ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আশার বাণী এখন আর আশান্বিত করে না

সরবরাহ দিয়ে কী করব, কেনার সামর্থ্য কোথায়
আশার বাণী এখন আর আশান্বিত করে না

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, আসন্ন পবিত্র রমজানে নিত্যপণ্যের কোনো সংকট হবে না। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে চারটি পণ্যের শুল্ক কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এই সপ্তাহে আমদানিকারক ও যারা পণ্য তৈরি করে তাদের সাথে বসে তেলের দাম ঠিক করে দেয়া হবে। একই সাথে খেজুরের ট্যারিফও কমিয়ে দেয়া হয়েছে। গত শুক্রবার টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে আহসানুল ইসলাম টিটুর বাসভবনে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, ভারত আমাদের পেঁয়াজ ও চিনি সরবরাহের জন্য রাজি হয়েছে। ভারতসহ অন্যান্য প্রতিবেশী দেশ থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ বজায় রাখতে আমরা কাজ করছি।

তিনি বলেন, চালের কোনো সংকট আমাদের নেই। ১৭ লাখ মেট্রিক টনের উপরে চালের মজুত রয়েছে। আশা করছি, চাল নিয়ে কেউ চালবাজি করতে পারবে না। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলেছেন, আগে বিভিন্ন জাহাজ থেকে মালামাল আসত, তাদের পণ্যটি সরাসরি তারা সারা বাংলাদেশে সরবরাহ করতে পারত। কিন্তু এখন যারা জাহাজের মালিক তারাই মিলের মালিক, আবার তারাই সরবরাহকারী। তারা যেন এককভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, সেজন্য আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। খাতুনগঞ্জ, মৌলভীবাজার, বাদামতলীসহ যেসব হোলসেল মার্কেট রয়েছে; তারাও যেন পণ্য আমদানি করে সরবরাহ ঠিক রাখতে পারে, আমরা সে ব্যবস্থা করছি। দুই-চার, পাঁচণ্ডদশটা কোম্পানির কাছে আমাদের পুরো সরবরাহব্যবস্থা জিম্মি হয়ে না থাকে, আমরা সে বিষয়েও ব্যবস্থা গ্রহণ করার চেষ্টা করছি। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী পণ্যের সরবরাহের কথা বলেছেন, পণ্যের কোনো ঘাটতি নেই সেটাও বলেছেন, অনেক আশার কথা শুনিয়েছেন। তার আশার বাণী শুনে মন খুশি হলেও পেটের আগুন মিটছে না। পণ্যের সরবরাহ তো বিষয় নয়। আলোচ্য বিষয় হচ্ছে পণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি। মানুষ কিনবে কীভাবে, সেটাই তো বড় কথা। তার এই আশার কথায় মানুষ কি সন্তোষ প্রকাশ করছেন? সেটা জানার জন্য তাকে ছুটির দিনে রাজধানীর কোনো একটি বাজারে গিয়ে তা প্রমাণ করতে হবে। তিনি একবার বাজারে গেলে দেখতে পারবেন কোন পণ্যের কত মূল্য। কত টাকা নিয়ে বাজারে গেলে কতটুকু পণ্য কেনা যায়, সেই হিসাবটা আগামীতে কোনো এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি দিলে মানুষ আশ্বস্ত হবেন। মানুষ এখন আর আশার কথা শুনতে চান না। সীমিত আয়ের মানুষ এখন আর আর বাজরের দোকান থেকে শাকসবজি কিংবা মাছ-মাংস কিনেন না। দাম কিছুটা কম হওয়ায় তারা ভ্যান থেকে শাকসবজি মাছ এবং পোলট্রি মুরগি কিনে জীবনযাপন করছেন। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তালমিল করে বেতন তো বাড়ছে না। নিয়মিতভাবে প্রতি বছর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বেতন বাড়ে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা নেই বললেই চলে। দুই চার বছর পর পর কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে বেতন বাড়লেও তার পরিমাণ আশানুরূপ নয়। লেখাপড়ার সঙ্গে মানুষের চিকিৎসা ব্যায়ও বেড়ে গেছে। তাহলে মানুষ বাঁচতে কীভাবে। দেশ সেবার অঙ্গীকার করে জনগণের ভোট পাওয়ার পর ভোটারদের একটু স্বস্তির সঙ্গে জীবনযাপনের সুযোগ করে দেয়ার দায়িত্ব জনপ্রতিনিধিদের। এক ট্রাক পণ্য এক জেলা থেকে অন্য জেলায় নিয়ে যেতে কত টাকা পথে খরচ হয়, সেই খবর আমাদের দেশের জন প্রতিনিধিরা জানেন কি না, সেটাও একটা প্রশ্ন। আমদানি পণ্যের দাম বাড়ার যৌত্তিক কারণ থাকতে পারে। ডলার সংকট ও পরিবহণ ব্যয়। তবে কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়ার কারণ কি, তা খোলাসা না করলে মানুষ বিক্ষুব্দ হবেন। নামিদামি খাবার খাওয়ার শখ সাধারণ মানুষ এখন আর করেন না। কোনোমতে জীবন ধারণ করার জন্য যা দরকার, তার সংস্থান করতে পারলেও মানুষ খুশি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দ্রব্যমূল্য ও সিন্ডিকেট নিয়ে অনেকবার সতর্ক করেছেন। তবে তার সতর্ক বার্তার তেমন কোনো প্রতিফলন বাজারে নেই। পবিত্র রমজান মাস আসতে আর বেশি সময় নেই। মানুষ কীভাবে এই মাসটি পার করবেন, সেই চিন্তা এখন থেকেই শুরু হয়েছে। মহান আল্লাহ তাদের রোজা কবুল করুন, সেই দোয়া সবাই করবেন। সেই সঙ্গে দোয়া করবেন, যাদের কারণে দ্রব্যমূল্য অতিরিক্ত বাড়ে, মহান আল্লাহ যেন তাদের জন্য হেদায়েত নসিব করেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত