আমরা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নাই! আশ্চর্য হচ্ছেন? সোশ্যাল মিডিয়া এবং ডিভাইস যা চাচ্ছে সেটাই আমরা করছি! বিছানায় শুয়ে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত হাতের মধ্যে মোবাইল! ঘুম থেকে জেগে সর্বপ্রথম মোবাইল তালাশ করি! সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সুযোগ পেলেই, কাজ ফাঁকি দিয়ে, খেতে বসে কিংবা টয়লেটে বসেও মোবাইল টিপি! স্ক্রিনে বৃদ্ধাঙ্গুলির ওঠা-নামা চলতেই থাকে! বাস্তব জীবনে প্রিয়জনদের সাথে যোগাযোগ কমে গেছে। লোকসমাগমের ভেতরে নিজেকে লজ্জিত মনে হয়! এ কোথায় এলাম! আমার সব লেনদেন তো ভার্চুয়াল মানুষের সাথে! আপনি কী দ্বিমত করছেন? তবে উত্তর দিন! সর্বশেষ কবে একখানা বই শেষ করেছিলেন? কোনো ধরণের ডিভাইসের ব্যবহার ছাড়াই সর্বশেষ কবে বন্ধুদের সাথে আড্ডা জমিয়েছিলেন? নেট কানেকশান না থাকলে কিংবা ইন্টারনেটের গতি কম থাকলে মাথার অর্ধেক খারাপ হয়ে যায় না? পরিবারের সদস্যদের প্রতি সম্পূর্ণভাবে দায়িত্বশীল আছেন? আপনার ব্যাংকের সিকিউরিটির চেয়ে ভার্চুয়াল জগতের নিরাপত্তা নিয়ে বেশি শঙ্কিত নন? আপনার উত্তর কী জানি না তবে অধিকাংশ মানুষের আপাতত ভিন্নমত পোষণের সুযোগ নাই। নিত্যাকার রুটিনে এইসব কীর্তি-কাণ্ড ঘটছে!
আমরা আমাদের সক্ষম এবং অক্ষম সময়ের অধিকাংশভই ভার্চুয়াল দুনিয়ায় অপব্যয় করছি! সহজ কথায়, আমার সময়কে খুন করছি! ছবি তোলা, পছন্দ-মন্তব্য এবং শেয়ার- কেয়ারে রুটি-রুজির পথকেও কলুষিত করছি! মিথ্যা এবং গুজব কী পরিমান ছড়াচ্ছি এবং ব্যক্তিত্বহীনতা কীভাবে বাড়াচ্ছি সেটা এসবে দায়ী ব্যক্তি বুঝতে পারছে না! কাজের মাঝে ফেইসবুকিংয়ে কিংবা ব্রাউজিংয়ে যে সময় খুন করছি তাতে চাকরিজীবীদের আয়ের কতভাগ বৈধ হচ্ছে, সেটা বিতর্ক রাখে! রাষ্ট্র কিংবা ব্যক্তি-যিনিই আমার নিয়োগকারী হোন, বিক্রিত সময় ও সক্ষমতায় ফাঁকি দিলে সেটিকে ভালো বলা যায় না! মধ্য বয়সের আমি কিংবা বৃদ্ধ বয়সের আপনি ২৪/৭ সোশ্যাল মিডিয়ায় শুয়ে থাকুন- ভবিষ্যতের তেমন বিশেষ কোনো ক্ষতি নেই! কেন না, সম্ভাবনার সবটাই হেলায়-ফেলায় খুইয়ে ফেলেছি।
এখন নষ্ট করার দুটি চোখ ছাড়া আর কিছু অবশিষ্ট নেই! মস্তিষ্কের অবস্থা মানসিক ডাক্তার জানে! কিন্তু যারা নবীন, উঠতি বয়সের তরুণ, আগামী দিনের জাতি ও রাষ্ট্রের রাহবার তারা সোশ্যাল মিডিয়ায়, ভার্চুয়াল দুনিয়ায়, ইন্টারনেট ও ডিভাইসে যেভাবে আসক্ত হচ্ছে তাতে অন্ধকার কী খুব বেশি দূরে? এসবের উপকার অস্বীকার করার সুযোগ নাই, সেটা যদি ব্যবহারের পর্যায়ে থাকে। কিন্তু চারদিকে যা হচ্ছে তার সিংহভাগ অপব্যবহার এবং সেটার অকল্যাণ ইতোমধ্যেই নাজিল হচ্ছে! শিক্ষার্থীদের যে সময়টা নিজেকে তৈরি করার, জ্ঞানের সাথে সন্ধি করার, সে তখন টিকটক করে জীবন অপচয় করছে! শর্টস এবং রিলসের নামে যা ছড়াচ্ছে, তা উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীদের যৌনতার সুড়সুড়ি দিচ্ছে! এরই মধ্যে বিকৃত যৌনাচারের কুফলের ঢেউ সমাজে লেগেছে! বিষন্নতা-হতাশা, বিচ্ছেদ-বিরহের তুফানে দুলছে আজকের প্রজন্ম। নৈতিকতা-মূল্যবোধ এবং দেশপ্রেমের অবস্থা নাজুক অবস্থায় পৌঁছেছে। অপরাধ ও অপরাধীর অভয়ারণ্যে প্রজন্মের বিচরণ বাড়ছে! শ্রদ্ধা-বিশ্বাসের ভিত্তি নড়বড়ে হয়েছে! প্রজন্ম ‘জোর যার মুল্লুক তার’ যুগে পদার্পণের পথে! সামাজিক বন্ধন অরক্ষিত এখন। কোন বয়স থেকে স্মার্টফোনের চালাতে পারবে, সেটার কঠোর নীতিমালা ও প্রয়োগ থাকা দরকার। অবাধে কোন কোন সাইট ব্রাউজিং করা যাবে এবং কোথায় যাবে না সে বিষয়ে প্রবেশ-প্রতিবন্ধকতা থাকা দরকার। অভিভাবকরা সচেতন না হলে সন্তানের গোল্লায় যাওয়া থেকে কেউ ফেরাতে পারবে না। একথা বলতে দ্বিধা নাই, ইন্টারনেটে গতি বৃদ্ধির সাথে সাথে একশ্রেণির চারিত্রিক অধঃপতন হয়েছে, বিকৃতমনারা নিজেদের বিক্রি করতে শুরু করেছে এবং বিষবাষ্পে আশপাশ বাস অযোগ্য করছে! মানসিকতার বৈকল্য ও রুচির দুর্ভিক্ষের সংক্রমণ হু হু করে বাড়ছে! নেতিয়ে পড়েছে বিবেচনার মানদ-! আধুনিকতাকে আশীর্বাদের বদলে ধ্বংসের হাতিয়ার বানালে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় এ জাতি পিছিয়ে যাবে। নতুনত্বের উদ্ভাবনের রূপরেখা ধ্বংসস্তূপে পৌঁছাবে। কর্তৃপক্ষ নজরদারি এবং অবিভাবকদের সচেতনার বিকল্প নাই। মোবাইল-ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার সহনীয় পর্যায়ে এনে পাঠাভ্যাস বাড়াতে হবে। জোরালোভাবে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রচলন করতে হবে এবং মাননম্মত ও শিক্ষামূলক সিনেমা-নাটক নির্মাণ করতে হবে। নীতিনির্ধারকদের চিন্তা ও কর্মকাণ্ডে প্রজন্মের কল্যাণ নিহিত থাকুক- এমন সিদ্ধান্ত ও সিদ্ধান্তের প্রতিফলন বেশি বেশি ঘটুক, সেই প্রত্যাশায়।