ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ভুয়া ডাক্তারের দৌরাত্ম্য বন্ধ হবে কবে

আফ্রিয়া অলিন
ভুয়া ডাক্তারের দৌরাত্ম্য বন্ধ হবে কবে

আমাদের দেশে ডাক্তারকে অনেক সম্মানের চোখে দেখা হলেও তাদের কিছু অসৎ কর্মকাণ্ডে মানহানি হচ্ছে এই পেশার। ছোটবেলায় সবার স্বপ্ন থাকে ডাক্তার হওয়ার। কিন্তু বর্তমানে এই পেশায় অহরহ প্রতারণার নজির মেলে। মানুষ রোগ মুক্তির আশায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। কেউ যায় সরকারি হাসপাতালে, কেউ বেসরকারি যায় হাসপাতাল বা প্রাইভেট ক্লিনিক বা চেম্বারে। অনেকেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। আবার অনেকেই করে হাতাহাতি করতে দেখা যায়। এতেই অনেকটা নাস্তানাবুদ হতে হয় রোগীকে। সাধারণত ডাক্তারি পেশাকে সম্মানজনক পেশা মনে করা হয়। তবে এই পেশায় রয়েছে বহু প্রতারক। এরা চিকিৎসার নামে দিনে দুপুরে ডাকাতি করছে। লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েও দিতে পারছেন না উপযুক্ত চিকিৎসা। সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে এক বিশিষ্ট চিকিৎসকের কথা। তিনি অপারেশন না করেই পড়ছেন ভোগান্তির মুখে। সুস্থ হওয়া তো দূরের কথা সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেকেই। ভুয়া ডিগ্রিধারী ডাক্তারদের ছড়াছড়ি এখন আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে, বাড়ছে তাদের সীমাহীন দৌরাত্ম্য। বিভিন্ন আইটেমের বাহারি ডিগ্রি ব্যবহার করে চকচকে সাইন বোর্ড সাঁটিয়ে নিরীহ রোগীদের প্রতারিত করে আসছেন তারা। ফলে জীবন। দেশের সাধারণ মানুষ এসব ভুয়া ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে প্রতিনিয়ত প্রতারণার শিকার হচ্ছে। এমনও ডাক্তার আছেন যারা জীবিত মানুষের রিয়েল ডেথ সার্টিফিকেট বানিয়ে দিতে পারেন। আঙুলের অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে মেরে ফেলেছেন এক রোগীকে। এসব কর্মকাণ্ড কখনোই কাম্য নয়। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। প্রতিনিয়ত একটু একটু করে উন্নতির শিখরে পৌঁছাচ্ছে। আধুনিকতা এসেছে চিকিৎসা ব্যবস্থায়ও। কিন্তু প্রতারণার পরিমাণও দিন দিন বেড়েই চলেছে। চিকিৎসাসেবায় চরম অরাজকতা বিরাজ করছে, ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে রোগীদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুয়া ডিগ্রিধারী ডাক্তারদের ভুল চিকিৎসায় রোগীর পরিস্থিতি জটিল হয়েছে, অল্প সময়েই নিভে গেছে অনেকের জীবন প্রদীপ। বছরের পর বছর ধরে ভুয়া ডাক্তারকেন্দ্রিক নানা অরাজকতায় দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হলেও সরকারের দায়িত্বশীল বিএমডিসি, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিএমএসহ ডাক্তারদের পেশাদার সংগঠনগুলো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি ভুয়া ডাক্তারদের নানা দৌরাত্ম্যের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দেওয়া হলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তা অজ্ঞাত কারণে ধামাচাপা দিয়ে রাখেন। জাল সনদ এবং নবায়নহীন লাইসেন্সকে পুঁজি করেই ভুয়ারা রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা সদরে অভিজাত চেম্বার সাজিয়ে অহরহ রোগীদের প্রতারণা করে চলছে। ভুয়াদের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার নজির নেই বললেই চলে। বারে বারে সরকারি অভিযানে ধরা পড়ছে এসব ভুয়া চিকিৎসক। কিন্তু কথা হলো- এরা জায়গা পায় কীভাবে? সরকারি হাসপাতালগুলোতে দেখা যায় রোগীর উপচে পড়া ভিড়। নেই পর্যাপ্ত আসন সংখ্যা। টিকিট কাউন্টার থেকে শুরু করে ডাক্তারের কেবিন পর্যন্ত যেতে হলে ধরতে হবে বিশাল লাইন। এসব লাইনে ধাক্কাধাক্কি থেকে শুরু নিয়েছেন অনেক টাকা। তার ভুল চিকিৎসায় ভুক্তভোগী রোগী হয়েছেন প্রায় মৃত্যু পথযাত্রী। এমনকি ভুক্তভোগী রোগীর পরিবার এর সঙ্গে অভিযুক্ত ডাক্তার। দুব্যর্বহার করেছেন সম্প্রতি বিভিন্ন হাসপাতাল ক্লিনিকে ভুয়া ডাক্তার ধরা পড়েছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। তারা নীলক্ষেত থেকে ভুয়া অ্যাফরন, আইডি কার্ড বানিয়ে দিব্যি ডাক্তার সেজে চিকিৎসা দিয়েছেন, তাদের অপচিকিৎসায় ক্ষতি হয়েছে অনেক রোগীর। কিন্তু প্রশ্ন হলো- যেসব দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ এদের নিয়োগ দেন তারাই বা কীভাবে নিয়োগ দেন, সেটা কেউই জিজ্ঞেস করেন না। সনদপত্র না দেখে এদের নিয়োগ দেয়া আদৌ কি বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন-২০১০-এর ২৮ (৩) ও ২৯(২) ধারায় ভুয়া চিকিৎসকদের সাজা ৩ বছরের বিধান রয়েছে। এই সাজার পরিমাণ আরো বাড়ানো উচিত। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ডাক্তারদের ভূমিকা অপরিসীম। কিন্তু বর্তমানে অনেক ভুয়া ডাক্তার নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতিনিয়ত প্রতারণা করছে। শুধু তাই নয়, দেশের সাধারণ মানুষ এসব ভুয়া ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে প্রতিনিয়ত প্রতারণার শিকার হচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত