে প্রতি বছর এখানেই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আসর বসবে। কম্পিউটার মেলা, বিজ্ঞান মেলা, কৃষি মেলা ও বই মেলার মতো এমনি একটি মেলা হলো- আমাদের সংস্কৃতির আধুনিকতম সংস্করণ ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতিবছর ঢাকার শেরে বাংলানগরে বাংলাদেশ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর উদ্যোগে শিল্পপণ্য ও ভোগ্যপণ্য নিয়ে নিয়মিত আয়োজিত হয়ে আসলেও এখন মেলার ভেন্যু পরিবর্তন হয়ে বর্তমান স্থলে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মেলায় ব্যতিক্রম, দৃষ্টিনন্দন ও মানের দিক দিয়ে সেরা পণ্যটি পাওয়া যায় বলে বিপুলসংখ্যক মানুষের সমাগম ঘটে। বাংলার চিরায়ত লোকসংস্কৃতিকে সমুন্নত রেখে বরাবরের মতো এবারো গত জানুয়ারি মাসে শুরু হয়েছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। মেলার আন্তর্জাতিকায়নের ফলে প্রচুর বৈদেশিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। বিদেশি ক্রেতা ও দর্শকের সমাগম ঘটে। আমাদের দেশের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পসামগ্রী বিদেশিদের কাছে বেশ পছন্দনীয়। মেলায় বিদেশি দর্শকদের কাছে এসব পণ্য বিক্রির মাধ্যমে বিশ্বে আমাদের এই দেশীয় শিল্পের বিক্রি ও সুনাম বৃদ্ধি পায়। ফলে লাভবান হতে পারে আমাদের ক্ষুদ্র শিল্প। আর দেশীয় বড় বড় প্রতিষ্ঠানের মুনাফা অর্জনের পথও সুগম হয় এই মেলার মাধ্যমে। পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকার, অংশগ্রহণকারী দেশি ও বিদেশি কোম্পানি থেকে মোটা অঙ্কের রাজস্ব পায় এবং প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ পায়। মেলার টিকিট বিক্রি থেকেও প্রচুর অর্থ উপার্জিত হয়। মেলায় খণ্ডকালীন কর্মসংস্থানের মাধ্যমে বেকারদের সাময়িক বেকারত্ব ঘুচে। অনেকেই আবার মেলার খণ্ডকালীন চাকরিতে ভালো পারদর্শিতা প্রদর্শন করে স্থায়ী চাকরিও পেয়ে থাকেন। বাণিজ্য মেলা একটি দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামোর সঙ্গে সম্পর্কিত। অর্থাৎ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রসারে বাণিজ্য মেলা সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই দেশের মূলশক্তি অর্থনীতির সমৃদ্ধ অবকাঠামো গঠনে বাণিজ্য মেলার আয়োজন আবশ্যক। তাছাড়া যেহেতু মেলায় বিভিন্ন দেশের বণিকশ্রেণি তাদের নানা ধরনের পণ্য নিয়ে হাজির হয়, তাই দেশীয় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো নিত্যনতুন বিদেশি পণ্যের সঙ্গে পরিচিত হতে পারে। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন পণ্য উৎপাদনের ধারণা পায়। ক্রেতা বা ভোক্তা বিদেশি পণ্যের সঙ্গে আমাদের দেশীয় পণ্যের মানের তুলনা করতে পারেন। বিদেশি ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তার সঙ্গে আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটে। ফলে বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রচার ও প্রসার হয়। জাতীয় উন্নতি ও অগ্রগতির প্রধান বাহক হলো বাণিজ্য। আর এই বাণিজ্যের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণই বাণিজ্য মেলার মূল লক্ষ্য। দেশের অর্থনীতির দ্রুত বিকাশে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। এ মেলা বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ব্যবসায়িক আয়োজন। উৎপাদক-রপ্তানিকারক, আমদানিকারক, ব্যবসায়ী ও ক্রেতা সাধারণকে এক প্ল্যাটফর্মে সমবেত করতে এবং পণ্যের প্রসার ও বাজার সম্প্রসারণে তথা জাতীয় অর্থনীতির উন্নয়নে এ মেলার আবশ্যকতা অপরিহার্য।