ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে নৈতিক অবক্ষয়

যৌন হয়রানি ও মাদক বন্ধে জোরদার করতে হবে মনিটরিং
উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে নৈতিক অবক্ষয়

বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে যৌন হয়রানি ও মাদক কারবারের মতো ঘটনা শুনতে হবে এমনটা কেউ কখনো ভাবতেও পারে না। কিন্তু এসব ঘটনা আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিনিয়ত ঘটছে। কি ভয়াবহ সংঘাতিক খবর আমাদের শুনতে হচ্ছে। এ ধরনের খবর গণমাধ্যমে আসার কারণে মানুষ জানতে পারে। এ ছাড়া সচেতন ছাত্র সমাজও এ ব্যাপারে প্রতিবাদ সমাবেশ করায় গণমাধ্যমে খবরটি প্রকাশ পাচ্ছে। গণমাধ্যম সোচ্ছার না হলে হয়তো এই ধরনের পাপাচার মানুষের দৃষ্টিসীমার বাইরে থাকত। পিতার সমতুল্য একজন শিক্ষক যখন তার ছাত্রীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করতে প্রভাব ঘাটায়, তখন কি মনে হতে পারে- সেটি ভাবতেও কষ্ট হয় প্রতিটি অভিভাবকের। উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে কন্যা সন্তানরা যৌন হয়রানির শিকার এবং পুত্র সন্তানরা মাদকাসক্ত হবে- এমন প্রত্যাশা নিয়ে তো কোনো অভিভাবক তার সন্তানকে শিক্ষাঙ্গনে পাঠান না। একটা সন্তানের লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করা কতটা যে কঠিন, তা সীমিত আয়ের মানুষই ভালো জানে। উচ্চ শিক্ষা ছাড়া কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই, সন্তান শিক্ষিত না হলে সভ্য হিসেবে বিবেচিত হবে না, সেই চিন্তা-চেতনা থেকে অভিভাবক অনেক কষ্ট করে তাদের সন্তানকে শিক্ষাঙ্গনে পাঠান। অথচ সেখানকার কোনো কোনো ‘অসভ্য’ শিক্ষক অভিভাবকের সেই আশা- আকাঙ্ক্ষাকে ধূলিস্যাত করে দেন ক্ষণিকের মধ্যে। এই মুহূর্তের খবর হচ্ছে, দেশের একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একজন অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে তার স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে আন্দোলন করছে। আর আরেকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবাসিক হলে একজন গৃহবধূ সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হলেন। সেখানেও শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন।

লেখাপড়া করতে গিয়ে যদি যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হয়, তাহলে শিক্ষার্থীরা কখন লেখাপড়া করবে। যে বিশ্ববিদ্যালয়টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, সেখানে মাদকের কারবারও হয়। এই অভিযোগ এলিট ফোর্স র‌্যাবেব মুখপাত্রের। উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে র‌্যাগিং আরেকটি সমস্যা। র‌্যাগিংয়ের মাত্রা কখনো কখনো এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, পোশাক-পরিচ্ছদ খুলতেও দ্বিধাবোধ করে না, র‌্যাগিংয়ে অংশ নেয়া নরপিচাশগুলো। ক্যাম্পাসে এ ধরনের অপকর্ম হরহামেশাই ঘটছে। অনেক ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীরা ভয়ভীতি ও লোকলজ্জার ভয়ে এসব প্রকাশ করেন না। এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে রয়েছে নমনীয় ভূমিকা পালনের অভিযোগ। ফলে আতঙ্ক বাড়ছে সচেতন মহলে। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে। ধর্ষণ ও র‌্যাগিংয়ের ঘটনার সঙ্গে মেধাবী এবং ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ পাওয়া যায়। সাধুবাদ জানাতে হয় যে, বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক এমন অনাচারের প্রতিবাদে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ’ গড়ে উঠেছে। এ সংগঠনটির শাখা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে থাকা দরকার। এ ছাড়া প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল সক্রিয় করতে হবে। যেসব শিক্ষক কলুষিত চরিত্রের অধিকারী, তাদের চিরতরে শিক্ষাদান থেকে বিরত রাখতে হবে। গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নেওয়া পদক্ষেপ ও সার্বিক বিষয়ে পর্যালোচনা করতে তিন সদস্যেরে একটি কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।

বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানিসহ অনিয়মের অভিযোগগুলো নিখুঁতভাবে পর্যালোচনা ও প্রতিকারে পদক্ষেপ গ্রহণে ইউজিসি শিগগিরই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি সেল গঠন করবে। সেখানে দক্ষ কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হবে। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম ও নিপীড়নের ঘটনা ঘটলে, এ সেল তদারকি করবে এবং তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের ঘটনা মানুষকে মর্মাহত করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনা কোনো মতেই গ্রহণযোগ্য নয়। কেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ঘটনা ঘটছে? তা খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। আবাসিক সুবিধা নিশ্চিত না করে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কীভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে এবং অছাত্ররা দিনের পর দিন কীভাবে হলে থাকছে, সেটিও খতিয়ে দেখা দরকার। ক্যাম্পাসে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির অভিযোগ নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ হলেই শুধু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অরাজক পরিস্থিতি তৈরি, শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানিসহ যেকোনো অপরাধের ঘটনা দ্রুত আমলে নেওয়া, এটিকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে দেখা, ক্যাম্পাস নিরাপদ রাখা এবং লৈঙ্গিক বৈষম্য রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। যৌন হয়রানি বন্ধে প্রতিরোধ কমিটি শক্তিশালীকরণ ও মনিটরিং জোরদার করতে হবে। এছাড়া, সব ধরনের হয়রানি বন্ধে নৈতিক শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত