ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রিয় সন্তান নিয়ে আত্মহনন

চাই রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক পর্যায়ের প্রতিরোধ
প্রিয় সন্তান নিয়ে আত্মহনন

আমাদের সমাজে দিন দিন আত্মহননের ঘটনা বাড়ছে। কিন্তু মানুষে কেন আত্মহননের পথ বেছে নেয়, সেই প্রশ্ন আবার নতুন করে উঠে আসছে। আত্মহননের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক পর্যায়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এই অভিশাপ দূর করতে না পারলে আগামী দিনে আত্মহননের ঘটনা বাড়তে থাকবে। কারণে-অকারণে মানুষ আত্মহননের পথ বেছে নেবে। মানুষ হঠাৎ করে আত্মহননের পথ কেন বেছে নেয়, সে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। মানুষ তার প্রত্যাহিক জীবনের সমস্যাগুলো যখন সমাধান করতে পারে না। তার নিজস্ব শক্তি সামর্থ্যে সে যখন কোনো সংকট মোকাবিলা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়, তখন সে তার নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস হারায়। আমি ব্যর্থ এই বক্তব্যের ওপর যখন তার মনোযোগ আটকে যায়, তখন তার জীবনে ‘আমিও পারি’ বাক্যটি অবলোকন হয়ে যায়। একজন বাবা কিংবা একজন মা যখন আত্মহননের পথ বেছে নেয়, তখন সে কেন তার সন্তানকে তার সহযাত্রী করে- সেটাও বোধগম্য নয়। নিজের মৃত্যুর পথযাত্রী হিসেবে সন্তানকে বেছে নেয়ার প্রবণতা কেন বাড়ছে, তার কারণও অনুসন্ধান করতে হবে। যে সন্তানটি বাবা কিংবা মায়ের আত্মহননের সঙ্গে সঙ্গী হলো, সে তো মানসিকভাবে অসুস্থ ছিল না। একটা সন্তানের কি মূল্য, যার সন্তান নেই সেই বুঝতে পারবে। বাবা-মায়ের ওপর সন্তানরা সবচেয়ে নির্ভর করে। বাবা-মা তাকে নিয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেবে, সন্তানরা তা কোনোদিন ভাবতেও পারে না।

গত শনিবার খুলনায় সন্তান নিয়ে মা ও কুষ্টিয়ায় সন্তান নিয়ে পিতার আত্মহত্যার ঘটনা বিবেককে নাড়া দেয়। কষ্ট হয় ঘটনার শিকার নিষ্পাপ সন্তানের জন্য। কেন তাদের এ অপরিণত বয়সে দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হলো। যাদের মাধ্যমে তারা দুনিয়ায় এলো, তাদের মাধ্যমেই তাদের দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার ঘটনা ভাবতেও কষ্ট হয়। গণমাধ্যমের খবরে এসেছে, খুলনার ডুমুরিয়ায় মা তার দুই শিশু সন্তানকে হত্যা করে নিজে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। সকালে ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া ইউনিয়নের কমলপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- উপজেলার কমলাপুর গ্রামের আব্দুল মান্নান সরদারের স্ত্রী ডলি বেগম তার মেয়ে ফাতেমা ও শিশুপুত্র ওমর। এলাকাবাসীর ধারণা, পারিবারিক কারণে সকালে শাশুড়ির সঙ্গে ডলি বেগমের সামান্য ঝগড়া হয়েছিল। হয়তো তার কারণে এ ঘটনা ঘটতে পারে। তবে আত্মহত্যার আগে তিনি তার দুই শিশু সন্তানকে হত্যা করেন। এদিকে কুষ্টিয়া শহরের একটি বাসা থেকে বাবা-ছেলের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ছেলেকে হত্যা করে নিজে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বাবা। গত শনিবার দুপুরে জেলা শহরের মঙ্গলবাড়িয়া এলাকার ভাড়া বাসা থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ছেলেকে হত্যার পর বাবা আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। কাকতালীয়ভাবে একই দিন একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের জরিপে দেখা গেছে, গত বছর দেশে মোট ৫১৩ শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। এর মধ্যে স্কুল শিক্ষার্থী ২২৭, কলেজ শিক্ষার্থী ১৪০, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ৯৮ ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থী রয়েছেন ৪৮ জন। আত্মহত্যার সবচেয়ে বড় কারণ ছিল অভিমান ও প্রেমঘটিত সমস্যা। এর আগে ২০২২ সালে আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থী ছিল ৫৩২ জন। ২০২৩ সালে কিছুটা কমলেও ততটা আশানুরূপ নয়। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ঢাকায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও বেড়ে ওঠার সহায়ক পরিবেশ না থাকায় এখানে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি। আত্মহত্যার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি নারী শিক্ষার্থী। ৫১৩ শিক্ষার্থীর ৬০ দশমিক ২ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী গত ১ বছরে আত্মহত্যা করেছে। ২০২৩ সালে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল, অভিমান এরপরেই প্রেমঘটিত ও মানসিক সমস্যায় জর্জরিত হওয়া। বয়ঃসন্ধিকালে নানা ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। আবার এই সময়টাতে বেশি রাগ-অভিমান করার প্রবণতাও লক্ষ্য করা যায়। তথ্যানুসারে ২০২১ সালে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার সংখ্যা ছিল ১০১ জন ও ২০২২ সালে দেশে আত্মহত্যাকারী স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ৫৩২ জন। আমাদের পাঠ্যপুস্তকে আত্মহননের সামাজিক কুফল সম্পর্কে কোনো একটি অধ্যায় যোগ করা যায় কি না কিংবা শুধু শিক্ষার্থীদের জন্য এমন হাসপাতাল গড়ে তুলতে হবে, যেখানে শুধু শিক্ষার্থীদের মানসিক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দূর করার উপায় সম্পর্কে তাদের সচেতন করার কাজ যত্নের সঙ্গে করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত