ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বড় হচ্ছে পর্যটন ক্ষেত্র : বাড়ছে সম্ভাবনা

এস এম মুকুল
বড় হচ্ছে পর্যটন ক্ষেত্র : বাড়ছে সম্ভাবনা

পর্যটন একটি বহুমুখী শিল্প খাত। এই শিল্পটিরও শাখা-প্রশাখা বিস্তৃত হয়েছে যেমন- ঐতিহাসিক নিদর্শন, প্রকৃতি, সংস্কৃতি ও কৃষ্টি, ধর্ম, স্বাস্থ্য, খেলাধুলা, বাণিজ্য। পৃথিবীর অনেক দেশের অর্থনীতির নাড়ির স্পন্দনের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলা হয়েছে পর্যটনকে কেন্দ্র করে। বাংলাদেশেও এ শিল্পের সম্ভাবনা অফুরন্ত। বাংলাদেশ ব্যংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে সরকারের বৈদেশিক আয় হয়েছে ৪ হাজার ১৭৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক সন্তোষ কুমার দেব, এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমরা গবেষণায় দেখেছি মোট জিডিপর ১০ শতাংশ এই খাত থেকে আয় করা সম্ভব। এজন্য সরকারি উদ্যোগ আরো বেশি হওয়া প্রয়োজন। ‘ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড টুরিজম কাউন্সিলের মতে, ২০১৩ সালে পর্যটন খাতে ১৩ লাখ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর গড়ে ২ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে এই খাতে।

সে হিসাবে ২০২৪ সালে মোট কর্মসংস্থানে মধ্যে পর্যটন খাতের অবদান দাঁড়াবে ১ দশমিক ৯ শতাংশ। পর্যটন কর্পোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৬৮টি পর্যটন স্পট এবং আবাসনের জন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ৪০৪টি তিন তারকা বা তার চেয়ে আধুনিক হোটেল, মোটেল আছে। সংশ্লিষ্টদের অভিমত, এক্সক্লুসিভ ট্যুারিস্ট জোন করে বিদেশি পর্যটক আকর্ষণ ও অনুকূল সুবিধা সৃষ্টি করতে পারলেই সমুদসৈকতের দুনিয়ার দ্বিতীয় দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার থেকে বছরে কমপক্ষে ২০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করা সম্ভব। তাই বিজ্ঞ পর্যটকদের অভিমত- যথাযথ বিকাশের মাধ্যমে শুধুমাত্র পর্যটন শিল্প থেকেই বছরে হাজারো কোটি টাকা আয় করতে পারে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের পর্যটন স্থান বললেই কক্সবাজার, সেন্ট মার্টিন, কুয়াকাটা, সুন্দরবন আর পার্বত্য চট্টগ্রামসহ হাতে গোনা কয়েকটি স্থানের কথাই শোনা যায়। অথচ টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া খ্যাত বাংলাদেশের ৬৪ জেলা, ৪৯১ উপজেলার মধ্যে প্রায় প্রতিটি জেলা-উপজেলায়ই ঘুরে দেখার মতো অনেক স্থান রয়েছে। এগুলো পর্যটন স্থানে পরিণত করতে প্রয়োজন প্রচার ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা। ডব্লিউটিটিসির গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশে এ মুহূর্তে ১১ লাখ ৩৮ হাজার ৫০০ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পর্যটন খাতে সম্পৃক্ত। ২০২৬ সালে বাংলাদেশে এ খাতে শুধু প্রত্যক্ষভাবেই ১২ লাখ ৫৭ হাজার লোক কাজ করবে। সংস্থাটির মতে, বিশ্বের ১৮৪টি পর্যটন সমৃদ্ধ দেশের মধ্যে র‍্যাংকিংয়ে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৬০ নম্বরে। ১০ বছর পর বাংলাদেশ ১৮তম অবস্থানে চলে আসবে। ফলে জাতীয় আয়ে বড় অবদান রাখবে উদীয়মান এ শিল্প।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পর্যটন শিল্প বিকাশের অবারিত সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশে। বিদেশি পর্যটকনির্ভরতা ছাড়াও দেশীয় পর্যটকদের নিরাপত্তা, যোগাযোগ সুবিধা, আকর্ষণীয় অফার এবং পর্যটন ব্যয় সীমার মধ্যে থাকলে দেশের মানুষ আগ্রহ নিয়ে দেশ ঘুরে দেখতে চাইবে। আর দেশের মানুষকে দেশ দেখানো- স্লোগানে এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে পর্যটন শিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।

এক হিসেবে বলা হয়, ১৬ কোটির বেশি মানুষের বাংলাদেশ গড়ে প্রতিবছরে ১০ ভাগও যদি দেশ ঘুরে দেখে তাহলে বিশাল অঙ্কের অর্থনৈতিক তৎপরতা সৃষ্টি হবে। মনে রাখা দরকার পর্যটন বিকাশে অবকাঠামো, নিরাপত্তা এবং জিনিসপত্রের মান ও দামের সামঞ্জস্যতা এই তিনটি বিষয়ের খুব গুরুত্ব পূর্ণ। পর্যটন শিল্পের বিকাশে সরকার সংশ্লিষ্ট বিভাগ, অধিদপ্তর ও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ে একটি নীতিমালা গ্রহণ করলে খুব দ্রুত সুফল পাওয়া সম্ভব হবে। কারণ দেশের অর্থনৈতিক ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের সৌখিনতা ও ভ্রমণবিলাসের প্রবণতা বাড়ছে। এটি খুবই ইতিবাচক একটি দিক। কারণ এখন দেশের মধ্যবিত্ত এমনকি নিম্নবিত্তরাও সময়-সুযোগ পেলেই পরিবার পরিজন নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করে। ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে পর্যটনের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি ক্ষেত্রে ফেসবুক, ই্উটিউবসহ সামাজিকমাধ্যমগুলো বিরাট ভূমিকা রাখছে। বিশেষত ফেসবুকের কল্যাণে ভ্রমণপিপাসু মানুষের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ানোর ছবি ও ভিডিও ক্লিপগুলো সর্বসাধারণকে ভ্রমণে উৎসাহী করে তুলছে। এছাড়া পর্যটন নিয়ে ব্যাপকভাবে লেখালেখি হচ্ছে। এসবের মাধ্যমে নতুন নতুন পর্যটন কেন্দ্রের আবিষ্কার এবং ভ্রমণে এসব স্থান ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। নিচে কিছু পর্যটন ক্ষেত্র নিয়ে আলোকপাত করা হলো-

স্কুল ট্যরিজম : মালয়েশিয়ার আদলে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বছরে একবার ‘স্কুল ট্যুরিজম’ বা শিক্ষা সফর আয়োজন বাধ্যতামূলক করা দরকার। এরফলে প্রজন্মের সন্তানরা দেশনে চিনবে, জানবে, ভালোবাসবে। পাশাপাশি আয় হবে শত কোটি টাকা। শুধুমাত্র বিদেশি পর্যটকদের নির্ভরতায় না থেকে ‘দেশকে চিনুন, দেশকে জানুন’ ‘ঘুরে দেখুন বাংলাদেশ, ভালোবাসুন বাংলাদেশ’ এ রকম দেশাত্মক স্লোগানে দেশের মানুষকে দেশ দেশ দেখানোর লক্ষ্যে ব্যাপক প্রচারণা চালানো দরকার।

নৌ পর্যটন : বাংলাদেশের নদীগুলোর অবস্থা করুণ হলেও বিশ্বের অনেক দেশেই এমন নদীবিধৌত ভূখণ্ড নেই। তাই আরামদায়ক ও পরিবেশ-প্রকৃতিবান্ধব পর্যটন হিসেবে রিভার ট্যুরিজম বা নৌপর্যটনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর কথা ভাবা দরকার। রাঙামাটি, কাপ্তাই, বান্দরবান, খুলনা, বাগেরহাট ও সুনামগঞ্জ অঞ্চলে নৌপর্যটন জনপ্রিয়তা পেতে পারে। আমরা জানি, শহরের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরো সুগম করা এবং পর্যটকদের বাড়তি আকর্ষণ সৃষ্টির লক্ষ্যে এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা, আমেরিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে শহরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে নতুন মাত্রা যুক্ত করার জন্য খাল কেটে নদী এবং সাগরের পানি শহরের ভেতর আনা হয়েছে। এসব কারণে ভারতের কেরালা, জম্মু কাশ্মীর কিংবা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা ও মরিশাসে নৌপর্যটন জনপ্রিয়তা পেয়েছে। পরিকল্পিত উপায়ে অগ্রসর হলে নৌট্যুরিজম আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে সমৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠতে পারে।

হাওরাঞ্চলের পর্যটন : হাওরের সৌন্দর্যে বিখ্যাত চীনা পর্যটক হিউয়েন সাং থেকে শুরু করে দেশ-বিদেশের বিখ্যাত পর্যটকরা বিমোহিত হয়েছেন। সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা হাওরকে ‘উড়াল পঙ্খির দেশ’ হিসেবেও আখ্যায়িত করেছেন। আশার খবর হচ্ছে, হাওরাঞ্চলের আকর্ষণীয় স্থানগুলোর প্রতি ভ্রমণপিপাসুদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। শীতে কুয়াশাচ্ছন্ন হাওরে থাকে অতিথি পাখির অবাধ বিচরণ। বর্ষায় হাওরের ছোট ছোট দ্বীপের মতো বাড়িঘর। আমাদের সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধিতেও হাওরের রয়েছে অনন্য অবদান। হাসন রাজা, উকিল মুন্সী, বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের হাত ধরে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে হাওরাঞ্চলের সঙ্গীতভাণ্ডার। হাওরাঞ্চলের হিজল-তমাল বন আকৃষ্ট করে সৌন্দর্যপিপাসুদের। দেশের সাতটি জেলার ৭ লাখ ৮৪ হাজার হেক্টর জলাভূমিতে ৪২৩টি হাওর নিয়ে গঠিত হাওরাঞ্চলে শীত-বর্ষায় হাওরের স্বতন্ত্র রূপ প্রকৃতিপ্রেমীদের দুর্নিবার আকর্ষণে টেনে নিয়ে যায় পর্যটকদের। এ কারণে বিশাল এই হাওর বাংলাকে কেন্দ্র করে আমাদের পর্যটন শিল্প সমৃদ্ধ হতে পারে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সমাগমে। সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা গেলে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলের এ হাওরগুলো দেশের অন্যতম পর্যটন ক্ষেত্রে পরিণত হতে পারে। খালিয়াজুড়ি, মোহনগঞ্জ, তেঁতুলিয়া, কিশোরগঞ্জ, নিকলী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সুনামগঞ্জ, তাহেরপুর, মধ্যনগর, ভোলাগঞ্জ, টেকেরহাট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, জামালগঞ্জ- এসব জায়গায় বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মাধ্যমে পর্যটকদের থাকা, খাওয়া আর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা দরকার। হাওর সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন করা খুবই জরুরি। হাওরাঞ্চলে যাতায়াতের জন্য রাস্তা নির্মাণ, ডুবু সড়কসহ হাওরের অমসৃণ রাস্তায় চলাচলের উপযোগী মোটরসাইকেলের মতো তিন চাকার বিশেষ বাইক তৈরি করা প্রয়োজন- যাতে চালকসহ তিন-চারজন যাত্রী বহন করা যায়।

স্পোর্টস ট্যুরিজম : বাংলাদেশের স্পোর্টস ট্যুরিজম বিষয়ে এফবিসিসিআই স্ট্যান্ডিং কমিটি অন স্পোর্টস ট্যুরিজম আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বলা হয়, বাংলাদেশের স্পোর্টসকে যদি সত্যিকার অর্থে পর্যটনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা যায়, তাহলে নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প সমৃদ্ধ হবে। এশিয়ান জার্নাল অন স্পোর্টস অ্যান্ড ইকোনমির একটি আর্টিকেল থেকে জানা যায়, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে ক্রীড়া পর্যটনে এশিয়ায় এগিয়ে থাকা দেশগুলো হলো- ভারত ১১ শতাংশ, চীন ১০ শতাংশ, থাইল্যান্ড ৯ শতাংশ, কোরিয়া ৮ শতাংশ, মালয়েশিয়া ৭ শতাংশ, শ্রীলঙ্কা ৫ শতাংশ ও নেপাল ৪ শতাংশ। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ অংশীদারত্ব ২ ভাগেরও নিচে। আমাদের গ্রামীণ খেলা নৌকাবাইচ, হা-ডু-ডু, লাঠিখেলা, বলিখেলাগুলো যদি বিশ্বে প্রচার করা যায়, তাহলে বাংলাদেশকে ট্রুলি স্পোর্টস লাভিং কান্ট্রি হিসেবে বহির্বিশ্বে উপস্থাপন করা সম্ভব হবে।

ইসলামিক পর্যটন : ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের তাবরিজ শহরকে ২০১৮ সালের জন্য ইসলামিক পর্যটন রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা জানি, পর্যটন শিল্প প্রসারের লক্ষ্যে সৌদি সরকার পবিত্র ওমরাকে অন্তর্ভুক্ত করে ‘ইসলামিক ট্যুরিজমে’র উদ্যোগ নিয়েছে। সৌদি সরকারের এমন উদ্যোগের সঙ্গে অনেকটাই একমত বাংলাদেশসহ মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ দেশ। বাংলাদেশে ধর্মীয় ট্যুরিজমের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে বলে এক গবেষণায় দেখিয়েছেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম ও হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের শিক্ষক শারমিন সুলতানা। তার গবেষণায় বলা হয়েছে, মসজিদ, মন্দির ও গির্জা পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান। একইভাবে বাংলাদেশে বিশ্ব ইজতেমাও হয়। এটিও সুশৃঙ্খলভাবে করতে পারলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব।

কমিউনিটি ট্যুরিজম : পরিবর্তন এসেছে পর্যটকদের রুচির। বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের পাশাপাশি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতি জানতে আগ্রহ বাড়ছে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের। তাই দেশে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কমিউনিটি ট্যুরিজম। যেখানে প্রকৃতির খুব কাছাকাছি বা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সময় কাটান পর্যটকরা। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ কয়েকটি এলাকায় কমিউনিটি ট্যুরিজম চালু হলেও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নিজস্ব ঐতিহ্য নিয়ে চালু হতে পারে সম্ভাবনাময় পর্যটনের নতুন দিগন্ত।

মেডিকেল ট্যুরিজম : বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশে মেডিকেল ট্যুরিজম প্রসারে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। দুবাই মেডিকেল ট্যুরিজমের মধ্যে বিশ্বের ১৫টি গন্তব্যের একটি এ অঞ্চলের মধ্যে প্রথম হতে চাইছে। মেডিকেল ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের ২০১৪ সালে প্রকাশিত মেডিকেল ডেস্টিনেশন ইনডেক্স (এমটিডিআই) অনুযায়ী দুবাইয়ের অবস্থান ১৭তম। অ্যারাবিয়ান বিজনেসের খবর অনুযায়ী, ২০১৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে স্থানীয় ও বিদেশ থেকে আগত মোট ১ লাখ ১৮ হাজার ৭২৭ জন মেডিকেল ট্যুরিস্টকে (চিকিৎসার জন্য আগত) চিকিৎসাসেবা দিয়েছে দুবাই। মেডিকেল ট্যুরিজমের মাধ্যমে প্রথম প্রান্তিকে প্রায় ২১১ মিলিয়ন ডলার রাজস্ব আয় করেছে দেশটি। দুবাই স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণ ও ডিএইচএর দুবাই মেডিকেল ট্যুরিজম প্রকল্পের পরিচালক ডা. লায়লা আল মারজোকি জানিয়েছেন, ২০২০ সাল নাগাদ অতিরিক্ত ২০ শতাংশসহ নির্ধারিত ২ দশমিক ৬ বিলিয়নের বেশি রাজস্ব আয় হবে এ খাত থেকে।

পর্যটনে তরুণদের আগ্রহ ইতিবাচক : আশার খবর হচ্ছে, দেশ ঘুরে দেখার আগ্রহ বাড়ছে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে। পড়াশোনা ও কাজের ফাঁকে এখন গ্রুপভিত্তিক তরুণ-তরুণীরা দেশের বিভিন্ন পর্যটন স্পটে ঘুরে বেড়াচ্ছে। লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে, পর্যটনে বাড়ছে নারীদের আগ্রহ। বাংলাদেশে নারীরা এখন একাই বেরিয়ে পড়ছে। আরেকটি লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে, বিগত ১০ বছরে ঈদকে কেন্দ্র করে নাগরিকদের মধ্যে ভ্রমণপ্রবণতা নতুন আশাবাদ জাগাচ্ছে। ঈদ পর্যটনে বাংলাদেশের সম্ভাবনার নতুন দ্বার খুলেছে। কারণ ব্যস্ত কর্মজীবনে ঈদের ছুটিকে মানুষ এখন গ্রামের বাড়ি বেড়ানোর পাশাপাশি নিজ এলাকা ও অন্যান্য স্থানেও ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করে। বিশ্বের বড় মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়ার আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আসে ঈদ পর্যটনকে কেন্দ্র করে। তাই আমাদের দেশেও ঈদকে কেন্দ্র করে মানুষের সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি পর্যটন শিল্পও জড়িত হতে পারে। পরিসংখ্যান অনুসারে, প্রতি ঈদে প্রায় ২ থেকে ৩ লাখ পর্যটক ভ্রমণ করে কক্সবাজার, যেখানে সারা বছর কক্সবাজার ভ্রমণে যায় ১৫ থেকে ২০ লাখ পর্যটক। ঈদকে কেন্দ্র করে বিশেষ পর্যটন স্থানগুলো ছাড়াও জেলা পর্যায়ে ভ্রমণে বিশেষ প্যাকেজ থাকলে ঈদ পর্যটনের আয় ও জনপ্রিয়তা আরো বাড়বে।

লেখক : কৃষি-অর্থনীতি

বিশ্লেষক ও কলামিস্ট

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত