ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দ্বাদশ সংসদ হোক প্রাণবন্ত

স্বতন্ত্র এমপিদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা গুরুত্ববহ
দ্বাদশ সংসদ হোক প্রাণবন্ত

দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হচ্ছে আজ। আগামী ৫ বছর এই সংসদ অব্যাহত থাকবে। সংসদ সদস্যগণ জাতির কল্যাণে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করবেন। সংসদে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে এবং প্রাণবন্ত হবে, সেটাই সবার কামনা। যেহেতু এবারের সংসদে বিএনপির কোনো সংসদ সদস্য নেই, সে কারণে বিরোধী দলের আসনে বসছে জাতীয় পাটি। আর এ দলটির সদস্য সংখ্যা ১১ জন। সংখ্যাগত দিক দিয়ে কম হলেও তারা যদি সংসদে সক্রীয় থাকেন, তাহলে তারা তাদের বিভিন্ন যুক্তিতর্ক তুলে ধরে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্যদের চাপের মুখে রাখতে পারবেন। সেই সঙ্গে সংসদও প্রাণবন্ত হবে। তবে এবারের সংসদে ৬২ জন স্বতন্ত্র সদস্য রয়েছেন। এতো বিপুলসংখ্যক স্বতন্ত্র এমপি এর আগে হয়তো কোনো সংসদে ছিল না। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় তারাও সংসদকে কার্যকর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। তারা কীভাবে দায়িত্ব পালন করবেন, সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী তাদের উদ্দেশ্যে একটি নির্দেশনামূলক বক্তব্য দিয়েছেন। গত রোববার রাতে তিনি স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের সঙ্গে এক বৈঠকে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে তাদের ভূমিকা নিয়ে এই নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন। তার এই বক্তব্য ছিল যথেষ্ঠ অর্থবহ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করে সংসদকে অর্থবহ করার জন্য স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, সংসদকে অর্থবহ করুন। আপনারা সরকারের সমালোচনা করতে পারেন। তাতে আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না। তবে আপনাদের একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে যে, আপনাদের কাজটা হতে হবে, দেশ ও জনগণের কল্যাণের জন্য। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসন পেয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। এছাড়া জাতীয় পার্টি ১১টি এবং ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও কল্যাণ পার্টি একটি করে আসনে জয়লাভ করেছে। এর বাইরে এবার ৬২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে জিতেছেন। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের সংসদে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ক্ষমতাসীন দলের বাইরে যারা থাকেন, তাদের যেকোনো বিলের ওপরই কথা বলার সুযোগ থাকে। কাজেই সংসদকে অর্থবহ করা এবং গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে। তিনি বলেছেন, চক্রান্ত আছে, চক্রান্ত চলবে। জিয়াউর রহমান, জেনারেল এরশাদ কিংবা খালেদা জিয়ার আমলে দেশের অগ্রগতি হয়নি। ’৯৬ থেকে ২০০১ আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে, তখনই মানুষ প্রথম উপলদ্ধি করে যে, সরকার জনগণের সেবক, জনগণের জন্য কাজ করে। তার সরকারের লক্ষ্য ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা। আর এই ডিজিটাল বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর করে, উন্নয়নটা টেকসই করাই হচ্ছে এখনকার লক্ষ্য।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাই আপনারা নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে মানুষের কাছে যা যা ওয়াদা দিয়ে এসেছেন, সেগুলো আপনাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে সেখানেও আপনাদের মিতব্যয়ী হতে হবে, আর স্বচ্ছতা থাকতে হবে। প্রকল্প বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও যেটা আমাদের দেশের জন্য অর্থবহ সে ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। আর সংসদে আপনারা আপনাদের ভূমিকা নেবেন। আপনারা সংসদে বসবেন এবং আপনাদের যে দায়িত্ব সেটা পালন করবেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, চক্রান্ত আমাদের বিরুদ্ধে শেষ হয়ে যায়নি। কারণ বাংলাদেশ যতটা সামনের দিকে এগিয়ে যাবে, বাংলাদেশ যতটা উন্নত হবে, যারা আমাদের স্বাধীনতাবিরোধী ছিল তারা; কিন্তু এটা মেনে নিতে পারে না। এ সম্পর্কে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের উক্তি ‘বাংলাদেশের অভ্যুদয় আমার ব্যক্তিগত পরাজয়’ কিংবা তার অপর উক্তি ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে একটি তলাবিহীন ঝুড়ি হবে’ এর উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজকে আল্লাহর রহমতে বাংলাদেশকে আর কেউ ‘বটমলেস বাস্কেট’ বলতে পারে না। দেশে আমরা দারিদ্র্যের হার ৪১ ভাগ থেকে ১৮ ভাগে নামিয়ে এনেছি। আর তাদের দেশে দারিদ্র্য হলো ১৭ ভাগ। যদিও আমার লক্ষ্য ছিল আরো দুইভাগ কমানো; কিন্তু কোভিড-১৯ আসাতে আমরা থমকে গেলাম। তবে, ভবিষ্যতে এটা করতে হবে। ওদের থেকে এক শতাংশ হলেও আমাদের কমাতে হবে। তিনি কারো এলাকায় ভূমিহীন-গৃহহীন থাকলে তার তালিকা দিতে বলেন, যাতে সরকার তাদের পুনর্বাসন করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতিকে আমি প্রশ্রয় দেব না। মিলিটারি ডিক্টেটররা দীর্ঘদিন দেশ শাসন করার ফলে রন্ধ্রে রন্ধ্রে এটা ঢুকে গেছে। সেখান থেকে বের করে আনা এক কঠিন কাজ। তারপরেও ধীরে ধীরে মানুষকে বুঝিয়ে বুঝিয়ে সে জায়গায় আনতে হবে। তার সরকার দুর্নীতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে বলে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুসহ অনেকগুলো মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পেরেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য যতটা সহজে রপ্ত করতে পারবে, ততই দেশের জন্য তা কল্যাণকর হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত