ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চার নিত্যপণ্যের শুল্ক কমানোর নির্দেশ

রোজার আগেই বাস্তবায়ন হোক প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায়
চার নিত্যপণ্যের শুল্ক কমানোর নির্দেশ

পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে চারটি নিত্যপণ্য- চাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও খেজুরের ওপর শুল্ক হ্রাস করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত সোমবার বিকালে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশসহ মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, এই চার পণ্যের ওপর শুল্ক কমানোর জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে, এসব পণ্যে শুল্ক কী পরিমাণ কমানো হবে, তা এনবিআর এখন ঠিক করবে। এরআগে চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়ে গোপালগঞ্জে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় নিজ বাসভবনে মন্ত্রীদের সঙ্গে এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। ওই বৈঠকেও পবিত্র রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের নির্দেশ দেন তিনি। তখন তিনি বলেছিলেন ‘পবিত্র রমজান ঘনিয়ে আসছে, তাই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন। কারণ, এই মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ানো উচিত নয়।’ বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন সাংবাদিকদের ব্রিফ করার সময় বলেন, প্রধানমন্ত্রী রমজানের সময়, বিশেষ করে বড় মজুতদারেরা যাতে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির জন্য জরুরি পণ্য মজুত করতে না পারেন, এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য মন্ত্রীদের নির্দেশ দিয়েছেন। মন্ত্রীদের নিয়মিত মজুতবিরোধী অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী তখন বলেন, ‘প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখুন, যাতে সাধারণ মানুষ স্বস্তিতে থাকতে পারেন। এদিকে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এএএইচএম সফিকুজ্জামান বলেছেন, ইঁদুর মেরে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। যেসব ব্যবসায়ী বাজার ব্যবস্থাকে বিপন্ন করে ফায়দা লোটার জন্য পণ্য মজুত করেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রমজান উপলক্ষ্যে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে গত সোমবার ঝালকাঠি জেলার বিভিন্ন শ্রেণির ব্যবসায়ী এবং সংশ্লিষ্ট সব অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন। মহাপরিচালক বিভিন্ন বিষয়ের উদাহরণ দিয়ে বলেন, গুজব ছড়িয়ে ও বিভিন্ন ইস্যু সৃষ্টি করে বাজারে পণ্যের দাম রাতারাতি বাড়িয়ে দিয়ে সুযোগ নেয় একশ্রেণির বড় ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। কিন্তু উৎপাদনকারী কৃষক তার ন্যায্যমূল্য পায় না। বর্তমানে বাংলাদেশে খাদ্যে মূল্যস্ফীতির পরিমাণ সাড়ে ১২ শতাংশ। সফিকুজ্জামান বলেন, ব্যবসায়ীরা আমাদের প্রতিপক্ষ নন, ব্যবসায়ীদের মধ্যে বড় একটি অংশ সততার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করলেও একশ্রেণির ব্যবসায়ী আঙুল ফুলে কলা গাছ হচ্ছে। তারা মজুত করে বাজার ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিচ্ছে। নির্বাচনকালীন ১ মাসের মধ্যে কিছু ব্যবসায়ী জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে সুযোগ নিয়েছে। এদিকে রমজানের আগেই অস্থির হয়ে উঠেছে নিত্যপণ্যের বাজার। পর্যাপ্ত মজুত থাকার পরও বাড়তে শুরু করেছে ছোলা, ডাল, চিনির দাম। এতে বিপাকে পড়েছেন ভোক্তারা। এমন পরিস্থিতে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদেক্ষেপ নেয়ার তাগিদ দেয়ার কোনো বিকল্প নেই। বাজারে অস্থিরতা রোধে একসঙ্গে অনেক পণ্য না কেনার পরামর্শ দিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। রোজা শুরু হতে এখনো প্রায় দেড় মাস সময় বাকি। কিন্তু এরই মধ্যে খজুর, ছোলা, ডাল ও চিনির পাশাপাশি বেড়েছে মাংস ও ডিমের দামও। সরকারি সংস্থা টিসিবির হিসাবে, গত এক সপ্তাহে ছোলার দাম বেড়েছে সাড়ে পাঁচ ভাগ। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ ভাগ বেশি। সব পণ্যের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে বলে দাবি ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেছেন ‘বাজারে ডিমান্ডের চেয়ে সাপ্লাই কম এবং সে কারণে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেয়। বাস্তবতা হচ্ছে রমজানের প্রথম দিকে হঠাৎ করে দামটা বেড়ে যায় এবং ৮ বা ১০ রমজানের পরে দামটা আবার কমতে শুরু করে। অথচ আমাদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষ মনে করেন রমজানের আগে কেনাকাটা শেষ করে রমজান মাসটি নামাজ রোজা নিয়ে ব্যস্ত থাকব। অথচ দেখা যায়, রমজান মাসে মানুষের কাজকর্ম আরো বেড়ে যায়। যাই হোক প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা অনুসারে রোজার আগেই তার অভিপ্রায়ের সফল বাস্তবায়ন হোক- সেই প্রত্যাশা সবার।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত