ঢাকা ১১ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শীতে ভোগান্তিতে দরিদ্র মানুষ

সহানুভূতি বেশি প্রয়োজন
শীতে ভোগান্তিতে দরিদ্র মানুষ

উত্তরাঞ্চলসহ সারা দেশে জেঁকে বসেছে শীত। রাত থেকে পড়ছে ঘন কুয়াশা, সেই সঙ্গে রয়েছে হিমেল হাওয়া। এতে করে মানুষের জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে। মাঘের শীতের হাড় কাঁপানো আচরণে এই মাসে শীতের তীব্রতা আরো বাড়বে, এমনটায় আভাস মিলছে। এরই মধ্যে শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়েছে সারাদেশ। গতকালও দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে রংপুর অঞ্চলে চলছে মাঝারি ও তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। সঙ্গে রয়েছে, কনকনে শীত আর হিমেল হাওয়া। শীতের তীব্রতার সঙ্গে শৈত্যপ্রবাহের প্রভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরাঞ্চলের জনজীবন। কোনো কোনো দিন সূর্যের দেখা মিললেও অনেকদিন সূর্য থাকে অদৃশ্য। ভোরবেলা উত্তরের আকাশ থাকছে ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন। আর বিকাল হওয়ার আগেই কোথাও কোথাও শীতের দাপটে সূর্যের দেখা মিলছে না। এমন জবুথবু শীতে বাড়ছে রোগ, সঙ্গে আগুন পোহাতে গিয়ে ঘটছে দগ্ধ হওয়ার ঘটনাও। এদিকে আরো দু’একদিন শীতের তীব্রতা চলমান থাকার পূর্বাভাসে শঙ্কিত হয়ে উঠছে শীতার্ত অসহায় ও দরিদ্র মানুষ। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষগুলোর পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র না থাকায় তাদের দুর্ভোগও বেড়েছে কয়েকগুণ। নদী তীরবর্তী ও ছিন্নমূল মানুষরা রয়েছেন চরম ভোগান্তিতে। যেন তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে শীতের প্রভাব পড়েছে। শীতের সকালে ছিন্নমূল আর গ্রামের অনেক মানুষই খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। শীতের পাশাপাশি কুয়াশা বেশি হওয়ায় সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে গাড়ি। এতে দূরপাল্লার পরিবহন চলছে ধীরগতিতে। হরহামেশা ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা।

ভাসমান দোকানদাররা বলছেন, তীব্র শীতের কারণে বেচা-বিক্রি অনেক কমে গেছে। হাড় কাঁপানো শীতে জীবিকার প্রয়োজনে সকাল থেকে দোকান খুলে বসে থাকলেও ক্রেতাদের দেখা মিলছে দুপুরের পর থেকে। আগের মতো বিক্রি না হওয়ায় তেমন লাভ হচ্ছে না। ঠান্ডার কথা বিবেচনা করে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রাখা উচিত। কেননা, গত কয়েকদিন থেকে ঠান্ডায় স্কুল ছাত্রছাত্রীরা সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছে। ড্রেস কোড মেনে বিদ্যালয়ে যাওয়া শিশুদের কষ্ট পেতে হচ্ছে। দেশের হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শীতের কারণে বেড়েছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ নানা রোগের প্রকোপ। গত কয়েকদিনের তুলনায় হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শীতজনিত রোগবালাই বিশেষ করে নিউমোনিয়া, কোল্ড ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্তদের বেশিরভাগই শিশু ও বয়স্ক মানুষ। শিশুরা কোল্ড ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এ ছাড়া শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া রোগেও আক্রান্ত হচ্ছে। তবে এতে আতঙ্কের কিছু নেই। এসব রোগ থেকে শিশুকে রক্ষা করতে গরম কাপড় পরিধান করা জরুরি। মায়েদের খেয়াল রাখতে হবে, কোনোভাবেই যেন বাচ্চাদের শীত না লাগে। তবে বেশি অসুস্থ মনে হলে স্বাস্থ্যকেন্দ্র কিংবা হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

এই শীতে ভাসমান মানুষ সব চেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে। এরা রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্ম, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন অফিস-আদালতের বারান্দা আর ফুটপাতে রাত কাটায়। জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংগঠন থেকে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। এছাড়া নদী বিধৌত চরাঞ্চলে বসবাসকারী হাজার হাজার পরিবার শীতে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের বেশিরভাগ মানুষের কাছে এখনো শীতবস্ত্র পৌঁছায়নি। উত্তরাঞ্চলে ৭ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উঠানামা করছে। ২৮ জানুয়ারির পর তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন শীতের অজুহাতে দাম বেড়েছে শাক-সবজি ও মাছের। সবজি তোলার মতো কৃষি শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। যারা শীত উপেক্ষা করে কাজ করতে চায়, তারা বেশি মজুরি দাবি করেন।

একইভাবে শীতের মধ্যে মাছ তোলা বন্ধ রাখা হয়েছে। সীমিত পরিসরে মানুষ সবজি ও মাছ সংগ্রহ করছে। সেই সঙ্গে কৃষিকাজে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া গেলেও মুজরি বেশি দিতে হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, গত কয়েক দিনের ঠান্ডায় জেলেরা মাছ কম ধরছেন। ফলে বাজারে মাছের সরবরাহ কমেছে, বেড়েছে দাম। তবে ক্রেতারা বলছেন, বাজারে সব জিনিসেরই দাম বেশি। শীত শুধু অজুহাত। মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের খুচরা মাছ বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে স্বাভাবিকই আছে মাছের সরবরাহ। সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষ কেনাকাটা কমিয়ে দিচ্ছে। ফলে ক্রেতার সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। শীতের এই অবস্থা আর কতদিন থাকতে পারে, সে ব্যাপারে আবহাওয়া অফিস এখনো কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্য দেয়নি। এই মুহূতে প্রতিটি মানুষ স্পর্শকাতর অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। শীতার্ত মানুষের প্রতি অধিকতর সহানুভূতিশীল হতে হবে। শুধু সরকার নয়, বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন ছাড়াও বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে হবে। কেননা, সবার আগে মানুষের সুস্থ জীবনের ওপর নজর দিতে হবে। কেননা, মানুষ মানুষের জন্য। জীবন জীবনের জন্য। সব মহল থেকে দরকার সহানুভূতিশীল আচরণ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত