রমজানে নিয়ন্ত্রণহীন পণ্যমূল্য

গিলে খাবে সরকারের সব সফল অর্জন

প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

রমজান আসছে। সেই সঙ্গে ব্যবসায়ীরাও প্রস্তুতি নিচ্ছেন অতিরিক্ত মুনাফা কীভাবে করা যায়, সেই ফন্দি-ফিকির করার জন্য। সরকারও বসে নেই। সরকারের মন্ত্রীরা দায়িত্ব নেয়ার পরই দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্ষয়সীমার মধ্যে রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। দেশের আইন আদালতও বসে নেই। তারাও কম চেষ্টা করছে না। সবারই এক ও অভিন্ন অবস্থান কীভাবে পণ্যের মূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা যায়। একদিকে সরকার ও আইন আদালত, অন্যদিকে ব্যবসায়ী সমাজ। এই দুই পক্ষের মধ্যেকার এই লড়াইয়ে কে হারে আর বিজয়ী হয়, সেটাই এখন দেখবে দেশের অসহায় ভোক্তারা। শুধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে যদি পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে বর্তমান সরকারের সব অর্জন ভেস্তে যাবে। এ ক্ষেত্রে আদালতও এগিয়ে এসেছে। এটা ভালো লক্ষণ। কৃষিপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে কৃষি বিপণন আইনের বিধান যথাযথভাবে বাস্তবায়নের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানাতে রাষ্ট্রপক্ষকে মৌখিক নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এরপর এ বিষয়ে শুনানি হবে। হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ বিষয়ে জানাতে বলেছেন। একই সঙ্গে কৃষিপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ ও বিধানটি বাস্তবায়নে নিষ্ক্রিয়তা প্রশ্নে করা ওই রিটের শুনানি এক সপ্তাহের জন্য মুলতবি করেছেন আদালত। ‘নির্বিকার কর্তৃপক্ষ, পণ্য কিনে ঠকছেন ভোক্তা: আলুর কেজি এক লাফে বাড়ল ১৫ টাকা’ শিরোনামে গত ২৬ ডিসেম্বর একটি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। প্রতিবেদনটি যুক্ত করে আলু, পেঁয়াজসহ কৃষিপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ এবং কৃষি বিপণন আইনের ৪(ছ) বিধান বাস্তবায়ন করে কৃষিপণ্য উৎপাদন এলাকায় বাজার অবকাঠামো স্থাপনে নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে গত ডিসেম্বরে রিটটি করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী জনস্বার্থে রিট আবেদন করেন। রিটটি শুনানির জন্য আদালতের কার্যতালিকায় ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় এ বিষয়ে গত রোববার শুনানি হলো। শুনানিতে ওই আইনজীবী বলেন, উৎপাদন এলাকায় সরকার বাজার কাঠামো করবে, এটিই কৃষি বিপণন আইনের অন্যতম উদ্দেশ্য।

২০১৮ সালের ওই আইনের ৪(ছ) বিধান অনুসারে সুষ্ঠু বিপণনের স্বার্থে কৃষিপণ্য উৎপাদন এলাকায় বাজার অবকাঠামো, গুদাম, হিমাগার ইত্যাদি নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনা জোরদার করবে। কৃষি অধিদপ্তর এই কাজগুলো করতে বাধ্য। কিন্তু বিধানটির দৃশ্যমান বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে না। একপর্যায়ে একজন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে হলফনামা করে রিটটি করা হয়। নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। নতুন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী এসেছেন। তিনি এরই মধ্যে কিছু উদ্যোগও নিয়েছেন। এ সময় সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলকে আদালত বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে খবর নেন, এক সপ্তাহ সময় দেওয়া হলো। এ বিষয়ে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ওই বিধান বাস্তবায়নের বিষয়ে খোঁজ নিতে বলেছেন আদালত। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে আদালতকে অবহিত করতে বলা হয়েছে। দেশে চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট পরিমাণে নিত্যপণ্য মজুত আছে। এছাড়া, গত বছরের তুলনায় এবার বিভিন্ন নিত্যপণ্যের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ এলসি বেশি হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে মধ্যে এসব নিত্যপণ্য দেশে পৌঁছাবে। এ অবস্থায় আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্য নিয়ে কেউ কারসাজি করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে লাইসেন্স বাতিলসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ছাড়পত্র বন্ধ করা হবে। গত রোববার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বৈঠকে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান বলেন, বাজারে কোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতি নেই। কিন্তু কিছু মধ্যস্বত্ববভোগী আছে, যারা কারসাজি করে। তাদের কৃত্রিম সংকটের কারণে আমরা বিপদে পড়ি। এদের চিহ্নিত করে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। লাইসেন্স বাতিল করা হবে, তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের ছাড়পত্র বন্ধ করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, রমজানে আমরা যেসব পণ্য আমদানি করি, গত বছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত আটটি পণ্যের যত এলসি হয়েছিল, এবার তার থেকে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেশি এলসি হয়েছে। এলসি ওপেন করতে কোনো সমস্যা নেই। পণ্যগুলো সময় মতো দেশে এসে পৌঁছাবে বলে আশা করছি। কোনো মধ্যস্বত্বভোগী সমস্যা না করলে দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। বৈঠকের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, রমজান আসছে। আমরা সর্বশেষ পরিস্থিতি দেখলাম, কোনো ঘাটতি নেই। রমজানের সময় যেসব নিত্যপণ্য লাগে। সেসব পণ্যের কোনো সংকট নেই। তিনি বলেন, যেভাবে প্রাইস লেভেলকে ধরে রাখা যায়, সে কাজগুলো সরকার করছে। আমরা মনে করি চিন্তার কোনো কারণ নেই। দরকার হলে আমরা অনেক কঠোর পদক্ষেপের দিকে চলে যাব। দরকার হলে শাস্তিমূলক পদক্ষেপের দিকে যাব, কাউকে ছাড় দেব না। প্রতি বছর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রোজার আগে এমনি অবস্থান নেয়। তবে বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন দেখেনা ভোক্তারা। এবার যদি তার ব্যতিক্রম হয়, তাহলে সেটা হবে প্রশংসীয় একটি দৃষ্টান্ত।