গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলার আশঙ্কা

নৈরাজ্য মোকাবিলায় দলকেও এগিয়ে আসতে হবে

প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর ঢাকাসহ সারা দেশে হরতাল-অবরোধের নামে বাসে-ট্রেনে ধারাবাহিকভাবে আগুন ও ভাঙচুরের ঘটনা সামাল দিতে না দিতে নতুন করে আশঙ্কার একটি খবর গণমাধ্যমে এসেছে। এ ব্যাপারে পুলিশকে সতর্ক থাকতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠি দেয়ার পাশাপাশি ট্রেন, বিদ্যুকেন্দ্র ও টিভি স্টেশনে নিরাপত্তা বাড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে স্বাভাবিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটানোরও হুমকি দেয়া হয়েছিল। এমনকি সরকার পরিচালনায় বাধা সৃষ্টি করার মতো ঘটনা ঘটতে পারে এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করা হয়। গুরুত্বপূূর্ণ স্থাপনায় হামলার আশঙ্কা ব্যক্ত করার পর মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বেড়েছে। একটি জাতীয় দৈনিকের খবরে বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আশঙ্কা করছে, ট্রেন, বিদ্যুকেন্দ্র, টিভি স্টেশনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা আক্রান্ত হতে পারে। পাশাপাশি রয়েছে জঙ্গি হামলার আশঙ্কাও। এ কারণে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার ও বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতা বাড়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে দেশের সব মেট্রোপলিটন পুলিশ, হাইওয়ে, রেলওয়ে ও রেঞ্জ ডিআইজিসহ ইউনিটগুলোকে চিঠি দিয়ে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি (গোপনীয়) এএফএম আনজুমান কালামের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে সড়ক পথে যাতায়াতের পাশাপাশি জনসাধারণের রেলপথে ভ্রমণ বা যাতায়াতের প্রবণতা বাড়ছে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে দুষ্কৃতকারীরা রেলস্টেশন ও ট্রেনে অগ্নিকাণ্ড বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে পারে, এমন আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা তথা কেপিআইসহ বিদ্যুৎকেন্দ্র, টিভি সেন্টার ও জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে নাশকতার আশঙ্কা রয়েছে। এসব স্থাপনায় জঙ্গি হামলার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে নিরাপত্তা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরো তৎপর হওয়া প্রয়োজন।’ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গত নভেম্বর মাস থেকেই সারা দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়। তারপরও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে দুর্বৃত্তরা ধারাবাহিকভাবে বাস ও ট্রেনে অগ্নিসংযোগ করে। নির্বাচনের দুই দিন আগেও রাজধানীতে ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুড়ে মারা যান চার যাত্রী। নির্বাচনের পর বাস ও ট্রেনে নাশকতা ও সহিংসতার ঘটনা আর ঘটেনি। তবে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো আবারও আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফলে আশঙ্কা করা হচ্ছে আন্দোলনের নামে আবারও ভাঙচুর ও আগুনের ঘটনা ঘটতে পারে। বাংলাদেশ রেলওয়ে পুলিশ সূত্র জানায়, গত ২৫ জানুয়ারি ডিআইজি মো. মাহবুবুর রহমান ভুঁইয়া চট্টগ্রাম রেলওয়ে জেলা পরিদর্শন করেন। তিনি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে রেলপথে নাশকতা প্রতিহত করার লক্ষ্যে একনিষ্ঠভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য নির্দেশ দেন।

মাহবুবুর রহমান ভুঁইয়া বলেন, ‘আমরা সব স্টেকহোল্ডার নিয়ে বসেছি। দফায় দফায় মিটিং করেছি। গত নভেম্বর মাস থেকেই এটা শুরু হয়। তারপর দফায় দফায় মোডিফাই করি। রেলের নিরাপত্তায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। সেই নিরাপত্তা ব্যবস্থাই অব্যাহত আছে।’ পুলিশ সদর দপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচন বর্জন করা দলগুলোরও সহিংস তৎপরতা নেই। ফলে মাঠ পুলিশের মধ্যে ঢিলেমি আসতে পারে। এই সুযোগে যে কোনো ধরনের হামলা ও নাশকতার ঘটনা ঘটতে পারে। তাই মাঠ পুলিশের তৎপরতা বাড়ানোর জন্য এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার পরিচালনা করছে। এই সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য দেশি- বিদেশি শক্তি এখনো তৎপর রয়েছে। বাংলাদেশে অতীতে নাশকতামূলক কর্মকান্ডের কারণে মানুষ ও সম্পদের অনেক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। আগামী দিনে যাতে আর কোনো নাশকতামূলক কমকাণ্ড না ঘটে সেজন্য দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অত্যন্ত তৎপর থাকতে হবে। সেই সঙ্গে বাড়াতে হবে গোয়েন্দা তৎপরতা। নির্বাচন শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর আর কোনো আশঙ্কা নেই সেই ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। যে কোনো সময় অঘটন ঘটতে পারে সেজন্য পূর্ব প্রস্তুতির কোনো বিকল্প নেই। আওয়ামী লীগ সরকারকে বিপাকে ফেলার জন্য অপশক্তির কোনো অভাব নেই। সুযোগ পেলেই অশুভ শক্তি মাথাচারা দিয়ে উঠতে পারে। সেই ধারণা সব সময় পোষণ করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মীদেরও সচেতন থাকতে হবে। কেননা দেশে যে কোনো ধরনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে দেশ পরিচালনা করা কষ্টকর। সে কারণে দলীয় নেতাকর্মীদেরও এগিয়ে আসতে হবে।