ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিশ্ব ক্যান্সার দিবস

ক্যান্সার নিয়ে আতঙ্ক নয় প্রতিরোধে চাই সচেতনতা

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি। পরিবেশ ও স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক, সবুজ আন্দোলন।
ক্যান্সার নিয়ে আতঙ্ক নয় প্রতিরোধে চাই সচেতনতা

মরণঘাতক ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে প্রতিবছরের মতো আজ প্রতি বছরের মতো পালিত হচ্ছে ২৪তম বিশ্ব ক্যান্সার দিবস ২০২৪। এই ঘাতক ব্যাধির প্রতিকারে ব্যবস্থা নিতে সরকার ও ব্যক্তি বিশেষের ওপর তাগিদ দিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হবে। আর আমাদের মধ্যে অধিকাংশই কোনো না কোনোভাবে ক্যান্সারের সম্মুখীন হয়েছে; অর্থাৎ আমাদের পরিচিত কেউ না কেউ আছেনই যিনি কি না ক্যান্সারে আক্রান্ত বা পূর্বে আক্রান্ত ছিল। ২০০০ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড সামিটে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র প্রতিনিধি সম্মিলিতভাবে ৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ক্যান্সার দিবস হিসেবে পালনের ঘোষণা দেন। কিন্তু বিশ্ব ক্যান্সার দিবসের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো মানুষদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা, ক্যান্সারের ভিন্নতাকে বোঝা এবং সেই সাথে বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রকে এই সমস্যাটি সম্পর্কে অবগত করা। ক্যান্সার কতটা সন্নিকটে? ১৯৯০ সাল থেকে করা পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি বছরে নতুন ৮.১ মিলিয়ন ক্যান্সারে আক্রান্তের তথ্য পাওয়া যায়। ২০১৮ সাল নাগাদ বছরে ১৮.১ মিলিয়ন নতুন রোগীর তথ্য পাওয়া যায়।

এটি এমন একটি রোগ, যার কারণে প্রতিবছর প্রায় ৯ দশমিক ৬ মিলিয়ন মানুষ মারা যাচ্ছে এবং এর মধ্যে প্রায় ৭০ ভাগই আমাদের মতো দেশের মানুষ। এর পেছনে বহু কারণ থাকতে পারে। অংশগ্রহণকারী ক্যান্সার বিশেষজ্ঞগণ খাদ্যাভ্যাস থেকে শুরু করে ধূমপান বা মদ্যপান কিংবা ব্যায়ামের অভাবেও এ ধরনের রোগের ঝুঁকি বাড়ে। এমনকি শুধু তামাকই সারা পৃথিবীতে ২২ শতাংশ মানুষের মৃত্যুর কারণ। এছাড়া আমাদের দেশের প্রায় ২৬ শতাংশ মানুষ চিকিৎসার সুব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত। আমাদের দেশেও ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বর্তমানে এটি ২০ লাখের বেশি। ক্যান্সার আক্রান্তদের মধ্যে ৩০ বছর থেকে ৬৯ বছর বয়সি শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ রোগীর অকাল মৃত্যু হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ক্যান্সার আক্রান্তদের অকাল মৃত্যুরোধে দ্রুত রোগ শনাক্ত ও চিকিৎসা শুরুর উপর গুরত্বারোপ করেছে। ২০৫০ সালের মধ্যে নতুন করে ক্যান্সার আক্রান্তের হার ৭৭ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে পূর্বাভাস জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার (আইএআরসি)। গত বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে আইএআরসি এই পূর্বাভাস দিয়েছে বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আইএআরসি জানায়, ২০২২ সালে আনুমানিক ২০ মিলিয়ন নতুন ক্যান্সারের ঘটনা ঘটেছে। ২০৫০ সালের মধ্যে ৩৫ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ নতুন করে ক্যান্সার আক্রান্ত হবে বলে অনুমান করা হয়েছে। মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সাথে সাথে তামাক ও অ্যালকোহল আসক্তিতা বৃদ্ধি এবং ক্রমবর্ধমান বায়ু দূষণ ক্যান্সার ঝুঁকি বাড়ার মূল কারণ বলে উল্লেখ করেছে আইএআরসি। আমাদের দেশে তামাকজনিত ক্যান্সারগুলোতে পুরুষরা বেশি আক্রান্ত হয়। এছাড়া খাদ্যনালি ও কোলন ক্যান্সারেও পুরুষরা বেশি আক্রান্ত হয়। প্রোস্টেট ক্যান্সার তুলনামূলকভাবে কম হয়।

আর নারীদের ক্ষেত্রে স্তন ক্যান্সার, জরায়ু মুখের ক্যান্সার, খাদ্যনালি, কোলন ক্যান্সার, ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। তবে আজকাল নারীদের ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাও বাড়ছে। আর নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই নাক-কান-গলার ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হার বেড়ে চলেছে। প্রচলিত ক্যান্সারসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় যথাক্রমে ফুসফুস, স্তন ও অন্ত্রের ক্যান্সার। বৈশ্বিকভাবে এই বিষয়কে গুরুত্বের সাথে যদি এখনই না নেওয়া হয় তবে ধারণা করা যায় যে, ২০৩০ সাল নাগাদ বছরে ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর সংখ্যা ১৩.১ মিলিয়নে দাঁড়াবে। যদিও বর্তমানে মানুষের মধ্যে পাওয়া ক্যান্সারের ৪০ শতাংশেরও বেশি নিরাময়যোগ্য এবং আক্রান্ত রোগীর বেঁচে যাওয়ার সংখ্যাও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বিগত দশক ধরে ক্যান্সার নিয়ে পড়াশোনা এবং একে বোঝার ফলস্বরূপ সম্ভবত এই উন্নতি সম্ভব হয়েছে যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নতুন সম্ভাবনারও জন্ম দিয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত