ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কেন পবিত্র শিক্ষাঙ্গনে এমন পাপাচার

দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করে গণমাধ্যমে জানানো হোক
কেন পবিত্র শিক্ষাঙ্গনে এমন পাপাচার

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা কীভাবে একজন গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ হয়ে ধর্ষণের মতো জঘন্য কাণ্ডটি করতে পারল সেটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। গণমাধ্যমের কারণে খবরটি প্রকাশ্যে আসায় সচেতন মহল সম্ভবত লজ্জা বোধ করছে। বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশনে প্রচারিত খবরটি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শোনার কিংবা দেখার মতো ছিল না। ছেলে-মেয়েদের সামনে টেলিভিশনের সংবাদিকরা যেভাবে খররটি উপস্থাপন করছিলেন, তাতে অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন। তাদের মনের মধ্যে কি পরিমাণ ক্ষেভের সৃষ্টি হয়েছে সেটা প্রকাশ করার সক্ষমতা হয়তো অনেকেরই নেই। কীভাবে উচ্চ শিক্ষিত ছাত্ররা পবিত্র শিক্ষাঙ্গনে এমন জঘন্য কাজটি করতে পারল সেটা ভাবতেও কষ্ট হয়। হতভাগ্য গৃহবধূ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের মধ্যে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হবে এমন পরিস্থিতি কল্পনা করা যায় না। ওই গৃহবধূ একা ওই হলে যাননি। তার স্বামী তার সঙ্গে ছিলেন। স্বামীকে আটকে রেখে শিক্ষার্থীরা যেভাবে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ কাজে অংশ নিয়েছে তা মানুষের বোধগম্যতাকে হার মানিয়েছে। মানুষ নানা রকম অপরাধ করে এটা ঠিক তবে অপরাধের একটা ধরন ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। মানুষ শিক্ষিত হলে সভ্য হয় এমন নীতিবাক্য আমরা হরহামেশা শুনে আসছি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়ে অপরের স্ত্রীকে দলবেধে ধর্ষণ করে বিচারের হাত থেকে পার পেয়ে যাবে কি না সেটাই হচ্ছে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। মেধাবী ছাত্রদের মধ্যে যদি পশুত্ব থাকে তাহলে তার জন্য উচ্চশিক্ষা নিষিদ্ধ করা যায় কি না সেটাও ভাবা দরকার। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় ছয় শিক্ষার্থীর সনদ স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর মধ্যে তিনজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। বাকি তিনজনের ছাত্রত্ব শেষ হওয়ায় তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে সনদ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে প্রশাসন শেষ পর্যন্ত তাদের এই সিদ্ধান্ত বহাল রাখতে পারবে কি না তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির প্রতিবেদন কবে আসবে, কমিটির সুপারিশ কিংবা পর্যবেক্ষণ আগামীতে কখনো প্রতিপালিত হবে কি না সেটা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। এছাড়া ভুক্তভোগী নারীর স্বামীকে আবাসিক হলে আটকে রাখায় সহায়তাকারীদের পালাতে সহায়তাকারী ছাত্রদেরও সনদ স্থগিতের পাশাপাশি সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন তৎপরতায় মানুষ আশান্বিত হয়েছে এই বলে যে, প্রশাসন বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। উপাচার্য মো. নূরুল আলম জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল ও হলসংলগ্ন এলাকায় বহিরাগত দম্পতির সঙ্গে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রক্টরিয়াল বডি প্রাথমিক প্রতিবেদন দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় পবিত্র স্থান। এই স্থানে মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে আসেন। সন্তানরা উচ্চশিক্ষার ব্যাপারে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত হয়। সেখানে এসে যদি কোনো নারী সম্ভ্রম হারায় তাহলে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি কোথায় গিয়ে গড়ায় সেটা নিয়ে ভাবতে হবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অত্যন্ত নিরিবিলি পরিবেশে গড়ে উঠেছে। পারিপার্শি¦ক কারণে সেখানে নির্জনতা থাকে। লেখাপড়ার পরিবেশ রক্ষা করার জন্য নির্জনতা সৃষ্টি করার ফলে যদি ধর্ষণের ঘটনা ঘটার পরিবেশ সৃষ্টি হয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকা লোকালয়ে পরিণত করা যায় কি না তা নিয়েও চিন্তা করতে হবে। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনায় না নিয়ে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করে গণমাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করা যায় কি না সেটাও ভাবতে হবে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রের কারণে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি মানুষ ঘৃণা পোষণ করবে সেটা তো কারোই কাম্য হতে পারে না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত