ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দালাল ধরলে মিলবে সেবা

পাসপোর্ট ও বিআরটিএ অফিসের চালচিত্র
দালাল ধরলে মিলবে সেবা

আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের পাসপোর্ট থাকা বাঞ্ছনীয়। আর ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকাটাও কম জরুরি নয়। অল্প লেখাপড়া জেনেও যানবাহন চালিয়ে অনেকে তাদের সংসার পরিচালনা করছেন। যারা আর্থিকভাবে সচ্ছল তারা এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে ড্রাইভিং শিখে নেন। অনেকে নিজেই গাড়ি চালান। কিন্তু পাসপোর্ট ও ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া চারটিখানি কথা নয়। প্রচলিত বিধি-বিধানের মধ্যে এই দুটি সেবা পেতে হলে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হবে। তবে দালাল ধরলে অল্প সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট ও ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া সম্ভব। এই সেবা পেতে যেসব দাপ্তরিক আনুষ্ঠানিকতা থাকে তা দালালের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে পারলে ঘরে বসে পাসপোর্ট ও ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া যাবে এমন ধারণা অনেকে পোষণ করে। কাগজপত্রে ঘাটতি থাকলেও অর্থের বিনিময়ে পাসপোট পাওয়া যেমন সহজ তেমনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়াও কঠিন কিছু নয়। এই দুটি রাষ্ট্রীয় সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে রয়েছে দালাল চক্রের অধিপত্য। পাসপোর্ট অফিস কিংবা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) অফিসে দালাল চক্রের সদস্যদের সরব উপস্থিতি সেই বার্তাটি আমাদের দেয়। টাকা হলে বাঘের চোখ মিলে আর দালাল ধরলে সহজেই পাসপোর্ট ও ড্রাইভিং লাইসেন্স মিলে এটা এখন আর কোনো লুকানো খবর নয়। প্রকাশ্যে দালালরা সেবাপ্রার্থীদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করছেন। দালাল ধরতে পারলে সেবা গ্রহীতারা বুঝতে পারেন না কীভাবে কি হয়ে গেল। বিআরটিএ’র অধিকাংশ অফিস যেন দালাল চক্রের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। কোনো কোনো সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালায়। অভিযান চলার সময়টি বিরতি দিয়ে দালালরা আবার পুরোনো আচরণে ফিরে যায়। ড্রাইভিং লাইসেন্স, নবায়ন, যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন ও রুট পারমিটসহ সংশ্লিষ্ট কাজ করিয়ে দেওয়ার নামে সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেয় এসব দালাল। এসব অফিসে দালাল ধরলে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য পরীক্ষাও দিতে হয় না। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ির রেজিস্ট্রেশন না দেওয়ার বিধান থাকলেও উৎকোচের বিনিময়ে লার্নার (শিক্ষানবিশ) কার্ডধারীদের নিয়মিতই রেজিস্ট্রেশন দিয়ে যাচ্ছে দালাল চক্রের সদস্যরা। সংশ্লিষ্ট অফিসের আশপাশের দোকানে টাকার বিনিময়ে ডাক্তারি পরীক্ষার সার্টিফিকেট পাওয়া যাচ্ছে। আবার কিছু নির্দিষ্ট ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সঙ্গে যোগসাজশ করে সেখানে সেবা গ্রহীতাদের পাঠানো হয়। বেশি টাকা দিলে দ্রুত ডাক্তারি পরীক্ষার সার্টিফিকেটও পাওয়া যায়। তবে বিআরটিএ কর্মকর্তাদের একই বক্তব্য অফিসে কোনো দালাল নেই। এখানে নিয়মমাফিক কাজ হয়। অথচ সেবা গ্রহীতারা বিআরটিএ অফিসে গেলেই বাস্তব চিত্র দেখতে পারবে। সেবাগ্রহীতারা ফাইল নিয়ে আসতেই হাত থেকে তা নিয়ে নিচ্ছেন দালাল চক্রের সদস্যরা। নতুন কেউ এলে তাদের ডেকে বিআরটিএ অফিসের গলির মধ্যে নিয়ে যাচ্ছে। আলাপ আলোচনার পাশাপাশি টাকা পয়সার লেনদেন করা হয়। চুক্তি হলেই শুরু হয় কাজ। দালালরা রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় থাকায় অফিসের স্টাফদের চেয়ে এদের প্রভাব বেশি। ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চান না। আবার মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন ও ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের কিছু লোক যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন, নবায়ন ও ফিটনেস সনদ দিতে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলে। সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগ, গাড়ির ফিটনেস লাইসেন্স এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে এলে ভোগান্তি পোহাতে হয়। দালাল না ধরলে কোনো কাজই হয় না। দালাল ও অফিসের কর্মকর্তারা এসব অর্থ ভাগবাটোয়ারা করে নিচ্ছে। দালাল না ধরলে বছরের বছর পার হয়ে যাবে সেবা পেতে। ফলে অনেক গাড়ি চালানোর চাকরির অফার পেলেও তা গ্রহণ করতে পারে না। সেই চাকরি করতে পারিনি। প্রতিটি অফিসের শত দালাল লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ এবং ভুয়া লাইসেন্স করাসহ নানা ধরনের গ্রাহক হয়রানি করছে। মোটরসাইকেলের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করার পর ফিঙ্গার প্রিন্ট এবং পরবর্তী পর্যায়গুলোর প্রতিটিতে দালালের সহায়তা না নিলে ডাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার ভোগান্তির শেষ নেই। দালাল প্রচলিত আইন কানুন সম্পর্কে খুবই সচেতন। তারা নির্ধারিত ফি জমাদানের রশিদ দিলেও বাদবাকি টাকার কোনো রশিদ দিয়ে ‘বিপদ’ ডেকে আনেন না। টাকা দিলে শুধু ফিঙ্গার দিতে হয় পরীক্ষা নয়। কাজ শেষে মোবাইল ফোনে জানিয়ে দেয়া হয়। নিজ উদ্যোগে যারা ড্রাইভার লাইসেন্সের জন্য আবেদন জমা দেন তারা বছরের পর বছর অপেক্ষার পর হয়তো জানতে পারেন আবেদন জমাই হয়নি। নতুন করে আবেদন করে দালালের শরণাপন্ন হতে হয়। সচেতনমহল বলছে, পাসপোর্ট ও বিআরটিএ অফিসের দালালদের কাছে জিম্মি সাধারণ মানুষ। এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া দরকার। মানুষের হয়রানি কোনোভাবেই কাম্য নয়। এদের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত