প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৪
সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি (ভাইস চ্যান্সেলর) হিসেবে যোগদান করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম। বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর (মহামান্য রাষ্ট্রপতি) কর্তৃক তিনি নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার পর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে লেখা এবং প্রচার করা হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পেলেন নারী ভিসি অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম। কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম বলেছেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী ভিসি অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম। তাহলে প্রশ্ন থেকে যায় তিনি কি নারী কোটায় ভিসি হলেন? নাকি নারীদের ভিসি হতে দেশের বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন আইনে বিধিনিষেধ রয়েছে? আমার জানা মতে, চাকরির ক্ষেত্রে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে নারীদের জন্য কোটাব্যবস্থা চালু রয়েছে। বাংলাদেশের মহান জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন রয়েছে; কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য কোনো কোটা বা সংরক্ষিত পদের ব্যবস্থা নেই। ভিসি হিসেবে নিয়োগ লাভের জন্য নারী-পুরুষ বিবেচনা করা হয় বলে প্রতীয়মান হয়েছে কখনো মনে হয়নি। এখানে নিয়োগের আগে দক্ষতা, যোগ্যতা, সততা, আদর্শিক বিশ্বস্ততা এবং সর্বোপরি দেশের ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রেখে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে নিয়ে আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কারিগর হিসেবে একাডেমিক এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা সচল রেখে বিশ্বমানের গবেষণা, শিক্ষা অব্যাহত রাখতে পারবেন বলে যাকে মনে করা হয়, তাকেই ভিসি হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। ভিসি নিয়োগের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ, বিশ্ববিদ্যালয় কিম্বা অঞ্চলকে প্রাধান্য দেওয়া হয় না। একজন ভিসি শুধুমাত্র তার যোগদানকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব করেন না, তিনি দেশের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি হলেন আয়নার মতো তার দিকে তাকিয়ে তার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে একটা প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগদানকৃত ভিসি অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিমকে নিয়োগ দানের আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিশ্চিতভাবেই এগুলো পর্যবেক্ষণ করেছেন। পুরুষশাসিত সমাজ বা রাষ্ট্র ব্যবস্থায় একজন নারী যখন কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ লাভ করেন বা আসীন হন, তখন বুঝতে হবে তিনি তার যোগ্যতা দিয়েই এ আসেন আসীন হয়েছেন। ঢাকার প্রাণকেন্দ্র এবং দেড়শত বছরের একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যেটাকে বলা হয় আন্দোলন সংগ্রামের আতুরঘর, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রয়েছে অসামান্য অবদান। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদধূলি পড়েছে যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নারীর সুবিধা নিয়ে নিয়োগ লাভ করেননি- এটা বলতে বা বুঝতে গবেষণার প্রয়োজন হবে না। একজন ড. সাদেকা হালিম একদিনে প্রস্তুত হননি। তিনি উড়ে এসে জুড়ে বসা নারী নন। শিক্ষার্থী হিসেবে চোখ ধাঁধানো ফলাফল নিয়ে বিদেশ থেকে একাধিক ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচিত ডিন, শিক্ষক সমিতির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি নিজ যোগ্যতা এবং দক্ষতা দিয়ে তথ্য কমিশনার হিসেবে কাজ করেছেন। শিক্ষার্থীবান্ধব অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম নারী অধিকার নিয়ে সবসময় সোচ্চার থেকেছেন।
এত কিছু সামলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে গবেষণাকার্য চালিয়ে যাচ্ছেন। দেশ-বিদেশের নামকরা জার্নালে নিয়মিত তার গবেষণা প্রবন্ধ ছাপা হচ্ছে। তিনি নারী হিসেবে নিজেকে অনেক আগেই ছাড়িয়ে গেছেন। তিনি এখন নিজ নামে নিজ কর্মের মাধ্যমে নিজেই একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছেন। তিনি শুধু দেশের নারীদের নয়, নারী-পুরুষ সবার আইকনে পরিণত হয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিজেকে নিয়ে গিয়েছেন এক অনন্য উচ্চতায় তাইতো তিনি সরাসরি রাজনৈতিক নেতা বা কর্মী না হয়েও বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মনোনীত হয়েছেন। অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম নারী ভিসি হিসেবে নয়, ভিসি হিসেবে যোগদান করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে।
অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম এর নারী পরিচয় অনেক আগেই শেষ হয়েছে বলে মনে করা হয়। এখন তিনি একজন গবেষক, শিক্ষাবিদ, সমাজের ও রাষ্ট্রের আইকনিক মানুষে পরিণত হয়েছেন। তিনি নারীদের মতো ঘরকুনো না থেকে সকাল থেকে রাত অবধি কাজ করে চলেছেন- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করার জন্য। সাজানো, পরিপাটি এবং গোছাল দৃষ্টিনন্দন একটি ক্যাম্পাস বিনির্মাণে এগিয়ে যাচ্ছেন দীপ্ত পায়ে। তাই বলব, নারী ভিসি নয়, ভিসি হিসেবে তিনি থাকবেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হৃদয়ে।
