ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাঙালির চেতনার ধারক বইমেলা

লেখক, প্রকাশক ও পাঠকের যেন মিলনমেলা
বাঙালির চেতনার ধারক বইমেলা

আবার শুরু হলো অমর একুশের বইমেলা। বইমেলা কেবল বই বেচা- কেনারই স্থান নয়, বইমেলাকে কেন্দ্র করে লেখক প্রকাশক ও পাঠকদের আনাগোনায় মুখরিত হয়ে ওঠে বাংলা একাডেমি চত্বর। মেলার পরিধির প্রসারতা ঘটায় তা এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করেছে। লেখক প্রকাশক ও বইপ্রেমীরা এই মাসটির জন্য সারা বছর অপেক্ষায় থাকে। বইমেলাকে কেন্দ্র করে এই একটি মাস ওই এলাকা মুখরিত হবে। কেবল বই-ই নয় নানা রকমের প্রসার নিয়ে দোকানিরা বসেছে ফুটপাতজুড়ে। থাকছে হরেক রকম খাবারের দোকান। বই কিনে বাড়ি যাওয়ার আগে কিছু একটা খাওয়ার মধ্যে রয়েছে অন্যরকম অনুভূতি। বাঙালি জাতির অন্যতম একটি সত্তার নাম একুশে বইমেলা। ভাষা সংগ্রাম থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রাম বুকে ধারণ করা বাঙালির- বইমেলা যেন একটুকরো সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি। লেখক-পাঠক-প্রকাশক, বইপোকা হোক বা না হোক সবাই যেন একবারের জন্য হলেও ছুটে যায় বইয়ের গন্ধ নিতে। প্রাণের স্পন্দন উপলব্ধি করতে বইমেলায় ছুটে যায় মানুষ। অমর একুশে বইমেলা লেখক পাঠকদের সবচেয়ে বড় মিলনমেলা। সারা বছর এই একটি মাসের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে লেখক ও পাঠক। বইমেলায় প্রতি বছর অসংখ্য নতুন বই আসে। মেলার দিন যত শেষ হয়ে আসতে থাকবে বইমেলায় পাঠকের ভিড় ততই বাড়তে থাকে। বাংলা সাহিত্যকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় অগ্রগণ্য ভূমিকা রাখছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। পাঠকের নজর কাড়বে বইয়ের সৃজনশীলতায়। এমনই সৃজনশীল বইয়ের লেখক যেমন বাড়ছে, বাড়ছে প্রকাশকও। লেখক, প্রকাশক বাড়ার উৎস হলো একটাই, বইমেলা। আর পাঠক সেই উৎসের মূল কেন্দ্রবিন্দু। এই কেন্দ্রবিন্দু মানে এই পাঠকের জন্যই একজন লেখক দিনরাত পরিশ্রম করে একটি বই লিখেন। যে বইটি পাঠক পড়ে লেখকের সেই পরিশ্রমটাকে সুন্দর ও পবিত্র করে তুলে। এই জন্যই পাঠকেরও উচিত বইমেলায় আসা, লেখকের প্রতি সম্মান রেখে তার বইটি কিনে পড়া এবং গঠনমূলক আলোচনা করা। সাহিত্যের শক্তিমত্তার প্রাবল্য যে কতখানি, তা উপলব্ধি করা যায় অমর একুশে বইমেলা এলেই। তরুণ প্রজন্মই একদিন প্রমাণ করবে সাহিত্যের শক্তি ধ্রুব, ক্ষয় নেই এই শক্তির। অমর একুশে বইমেলাকে কেন্দ্র করে মাসব্যাপী লেখক-পাঠকের মিলনমেলা সাহিত্যপ্রেমীদের আত্মতৃপ্তি দেয়। শিক্ষার অন্যতম আলোকবর্তিকা হচ্ছে বই। বইমেলা সকল জ্ঞানপিপাসুদের মিলনমেলা। আত্ম উন্নয়নমূলক বইয়ের প্রচার এবং প্রসারেই সম্ভব তরুণ প্রজন্মের মাঝে নিজের উন্নয়নের বীজ বুনে দেয়া। আমাদের শারীরিক সুস্থতা যেমন প্রয়োজন, মানসিক সুস্থতাও তেমনি প্রয়োজন। এই বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করেই বইমেলায় বই প্রকাশের আমার ক্ষুদ্র প্রয়াস। বইমেলা এখন বাঙালি জাতির একটা উৎসব। সারা বছর শুধু বই প্রেমীরাই নয়, পুরো বাংলাদেশ অপেক্ষা করে এই প্রাণের মেলার। পহেলা ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমি চত্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারের বইমেলার উদ্বোধন করেন। সে অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে বৈশ্বিক মঞ্চে পৌঁছে দিতে বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদকৃত বই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তিনি বইগুলোর ডিজিটাল প্রকাশের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এরফলে আমাদের বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে শুধু দেশের অভ্যন্তরে নয়, বিশ্ব মঞ্চেও দ্রুত পৌঁছে দিতে পারব। এখনকার যুগ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ, ‘এই যুগে সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিশ্বায়নের ওপর জোর দিতে হবে। সেটা থাকলে অনেকের সুবিধা, শোনার মাধ্যমে জানতে পারবে। সেই ব্যবস্থাটাও আমাদের নেওয়া উচিত। ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার অনুষঙ্গ হিসেবে ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি সবকিছুই আমাদের সেখানে নিয়ে যেতে হবে। বাঙালি, বাংলাদেশ, বাংলা ভাষা, বাংলা সাহিত্য ও বাংলা সংস্কৃতি যাতে বিশ্বের দরবারে বিস্তার লাভ করতে পারে আমাদে সেই উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আগামীতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যারা সাহিত্য চর্চা করেন সেইসব সাহিত্যিক নিয়ে এসে আরো বর্ণাঢ্য সাহিত্য মেলা করার ঘোষণাও দেন প্রধানমন্ত্রী। রক্তের অক্ষরে আমরা যে মাতৃভাষার অধিকার আদায় করেছি সেটা বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। এজন্য আমরা গৌরব বোধ করতে পারি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত