ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিচার প্রক্রিয়ায় গ্রাম আদালত

মানুষের মধ্যে বাড়াতে হবে সচেতনতা
বিচার প্রক্রিয়ায় গ্রাম আদালত

গ্রাম আদালতের জরিমানা করার ক্ষমতা ৭৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে তিন লাখ টাকা নির্ধারণ করে ‘গ্রাম আদালত (সংশোধন) আইন, ২০২৪ এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গত রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়। চেয়ারম্যানসহ পাঁচজনের সমন্বয়ে গ্রাম আদালত পরিচালিত হবে। গ্রাম আদালতের মাধ্যমে মামলাজট যেমন কমবে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের হয়রানিও কমে যাবে। আদালতে মামলা বছরের পর বছর ধরে চললেও এখানে অল্প সময়ে নিষ্পত্তি হয়ে থাকে। বাদী-বিবাদী উভয়ই উপকৃত হয়। গ্রাম আদালত উচ্চ আদালতে মামলার জট কমাতে ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখে। উচ্চ আদালত হতে মামলার চাপ কমাতে, একই সঙ্গে জনগণের কাছে স্থানীয় বিচারব্যবস্থার সুযোগ পৌঁছে দিতে বাংলাদেশ সরকার ২০০৬ সালে গ্রাম আদালত আইন পাস করে, যা পরে ২০১৩ সালে সংশোধিত হয়। স্থানীয় বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থাকে ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া হয়েছে। আদালত ছোটোখাটো বিরোধ নিষ্পত্তি করে থাকলেও অনেক সময়ই গ্রাম্য প্রভাবশালীদের কারণে সাধারণ মানুষ জেলা আদালতে বা থানায় চলে যায়। এর ফলে বিচার প্রাপ্তির জন্য তাদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষার কোন মামলাগুলো গ্রাম আদালতে বিচার্য এবং কোনগুলো বিচার্য নয়, সে বিষয়ে সাধারণ জনগণকে আরও সচেতন করে তুলতে হবে। এ আদালতের মাধ্যমে সাধারণ জনগণ বিশেষ করে দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী নিয়মিত সেবা পাচ্ছে। ‘গ্রাম আদালতের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার নাগরিকদের ন্যায়বিচার লাভের মৌলিক অধিকার লাভের সুযোগ তৈরি করেছে। পাশাপাশি স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় লক্ষ্য শান্তি, ন্যায়বিচার ও কার্যকর প্রতিষ্ঠানসমূহ’ অর্জনেও সহায়তা করছে।’ আবেদনকারী এবং প্রতিবাদী নিজেরাই নিজেদের কথা বলতে পারেন। তাই আইনজীবী দরকার হয় না। গ্রাম আদালত চুরি, ঝগড়া-বিবাদ, কলহ বা মারামারি, দাঙ্গা, প্রতারণা, ভয়ভীতি দেখানো বা হুমকি দেয়া, কোনো নারীর শ্লীলতাকে অমর্যাদা বা অপমানের উদ্দেশ্যে কথা বলা, উত্ত্যক্ত করা, গচ্ছিত কোনো মূল্যবান সম্পত্তি আত্মসাৎ করা, পাওনা টাকা আদায়, স্থাবর সম্পত্তি দখল ও পুনরুদ্ধার, অস্থাবর সম্পত্তি উদ্ধার বা তার মূল্য আদায়, কোনো অস্থাবর সম্পত্তির জবর দখল বা ক্ষতি করার জন্য ক্ষতিপূরণ আদায়, গবাদিপশুর অনাধিকার প্রবেশের কারণে ক্ষতিপূরণ, গবাদিপশু মেরে ফেলা বা ক্ষতি করা, কৃষি শ্রমিকের পরিশোধযোগ্য মজুরি আদায় ইত্যাদি জটিল বিষয় দিনে গ্রাম আদালত সমাধানের চেষ্টা করে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আবেদন ফরম সংগ্রহ করে অথবা সাদা কাগজে প্রয়োজনীয় তথ্য উল্লেখপূর্বক যথাযথভাবে পূরণ করে পূরণকৃত আবেদনপত্র ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবর দাখিল করতে হবে। ফৌজদারি মামলার জন্য ১০টাকা এবং দেওয়ানি মামলার জন্য ২০ টাকা ফি প্রদান করতে হবে। এছাড়া কোনো খরচ নেই। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানই গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান। বিচারিক প্যানেলে আবেদনকারী ও প্রতিবাদী উভয়পক্ষ কর্তৃক মনোনীত দুইজন করে মোট ৫ জন থাকেন। ফৌজদারি মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে বিরোধীয় ঘটনা ঘটার ৩০ দিনের মধ্যে মামলা দায়ের করতে হবে। দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে বিরোধীয় ঘটনার ৬০ দিনের মধ্যে মামলা দায়ের করতে হবে। তবে স্থাবর সম্পত্তি বেদখল হওয়ার ১ বছরের মধ্যে এর দখল পুনরুদ্ধারের জন্য মামলা করা যাবে। গ্রাম আদালতের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বিচারিক প্যানেলের ৫ জনই একমত হলে অথবা ৫ জনের মধ্যে ৪ জনই একমত হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে এ বিষয়ে আপিল করা যাবে না। সিদ্ধান্তের দিন বিচারিক প্যানেলে যদি ৪ জন থাকে এবং তাদের মধ্যে ৩ জন একমত হন, তা হলে আপিল করা যাবে না। তবে সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে যদি ৫ জনের মধ্যে ৩ জন একমত এবং ২ জন ভিন্নমত পোষণ করেন, তা হলে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ৩০ দিনের মধ্যে উপযুক্ত আদালতে আপিল করা যাবে। গ্রাম আদালতে যারা বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন তাদের বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে। যেন পক্ষপাতিত্বের কোনো অভিযোগ না আসে। একই সঙ্গে সর্বোচ্চ সুষ্ঠু ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া কোনো বিষয়ে সমাধানের পথ সুগম করার জন্য অন্যদের সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে। স্মরণ রাখা দরকার যে সাধারণ মানুষকে আইনি সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে যাতে কোনো প্রকার সমালোচনার জন্ম নিতে না পারে সে ব্যাপারে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। গ্রাম আদালতের প্রতি মানুষের আস্থা দিন দিন বাড়বে সে প্রতাশা থাকবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত