অর্থনৈতিক সংকট সমাধানে আশার বাণী

বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একত্রে কাজ করার আহ্বান

প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার আবার টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় এসেছে। এই সরকারের এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে- দেশের অর্থনৈতিক সংকট। তবে বিরাজমান অস্থির বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে যে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে, তা মোকাবিলায় সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। ডলার সংকটের সঙ্গে যোগ হয়েছে গ্যাস সংকট। ফলে আমদানি ও উৎপাদান প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেই সঙ্গে চালসহ বিভিন্ন পণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ আরেকটি সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতির কারণে মানুষের পকেট কাটা পড়ছে। তবে অর্থনীতে এখন যেসব সংকট আছে, সেগুলোর সমাধান সম্ভব এবং এসব সমস্যার সমাধান হচ্ছে বলে মনে করছে, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। সংস্থাটির সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, এখন উচ্চ মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভে অস্থিতিশীলতা, এলসি খোলার জন্য ডলারের অপর্যাপ্ততা, গ্যাস সংকটসহ কিছু সমস্যা রয়েছে এবং এগুলো সবই সমাধান সম্ভব। ২০২৪ সালে ডিসিসিআইর বর্ষব্যাপী কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। আশরাফ আহমেদ বলেন, আমাদের চ্যালেঞ্জ আছে। তবে সেটা বড় নয়। আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বদলে দেওয়ার মতো কোনো মৌলিক পরিবর্তনও হয়নি। আগামী এক দশকে আমরা বিশ্বের ২০টি বড় অর্থনৈতিক দেশে পরিণত হতে যাচ্ছি। এখন আমাদের প্রবৃদ্ধি নেমেছে। অথচ আমাদের চেয়ে বেশি কমেছে চীনসহ অনেক দেশের।

আমাদের অর্থনীতির মৌলিক ভিত্তিগুলো ঠিক আছে। শুধু ইউরোপ-আমেরিকার বাজারের ওপর নির্ভর না করে চীন-ভারত ও আফ্রিকার মতো জনবহুল দেশকে বাজার হিসেবে বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেন ডিসিসিআই সভাপতি। তিনি বলেন, এসব দেশে ভোক্তা বেশি। সেজন্য প্রয়োজনীয় ইকনোমিক ডিপ্লোমেসি করতে হবে। আশরাফ আহমেদ আরো বলেন, মূল্যস্ফীতি সবাইকে পীড়া দেয় সত্য। তবে এটা সারা বিশ্বে প্রভাব ফেলেছে। আমাদের মূল্যস্ফীতি ছয় শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ হয়েছে। অথচ বিশ্বের অন্যান্য তুলনায় সেটা অনেক ভালো অবস্থা। মূল্যস্ফীতির সমস্যা আমাদের আগেও হয়েছে, আমরা সেটা কাটিয়ে উঠেছি। আর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো যে মূল্যস্ফীতির তথ্য দিচ্ছে, সেটা নির্দিষ্ট কিছু বিষয় বিবেচনায়। আসলে পরিস্থিতি এতটা খারাপ নয়। প্রাইভেট সেক্টরে বিনিয়োগ বাড়াতে যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে অনেক আইনের পরিবর্তন ও সংযোজন প্রয়োজন। অন্যদিকে বৈশ্বিক বাজার থেকে আমাদের যে পরিমাণ ব্যবসা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে, সেগুলো নিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, গত ১৫ বছরে আমাদের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে দারিদ্র্য কমেছে। কৃষিনির্ভর দেশ থেকে আমরা শিল্প ও সেবা খাত নির্ভর হয়েছি। এখন তৈরি পোশাক খাতের পাশাপাশি রপ্তানি বহুমুখীকরণ করতে হবে। বিরাজমান অস্থির বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে যে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে তা মোকাবিলায় সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে বলে জানিয়েছেন টানা দ্বিতীয় মেয়াদে নিযুক্ত প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান। একটি ব্যাবসায়ী প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি আরো বলেন, বিরাজমান অস্থির বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে যে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে, তা মোকাবিলায় সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে বিগত সময়ে যেভাবে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা হয়েছে, সেভাবেই এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়নের গতি চলমান থাকবে। তিনি ব্যবসায়ী নেতাদের ধৈর্য ও সততার সঙ্গে মানুষের কল্যাণার্থে তাদের ব্যবসা পরিচালনার অনুরোধ জানান। কোভিড অতিমারীর পর বিশ্ব অর্থনীতি যখন উত্তরণের কাজে নিয়োজিত, তখন ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে চলমান রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান চাপ এবং এ বছরের শেষ পর্যায়ে এসে ইসরায়েলে হামাসের হামলা ও তার প্রতিক্রিয়ায় গাজায় তাদের ভয়াবহ হামলা বিশ্ব অর্থনীতির বিপর্যয় বাড়িয়েছে। সারা বিশ্বের মতোই বাংলাদেশও অর্থনৈতিক মন্দায় ভুগছে। কিছুতেই ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। তাতে যুক্ত হয়েছে ঋণখেলাপি ও অর্থপাচারের মতো দুর্নীতি থামানোর কার্যকর উদ্যোগের অভাব। সব মিলিয়ে উন্নয়নের গতিতে থাকা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আগামীতে আরো গতিশীল হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।