বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ও শেখ হাসিনার নেতৃত্ব

ইঞ্জিনিয়ার ফকর উদ্দিন মানিক

প্রকাশ : ২৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

নানা ঘাত-প্রতিঘাত, বাধা বিঘ্ন হাজারো প্রতিকূলতার তিমির রাত্রির অমানিশা ভেদ করে বাংলার ফিনিক্স পাখি শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন সমৃদ্ধির মহিসোপানে। নিজস্ব অর্থায়নে দোতলা পদ্মা সেতুসহ দশের অধিক মেগা প্রজেক্ট প্রমাণ করে আমাদের কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রার ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর মতো শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আর্থসামাজিক নানা সূচকে অভূতপূর্ব সাফল্যে দুর্ভিক্ষের বাংলাদেশ আজ খাদ্যে উদ্বৃত্তের বাংলাদেশ, তলাবিহীন ঝুঁড়ির বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। তাইতো বলা যায় ‘দেশপ্রেমী তুমি জনকের মতো, তুমি যে তুলনাহীন। সত্যে-সাহসে অবিচল তুমি, আশাবাদী চিরদিন’। সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় দারিদ্র্য বিমোচন, কৃষি বিপ্লব, আইনের শাসন, মানবাধিকার সুরক্ষা, জবাবদিহিমূলক সেবামুখী জনপ্রশাসন, সাম্প্রদায়িকতা, মাদক, সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি, গ্রামে আধুনিকতার ছোঁয়া, জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর, আত্মকর্মসংস্থান ও নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি, গার্মেন্টস শিল্পে অপরাজেয় সাফল্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগে সমন্বিত ব্যবস্থাপনা, বৃক্ষরোপণ, নারীর ক্ষমতায়ন, ক্ষুদ্র ঋণে বিপ্লব ও রেকর্ড সংখ্যক রেমিট্যান্স প্রভৃতির ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত এখন বাংলাদেশ। শুধু তাই না, তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ফলে এমডিজি অর্জন, টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প, কৃষি, শতাধিক বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে সত্যিকারের বদলে যাওয়া আধুনিক বাংলাদেশের সাফল্য উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে। এছাড়াও শতভাগ শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে বই বিতরণ, ছাত্রীদের উপবৃত্তির ব্যবস্থা, ভূমিহীন-গৃহহীনদের বিনামূল্যে জমিসহ ঘর বিতরণ কার্যক্রম, বঙ্গবন্ধুর ইসলামি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার মতো প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণ পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। তাই অতীতে বাংলাদেশকে অবমূল্যায়িত করা পরাশক্তিগুলোও আজ বাংলাদেশের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। প্রকৃতপক্ষে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে। সেই জন্যই সবার মুখে মুখে আজ ধ্বনিত হচ্ছে- ধন্য পিতার ধন্য কন্যা, দেশরত্ন শেখ হাসিনা। প্রখ্যাত নোবেল বিজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের মতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশ্বকে চমকে দেবার মতো সাফল্য আছে বাংলাদেশের। এমনকি এইচএসবিসির গবেষণায় ২০৩০ সালের মধ্যে জিডিপিতে বিশ্বের ২৬তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ ও সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ইউবিএস-এর মতে ২০৫০ সালে ১২তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে বাংলাদেশ। অধিকন্তু, বিভিন্ন সূচকের অকল্পনীয় সাফল্যে ২০১৯ সালে জাতিসংঘের অধিবেশনে তৎকালীন মহাসচিব বান কি মুন এদেশকে ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। শুধু তাই না, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে শেখ হাসিনার আপসহীন নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন বিশ্ব নেতারা। সেই জন্য চারদিকে আওয়াজ একটাই ‘শেখ হাসিনার হাতে দেশ, তাই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’। শেখ হাসিনার দূরদর্শিতায় যোগাযোগ ও আইসিটি খাতে অকল্পনীয় সাফল্যে বহির্বিশ্বে বিস্ময়কর সুনাম কুড়িয়েছে বাংলাদেশ। শুধু তাই না, বিশ্বের ১৫৭টি দেশে কর্মরত প্রায় ১ কোটির অধিক রেমিট্যান্স যোদ্ধার ভবিষ্যৎ চিন্তা করে, বিদেশ ফেরত ও নতুন রেমিট্যান্স যোদ্ধা প্রেরণ প্রক্রিয়ায় স্বল্প সুদে প্রবাসী ঋণ প্রদানে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। এমনকি হতদরিদ্র বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত ও দুস্থ মহিলা, গর্ভবতী, প্রতিবন্ধীদের বিভিন্ন ভাতা ও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন সুবিধা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধিসহ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব অনেক দেশের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ। সাম্প্রতিক ভূমি ব্যবস্থাপনাকে আধুনিকায়ন করার জন্য প্রায় সব জেলায় বিদ্যমান মৌজা ম্যাপ ও খতিয়ান ডিজিটালাইজেশন, ডিজিটাল ল্যান্ড জোনিং ম্যাপ প্রস্তুত এবং সর্বশেষ ‘দলিল যার, জমি তার’ আইন পাস শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বের বহিঃপ্রকাশ। তথাপি, বৈশ্বিক মহামারি করোনায় অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলা করেও জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার গড়ে ৬ শতাংশের বেশি বজায় রাখায় সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার মতো বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে ‘জ্বলে পুরে মরে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়’। নেতৃত্ব গুণে সারাবিশ্বে একমাত্র নোবেল পুরস্কার ব্যতীত প্রায় সব সম্মানজনক পুরস্কার ও পদকে ভূষিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তার নেতৃত্বেই সমুদ্র জয়ের পর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের পাশাপাশি ছিটমহল বিনিময়ের মধ্যদিয়ে প্রমাণিত হয়েছে জলে-স্থলে-অন্তরিক্ষে সর্বত্র বাংলাদেশের বিজয়গাঁথা। তথাপি, মিয়ানমারে জান্তা সরকারের নৃশংস নির্যাতনে জাতিগত নিধনের স্বীকার বাস্তুচ্যুত ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়ে মানবিক বিশ্বের প্রধান নেতা হয়েছেন, শেখ হাসিনা। তার নান্দনিক নেতৃত্বে সামাজিক পরিস্থিতির উন্নয়নে অভূতপূর্ব ভূমিকা রাখায় বিশ্বের শীর্ষ ১০ মহান নেতার একজন হয়ে বাংলাদেশকে গর্বিত করেছেন। জলবায়ু সংকটে পৃথিবী রক্ষায় জাতিসংঘে উত্থাপন করা শেখ হাসিনার যুক্তিসঙ্গত প্রস্তাবনাগুলোর উচ্ছ্বসিত প্রশংসায় বিশ্বনেতৃত্ব। গত ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ৭৭তম অধিবেশনে একজন রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে তার ১৭তম বিরল ভাষণে অস্ত্র প্রতিযোগিতা, বৈশ্বিক যুদ্ধ ও সব অবরোধ বন্ধের জন্য সাহসী বক্তব্য দিয়ে বিশ্বনেতার আসন পাকাপোক্ত করেছেন তিনি। তারই ফলস্বরূপ বাংলাদেশ সর্বাধিক ভোট পেয়ে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল থেকে আগামী ৩ বছরের জন্য জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হয়েছে। সেই জন্যই সর্বত্র উচ্চারিত হচ্ছে ‘আশার রৌদ্র ছড়াও তুমি প্রতিটি ভোরে, বাংলার নীল আকাশে তাই শান্তির পায়রা উড়ে।’ তরুণ প্রজন্মের তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে গত এক দশকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে প্রায় ১০ লক্ষাধিক উদ্যোক্তা তৈরির ফলে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ১ কোটি মানুষের। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, মোবাইল ব্যাংকিং, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেবাকেন্দ্র, বিশ্বের সর্ববৃহৎ জাতীয় ওয়েব পোর্টাল, ই-কমার্স, ই-টেন্ডারিং, ই-জিপি, ই-চালান, ই-পেমেন্ট, ডিজিটাল জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মসনদ, এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথম চালু হওয়া ই-পার্সপোট প্রমাণ করে শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় অদম্য বাংলাদেশ। অতীতের অভাব, মঙ্গা, দারিদ্র্য, দুর্ভিক্ষ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও তথাকথিত তলাবিহীন ঝুঁড়ির বাংলাদেশ এখন শুধুই ইতিহাস। বরং, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, টানেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, গভীর সমুদ্রবন্দর, পার্বত্য শান্তি চুক্তি, সমুদ্রসীমার বিজয়, ছিটমহল সমস্যার সমাধান, গঙ্গার পানি চুক্তি, ডিজিটাল বিপ্লব, ফ্লাইওভার, ১৪ লেনের মহাসড়কসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকই আজ ঈর্ষণীয় সাফল্যে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের বাস্তব চিত্র।

তাই বিভিন্ন বিদেশি মেগাপ্রকল্পের চোখ ধাঁধানো দৃশ্য এখন বাংলাদেশেও দৃশ্যমান। এমনকি, প্রতিকূল অগ্রযাত্রায় স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল বাংলাদেশে রূপান্তরের ক্ষেত্রে সব সূচকের মানদ-েই শতভাগ উন্নীত হয়েছে বাংলাদেশ। তথাপি, ‘২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ ও শতবর্ষের স্বপ্ন পূরণে ডেলটা প্ল্যান-২১০০’ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। মূলত, ক্যারিশমাটিক নেত্রী শেখ হাসিনার নিরলস পরিশ্রমে আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসাবে বিশ্ব স্বীকৃতি আদায়কারী দেশটির নাম এখন বাংলাদেশ। বার বার মৃত্যুকূপ থেকে ফিরে আসা শেখ হাসিনা যেন নীলকণ্ঠ মৃত্যুঞ্জয়ী মুক্তমানবী। তার মেধা, মনন, প্রজ্ঞা যোগ্যতা, দক্ষতা, সততা, নিষ্ঠা, সৃজনশীলতা, উদার দৃষ্টিভঙ্গি ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। আর্থসামাজিক রাজনৈতিক দৈন্যে আকণ্ঠ নিমজ্জিত বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়ে অগ্রযাত্রার হিমালয়ে অধিষ্ঠিত করেছেন। তার নিখাদ দেশপ্রেম, দূরদর্শিতা, দৃঢ়চেতা, সমুদ্রসম অর্জন ও মানবিক গুণাবলি তাকে আসীন করেছে বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে। তাইতো তিনিই বাঙালির জাতীয় ঐক্যের প্রতীক, বিশ্বজয়ের স্বপ্নসারথি, আশা আকাঙ্ক্ষার বিশ্বস্ত ঠিকানা, ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল ও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার ফিনিক্স পাখি।

লেখক : সভাপতি, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ এলামনাই এসোসিয়েশন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

সদস্য, কৃষি ও সমবায়বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।