গাজা যুদ্ধ পেরিয়ে গেল পাঁচ মাস

যুদ্ধবিরতির চূড়ান্ত রূপরেখার খোঁজে মধ্যস্থতাকারীরা

প্রকাশ : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

দেখতে দেখতে গাজা যুদ্ধ পাঁচ মাস পেরিয়ে গেল। গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজা সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার পর হতাহতের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। গাজার হাসপাতালগুলোও ইসরাইলি বিমান হামলা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। গাজায় সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় সেখানে তীব্র মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘের মতো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে দায়সারা বক্তব্য দিচ্ছে। তবে আসলে একটি সর্বাত্মক যুদ্ধ বিরতি কার্যকর করার ক্ষেত্রে কোনো মহল এগিয়ে আসছে না। গত ৪ মাসে কখনো কখনো অতি অল্প সময়ের জন্য বিরতি ঘোষণা করা হলেও তাতে কোনো পক্ষের তেমন কোনো সাড়া মিলেনি। সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসর যুদ্ধ বিরতির একটি রূপরেখা দিলেও তা এখনো প্রকাশ করা হয়নি। ৬ সপ্তাহ ব্যাপী এই যুদ্ধ বিরতির প্রধান শর্ত হচ্ছে ইসরাইল ও হামাসের কাছে যেসব বন্দি রয়েছে তাদের মুক্তি দেয়া। তবে এসব দেশ কতটা সফল হবে তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। দীর্ঘ আলোচনা ও বিভিন্ন দেশের মধ্যস্থতায় এর আগেও যুদ্ধবিরতি বাস্তবিক অর্থে কার্যকর হয়নি। ইসরাইলি হামলায় গৃহহীন লাখ লাখ ফিলিস্তিনি বাস করছে খোলা আকাশের নিচে। তারা নিরাপদ সন্ধানে প্রতিনিয়ত ছুটছে। অথচ সর্বত্র চলছে ইসরায়েলের বোমা হামলা। ফলে লাফিয়ে বাড়ছে নিহতের সংখ্যা, যাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। এমন পরিস্থিতিতে দেশে দেশে দাবি উঠছে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের। যুদ্ধ বিরতিতে উপনীত হতে দুই পক্ষকে রাজি করাতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন গতকাল ইসরায়েল সফর করেন। এর আগে তিনি সৌদি আরব, মিসর ও কাতার সফরে যান। কাতার জানিয়েছে, নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছে। দোহায় ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে বৈঠকের পর কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান আল-থানি জানান, হামাসের পক্ষ থেকে কিছু মন্তব্য পাওয়া গেছে, তবে তা মোটামুটি ইতিবাচক। ব্লিঙ্কেন বলেছেন, হামাসের পক্ষ থেকে যে প্রতিক্রিয়া বা শর্ত এসেছে সে বিষয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এখনো অনেক কিছু করার আছে। তবে তিনি বিশ্বাস করেন, যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা সম্ভব, যা খুবই প্রয়োজনীয়। ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থাও হামাসের শর্ত বা প্রতিক্রিয়া পেয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর অফিস জানিয়েছে, বিষয়টিকে পুরোপুরিভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। যদিও এব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি নেতানিয়াহু। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির জন্য একটি ‘চূড়ান্ত রূপরেখা’র খোঁজ করছেন মার্কিন, কাতারি এবং মিসরীয় মধ্যস্থতাকারীরা। অঞ্চলটিতে একটি বর্ধিত যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে সশস্ত্র যোদ্ধাদের হাতে জিম্মি ইসরায়েলিদের মুক্তিবিষয়ক একটি প্রস্তাবে সাড়া দিয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এরপরই নতুন একটি পরিকল্পনার খোঁজ করছেন মধ্যস্থতাকারী দেশগুলো। ইসরাইয়েল ও হামাসের মধ্যকার সংকট নিরসনে গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময়বিষয়ক একটি নতুন পরিকল্পনার প্রস্তাব নিয়ে উভয় পক্ষের ওপর কূটনৈতিক চাপ তৈরি করছে মধ্যস্থতাকারী দেশগুলো। হামাস ঠিক কী প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু প্রকাশ করা হয়নি। তবে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া যে দেওয়া হয়েছে তা নিশ্চিত করেছে হামাস প্রকাশিত একটি বিবৃতি। মিসরের স্টেট ইনফরমেশন সার্ভিসের প্রধান দিয়া রাশওয়ান বলেছেন, ‘একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর লক্ষ্যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা চূড়ান্ত পরিকল্পনা তৈরির জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে প্রস্তাবিত কাঠামোর সব বিবরণ নিয়ে আলোচনা করব।’ এদিকে গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৭ হাজার ৫৮৫ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছেন ৬৬ হাজার ৯৭৮ জন। অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকে আছে। কারণ উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছতে পারছেন না। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলি আক্রমণের ফলে গাজার ৮৫ শতাংশ বাসিন্দা খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।