ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

এসএসসি পরীক্ষায় অনুপস্থিতি

শুধু ব্যক্তিগতই নয়, জাতীয় সমস্যাও বটে
এসএসসি পরীক্ষায় অনুপস্থিতি

একজন শিক্ষার্থীর জীবনে প্রথম পাবলিক পরীক্ষা হচ্ছে এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষা। অন্তত ১০টি শ্রেণিতে পড়ালেখা করার পরই শিক্ষার্থীরা এই ধরনের পরীক্ষায় অংশ নেয়। স্কুলে যাওয়া, ক্লাসের পড়া তৈরি করা, কোচিং কিংবা প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়ার মধ্যে অন্তত ১৫টি বছর থাকতে হয় লেখাপড়ার জগতে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর অভিভাবক কত টাকা ব্যয় করেন, সেই হিসাব রাখা বাস্তবিক অর্থে কঠিন। শিক্ষার্থীর এতো অধ্যবসয়, এতো পরিশ্রম এবং অভিভাবকদের বিশাল অর্থ খরচের পথ ধরে আসে এসএসসির মতো গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক পরীক্ষা। অথচ জীবনের এই প্রথম পরীক্ষায় অংশ না নেয়ার মধ্যদিয়ে প্রথম ধাক্কাটি খায় শিক্ষার্থীরা। যে শিক্ষার্থী এসএসসি পর্যায়ের পাবলিক পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকে। তার পক্ষে পুনরায় প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নেয়া অত্যন্ত কঠিন। বাধ্য হয়ে অভিভাবকরা বিশেষ করে তাদের কন্যাদের বিয়ে দিয়ে দেন। আর বিয়েশাদী হয়ে গেলে সংসার, স্বামী ও সন্তান নিয়ে তাকে এতো বেশি ব্যস্ত থাকতে হয় যে, পারিবারিক জীবনে আর পড়ালেখা করার মতো মনমানসিকতা থাকে না। প্রতি বছরই হাজার হাজার পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে তারা যেমন ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, সেই সঙ্গে জাতির কাছে তারা বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কেন না, এই পর্যায়ে এসে নতুন করে শিক্ষাজীবন শুরু করা কঠিন। এবারো এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার প্রথম দিন ১৯ হাজার ৩৫৯ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। আর পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের জন্য ২৪ পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ৯টি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসিতে প্রথম দিনে বাংলা প্রথমপত্রের, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন দাখিলে কোরআন মজিদবিষয় আর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসি ভোকেশনাল ও দাখিল ভোকেশনালে বাংলা-২ বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ৯টি সাধারণ ধারার শিক্ষা বোর্ডের অধীন ২ হাজার ২৬৪টি কেন্দ্রে বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৪ লাখ ১৮ হাজার ২৯২ জন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কন্ট্রোল রুমের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২ হাজার ২৬৪টি কেন্দ্রে ১৪ লাখ ৮ হাজার ৫৬১ জন পরীক্ষার্থী বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষায় অংশ নেয়। অনুপস্থিত ছিল ৯ হাজার ৭৩১ জন। প্রথম দিনে বরিশাল বোর্ডে ২ ও ময়মনসিংহ বোর্ডে ৪ জন পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়। বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডের ২ হাজার ৩৪৫ জন, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৮০৯, রাজশাহী বোর্ডে ১ হাজার ১৮১, বরিশাল বোর্ডে ৬৮২, সিলেট বোর্ডের ৫৬৪, দিনাজপুর বোর্ডে ১ হাজার ৪৩, কুমিল্লা বোর্ডের ১ হাজার ৩৭০, ময়মনসিংহ বোর্ডে ৬০৪ ও যশোর বোর্ডে ১ হাজার ১৩৩ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। অন্যদিকে, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে ৭ হাজার ৬৬০? অনুপস্থিত ও অসদুপায় অবলম্বনের জন্য ৭ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়। আর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ১ হাজার ৯৬৮ অনুপস্থিত ছিল, আর বহিষ্কার হয়েছে ১১ জন। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা একজন শিক্ষার্থীর জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তর। এই পরীক্ষা পেরিয়েই একজন শিক্ষার্থীকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে যেতে হয়, যা পরবর্তী সময়ে উচ্চমাধ্যমিক হয়ে উচ্চশিক্ষার পথ দেখায়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, প্রতিবছরই ফরমপূরণ করার পরেও বিপুলসংখ্যক পরীক্ষার্থী এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকছে। এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রথম দিনেই সারা দেশে এতো বিপুলসংখ্যক পরীক্ষার্থীর অনুপস্থিতি উদ্বেগজনক। প্রশ্ন উঠেছে, ফরমপূরণ করে চূড়ান্ত পর্যায়ে এসেও কেন বিপুল পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে না- এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কারণ জানা সম্ভব হচ্ছে না। তবে শিক্ষাবিদরা বলছেন, অনুপস্থিতির একটা বড় কারণ হতে পারে অভিভাবকদের সচেতনতার অভাব। এখনো অনেক অভিভাবক আছেন, সন্তান কিসে পড়ে, কেমন পড়ছে, তা বিস্তারিত জানেন না। প্রতিবছরই দেখা যায় ১ থেকে ২ শতাংশের মধ্যে পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকে। সুনির্দিষ্ট কারণ জানা না গেলেও পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে অনুধাবন করা যায়, মূলত তিনটি কারণে এমনটি হয়ে থাকতে পারে। প্রথমত, কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে, শিক্ষার্থীর নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করা থাকলেই এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফরম পূরণের সুযোগ করে দেয়। এটি গ্রামাঞ্চলে বেশি হয়। কিন্তু এসব শিক্ষার্থীর অনেকেই পরে পরীক্ষা দেয় না। আবার কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী আছে ফরম পূরণের পর দেখে পরীক্ষার প্রস্তুতি ভালো হয়নি। তখন পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকে। কিছু শিক্ষার্থী অসুস্থতার কারণেও পরীক্ষা দেয় না। সাধারণ নিয়ম হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্বাচনি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদেরই এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া হয়। শুধু প্রথম দিনেই নয়, অতীতে দেখা গেছে, পরবর্তী পরীক্ষাগুলোতেও কিছু কিছু পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকে। বিপুল পরীক্ষার্থীর অনুপস্থিতির পেছনে শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের অসচেতনতা এবং অর্থনৈতিক কারণ থাকতে বলে মনে করেন কোনো কোনো মূল্যায়ন- বিশেষজ্ঞ। তারা বলছেন, অভিভাবকদের অর্থনৈতিক কারণেও অনেক পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকতে পারে। বাল্যবিয়ের কারণেও কিছু ছাত্রীর পড়াশোনায় সমস্যায় পড়ে। এই সংকট থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে শিক্ষাবিদরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো কোনো পরীক্ষার্থী এই ধরনের শঙ্কায় থাকে, সেটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের ধারণা থাকা দরকার। তখন ওই সব শিক্ষার্থীর অভিভাবকের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। যাতে কোনো পরীক্ষার্থীকে অনুপস্থিত থাকতে না হয়। পরীক্ষার আগে থেকেই নিবিড়ভাবে ব্যবস্থা নিতে পারলে, এই সমস্যা অনেকটাই দূর করা সম্ভব।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত