ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ফুল চাষে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা

অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের আরেকটি সুযোগ
ফুল চাষে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা

‘জোটে যদি মোটে একটি পয়সা/ খাদ্য কিনিও ক্ষুধার লাগি/ দুটি যদি জোটে অর্ধেক তার / ফুল কিনিও হে অনুরাগী।’ ফুল নিয়ে মহানবী (সা.)-এর একটি বিখ্যাত হাদিসের এমন কাব্যরূপ দিয়েছেন কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত। ভালোবাসা, পবিত্রতা ও সৌন্দর্যের প্রতীক ফুল। তবে ফুল এখন আর সৌখিনতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। ফুল একটি বাণিজ্যিক ফসল হিসেবে এরই মধ্যে গণ্য হয়েছে। ফুল চাষ করে আমাদের দেশের অনেক মানুষ অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের দেশের অনেক এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ করা হচ্ছে। সেই ফুল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে চলে আসছে রাতের বেলা। সকালের আলো ফুটতে না ফুটতে ফুলের বাজার জমজমাট হয়ে উঠছে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে ফুলের পাইকারি ও খুচরা বাজার। সারা বছরই ফুলের চাহিদা থাকে। বিয়ে-শাদী, বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও অভিনন্দন জানাতে ফুলের কদর বাড়ে। এদিকে ফেব্রুয়ারি-মার্চের পাঁচ দিবস ঘিরে শত কোটি টাকার ফুল বাণিজ্যের স্বপ্ন দেখছেন ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের গদখালীর চাষিরা। ফেব্রুয়ারিতে বসন্তবরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবং মার্চে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও মহান স্বাধীনতা দিবস ঘিরে গোটা দেশেই থাকে অঢেল ফুলের চাহিদা। যার সিংহভাগ পূরণ করে যশোরের গদখালী। বছরের অন্যান্য সময়ের চাইতে এ সময়টাতে ফুলের ভালো ব্যবসা হয়ে থাকে। এ সময়টিতে কোটি টাকার বেশি ফুল বিক্রি হবে বলে আশা করছেন রাজধানীর ব্যবসায়ীরা।

রাজধানীর ফুল বাজারে যশোর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, রংপুর, সিলেট, কক্সবাজারসহ প্রায় ২৪টি জেলা থেকে ফুল আসে। সকালের দিকটা এসব মার্কেটে মানুষের কর্মতৎপতা বাড়তে থাকে। কৃষি বিভাগ বলছে, ফেব্রুয়ারি-মার্চের পাঁচ দিবস ঘিরে গদখালী এলাকা থেকে শত কোটি টাকার ফুল সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। যদিও কৃষকদের প্রত্যাশা, ফেব্রুয়ারিতেই তারা শত কোটি টাকার ফুল বিক্রি করতে সক্ষম হবেন। এবার গদখালীতে ফুলের দামও বেশি। বসন্তবরণ উৎসবের দিনে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সরস্বতী পূজা। এরপরই আসছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এই দিবসগুলো উদযাপনে ফুলের বিকল্প নেই। মূলত এ সব দিবস ঘিরে জমে উঠতে শুরু করেছে গদখালী ফুলবাজার। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ফুলের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। সারাবছর ফুল বিক্রি হলেও মূলত বসন্তবরণ, ভালোবাসা দিবস আর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘিরে বেচাকেনা বেশি হয়। এ মৌসুমে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে বিশেষ করে গোলাপ ফুলের উৎপাদন কম হয়েছে। তবে আসন্ন তিন দিবসকে ঘিরে অন্তত শত কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। কৃষি বিভাগ বলছে, ফেব্রুয়ারি-মার্চের পাঁচ দিবস ঘিরে গদখালী এলাকা থেকে শত কোটি টাকার ফুল সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন কৃষকরা।

প্রতিদিন কাকডাকা ভোরেই চাষিরা বিভিন্ন যানবাহনে তাদের উৎপাদিত ফুল নিয়ে আসছেন ফুলের পাইকারি গদখালী বাজারে। ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে সরব হয়ে উঠছে ফুলবাজার। যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের দু’ধারে বিভিন্ন জাতের ফুলের পসরা সাজিয়ে বসছেন কৃষকরা। কেউ ভ্যান, কেউ সাইকেল, মোটরসাইকেল বা ঝুড়ির মধ্যে ফুল রেখে ঢাকা ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দরদামে ব্যস্ত। কয়েক বছর আগেও মানুষ বাড়ির আশপাশে দুই এক প্রকার ফুলের গাছ লাগাত। তারা আপনজনকে ফুল দিয়ে আত্মতৃপ্তি বোধ করত। তবে ফুল যে একটি অর্থকড়ি ফসল হতে পারে, তা এখন মানুষ বুঝতে পারছে। ফুল চাষ করে আর্থিকভাবে স্বচ্ছলতা অর্জন করা যায়। এই চিন্তা-চেতনায় মানুষ দিন দিন উদ্ধুদ্ধ হচ্ছে। ফুলের বাগানের পরিধি দিন দিন বাড়ছে সেই সঙ্গে বাড়ছে ফুল বাগানের পরিচর্যাও। সে কারণে বাড়তি জনবলের প্রয়োজন হচ্ছে। বাণিজ্যিক আকারে ফুল চাষ করতে গিয়ে নানা রকম সার ও বালাই নাশক ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে। ফুল বিক্রি, ফুলের বাগান পরিচর্যা এবং আর্থিক লেনদেনের করার কাজে জনবলের প্রয়োজন। সে কারণে অনেক লোকের কর্ম সংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে ফুল চাষাবাদ ও বেচাকেনা নিয়ে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত