ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রবীণদের জন্য ডে কেয়ার সেন্টার

অবিলম্বে বাস্তবায়ন করা হোক এই মহতী প্রকল্প
প্রবীণদের জন্য ডে কেয়ার সেন্টার

বাবা-মাকে আর বৃদ্ধাশ্রমে দিতে হবে না, প্রবীণদের জন্য পাইলট বেসিসে ডে কেয়ার সেন্টার শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। গত শুক্রবার চাঁদপুর আলামিন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে পুরস্কার বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। দীপু মনি বলেন, বৃদ্ধ বয়সে বাবা-মা ঘরে একা থাকেন। অনেক সময় তারা দুর্ঘটনার শিকার হয়। কর্মজীবীদের বাড়তি চিন্তা নিয়ে কাজে অংশ নিতে হয়। তাই প্রবীণদের জন্য ডে কেয়ার সেন্টার প্রকল্পের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। সেখানে প্রবীণদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকবে। সমাজকল্যাণমন্ত্রী এ ধরনের একটি প্রকল্পের কথা জানিয়ে এদেশের লাখ লাখ অসহায় প্রবীণ জনগোষ্ঠীর মনে কথাই প্রকাশ করলেন। আমাদের সমাজে সবচেয়ে অবহেলিত শ্রেণি হচ্ছে প্রবীণরা। তারা একাকিত্ব জীবন যাপন করেন। তারা যেহেতে অপরের সাহায্য সহযোগিতা ছাড়া চলাফেরা করতে পারে না। অন্যের আয়ের ওপর তাদের সব মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে হয়। সন্তান যদি বিবেকবান হয়, তাহলে ওই প্রবীণদের শেষ জীবনটি স্বাচ্ছন্দ্যময় হয় আর সন্তান যদি তার পিতা-মাতার প্রতি দায়িত্বশীল কিংবা সংবেদনশীল না হয়, তা হলে প্রবীণ পিতা-মাতার দুর্ভোগের আর শেষ থাকে না। আমাদের সমাজের অনেক প্রবীণ একা একা দিনে-রাতের পুরোটা সময় কাটান। অধিকাংশ সময় শুয়ে বসে কাটান। কর্মক্ষমতা হারিয়ে অনেকটা অসহায় হয়ে যান। সংসারে তিনি মূল্যহীন হয়ে যান। যে সন্তানের জন্য আজীবন কষ্ট করেছেন, সন্তানের সুখের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন, সেই সন্তান যদি বার্ধক্য বয়সে তার পিতা-মাতার খবর না রাখে, তা হলে তার মতো আর দুর্ভাগ্য হয় না। সরকারি উদ্যোগে অন্তত দিনের বেলায় যদি প্রবীণরা একটি নির্দিষ্ট স্থানে সময় কাটাতে পারেন, তাহলে সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরে তিনি তার আপনজনদের সঙ্গে রাত কাটিয়ে আবার সকালে ডে কেয়ার সেন্টারে আসতে পারেন। এতে যেমন প্রবীণ ব্যক্তি তার জীবনে নিরাপত্তা কিংবা তার যে কোনো বিপদাপদ থেকে রক্ষা পাবেন, তেমনি সংসারের অন্য কর্মজীবী সদস্যরা দুশ্চিন্তামুক্ত থাকবেন।

সমাজকল্যাণমন্ত্রীর এই আশার বাণী বাস্তবতায় রূপ লাভ করবে, সেই প্রত্যাশা করছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবীণদের প্রতি অত্যন্ত যত্মবান এবং তাদের জীবনযাপন স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তুলতে- তাদের জন্য বৃদ্ধ ভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এমনি একটি মহতী প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী নেবেন, এমন আশা দেশের অসহায় প্রবীণ সমাজ করে থাকেন। তাদের প্রত্যাশা এই মহতী প্রকল্প অবিলম্বে বাস্তবায়ন হোক। বাস্তবতা হচ্ছে মানুষ প্রবীণ জীবনে পৌঁছার পর নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হন। বিশ্বায়ন, শিল্পায়ন, নগরায়ণ, জন্ম ও মৃত্যুহারের তাৎপর্যপূর্ণ হ্রাস, উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি, শিক্ষাব্যবস্থার অগ্রগতি, গণমাধ্যমের প্রচারসহ নানা কারণে মানুষের জীবন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের আয়ুষ্কাল বা জীবনকাল বৃদ্ধি পেয়েছে। কোনো ব্যক্তি বার্ধক্যে পৌঁছার পরে কর্মে নিযুক্ত হওয়ার সুযোগ থাকে না। ফলে তিনি আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে যান। একবিংশ শতাব্দীতে এসে বিশ্বে প্রবীণদের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০৫০ সালে বিশ্বে ছয়জনে একজন ৬৫-এর বেশি বয়স্ক ব্যক্তি হবে। অথচ ২০১৯ সালে ছিল ১১ জনে মাত্র একজন। একই ধারা বাংলাদেশেও লক্ষণীয়। ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ ভাগের বেশি ষাটোর্ধ্ব প্রবীণ থাকবেন। অর্থাৎ সংখ্যায় প্রায় সাড়ে শূন্য চার কোটির কাছাকাছি। অষ্টাদশ শতাব্দীতে মার্কিন সমাজে প্রবীণদের সংখ্যা ছিল মাত্র শতকরা ২ ভাগ এবং যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ প্রবীণদের গভীর শ্রদ্ধা করত। বর্তমানে সে সমাজে প্রবীণদের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করা হয়। যৌথ পরিবার ব্যবস্থা ভেঙে যাচ্ছে। শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের ফলে বাবা-মা এবং সন্তানরা খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। প্রযুক্তির ব্যাপক অগ্রসরতার কারণে বর্তমানে যারা প্রবীণ তাদের অধিকাংশই এসবের সঙ্গে মানিয়ে চলতে পারছেন না। ফলে এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মের ব্যবধান বাড়ছে। অন্যদিকে অর্থনৈতিক দুরবস্থা, শারীরিকভাবে নির্ভরশীলতা, সঙ্গি-সঙ্গিণীর মৃত্যু, পরিবারের সদস্যদের দ্বারা অবহেলাসহ নানা সমস্যায় প্রবীণরা জর্জরিত। অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর সম্মুখীন না হলে আজকের আমরা যারা নবীন, তারাও এক সময় প্রবীণ হবো। কাজেই আমাদের সবার বার্ধক্যকে সফল করা এখন সময়ের দাবি। প্রতি বছর ১ অক্টোবর পালিত হয় বিশ্ব প্রবীণ দিবস। প্রবীণদের সুরক্ষা, অধিকার নিশ্চিত এবং বার্ধক্য বিষয়ে বিশ্বব্যাপী গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে জাতিসংঘ ১৯৯০ সাল থেকে আন্তর্জাতিকভাবে দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। আমরা প্রত্যেকেই আমাদের পাশের প্রবীণদের পাশে দাঁড়াই; নিজের বার্ধক্যকে সফল করার চেষ্টা করি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত