ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মাদকাসক্তিতে বিপন্ন তরুণ সমাজ

সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই
মাদকাসক্তিতে বিপন্ন তরুণ সমাজ

মাদক যে একটা সর্বনাশা নেশা, সেটা শুধু তারাই অনুধাবন করতে পারেন, যাদের পরিবারের কোনো সদস্য মাদকাসক্ত। মাদকে আসক্ত সদস্য নিয়ে শুধু পরিবারের মধ্যে নয়, আত্মীয়স্বজনাও নানা কারণে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। কেন না, মাদকাসক্তির নেশার টাকা জোগাড় করার জন্য মাদকে আসক্তরা আত্মীয়স্বজনের কাছে ধরনা দেয়। তাদের কাছে গিয়ে নানা রকমের মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে অর্থকড়ি হাতিয়ে নেয়। বাবা-মায়ের কথা বলে আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে মাদকদ্রব্য কিনে আসক্তি মেটায়। মাদকাক্ত সদস্যকে নিয়ে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে অনেকেই অংশ নেন না। মাদকাসক্ত সদস্যের অত্যাচার কীভাবে নিবৃত্ত করা যাব তা নিয়েও দুশ্চিন্তার শেষ নেই। আমাদের দেশে অনেক মাদক নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে। তবে সেখান থেকে চিকিৎসা নেয়ার পর মানুষ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে, সেই নিশ্চিয়তাও নেই। অনেক সময় মাদক নিরাময় কেন্দ্রে সেবাপ্রার্থীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। প্রশাসনের অবহেলার কারণে দিন দিন মাদকের বিস্তার ঘটছে। দেশে মাদকের বিস্তার ভয়াবহ রূপ লাভ করেছে। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সব সম্ভাবনা ধ্বংসের মূলেই মাদক। মাদকাসক্তদের শীর্ষে রয়েছে আমার তরুণ সমাজ। সর্বনাশা মাদকের মরণ ছোবলে আক্রান্ত তরুণ ও যুবসমাজ আজ ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে। মাদক জন্ম দিচ্ছে একের পর এক অপরাধ। সেই সঙ্গে মাদক সেবনে কিডনি ও স্নায়ুর জটিলতাসহ শরীরের সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি হয়। পাশাপাশি বদমেজাজ, চরম অবসাদ, আত্মহত্যার প্রবণতা, অসংলগ্ন ব্যবহার, হ্যালুসিনেশন, ভুলে যাওয়া, দুর্বলচিত্ততা, হতাশা ইত্যাদি মানসিক বিকারের শিকার হয় মাদকাসক্ত ব্যক্তি। স্ট্রোকে মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে মাদকাসক্তের সংখ্যাও সর্বাধিক।

বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরাও মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। এছাড়া বাংলাদেশে এমন কোনো পেশা নেই, যেখানে মাদক নেই। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যাপক হারে মাদক ঢুকছে। মাদকাসক্ত তরুণদের মধ্যে শিক্ষিতের হারই বেশি। অল্প বয়সে তারা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, অনেকে শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে যাচ্ছে। দেশের সর্বত্র মাদক এখন অনেকটা সহজলভ্য। শহর-নগর, গ্রামসহ মফস্বল এলাকায়ও হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়। ইয়াবা, হেরোইন, ফেনসিডিল, গাঁজা, আফিম, চরশ, বাংলা মদ, গুল, মরফিন, কোকেন, হেরোইন, প্যাথেলিন, মারিজুয়ানা, ডেক্রপরটেন, প্যাথেড্রিন, কোকেন, ইকসটামি, এলএসডি, ইলিকসার, চোলাইমদসহ রকমারি মাদকের সঙ্গে তরুণদের সংশ্লিষ্টতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। একজন মাদকাসক্ত সন্তানের কারণে একটি পরিবার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সেই সন্তানকে নিয়ে পরিবারগুলো দিশাহারা হয়ে পড়ছে। অভিভাবকরা বলেন, মাদকসক্ত সন্তানের কারণে সর্বস্বান্ত হয়েছেন তারা। ভয়ংকর পরিস্থিতির শিকার তারা। মাদকাসক্ত সন্তানরা প্রায়ই মা-বাবার সঙ্গে খারাপ আচরণ করে, এমনকি চাহিদা অনুযায়ী অর্থ না দিলে মারধরও করে। খুনখারাবির মতো জঘন্য অপরাধের মূলেও মাদক। মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা, জরিমানা, গ্রেপ্তার ও শাস্তি প্রদান করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। দিন দিন মাদকের চাহিদা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের সমন্বয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। একশ্রেণির প্রভাবশালীর কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইচ্ছা করলেও মাদকের প্রসার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন। ধর্মীয় সংগঠনের নেতা, সব জনপ্রতিনিধি, সব দলের রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষ মাদক নির্মূলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে না তুললে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। প্রতি মাসে মাদকসংক্রান্ত অপরাধে গ্রেপ্তারকৃতদের সংখ্যাই সর্বাধিক, উদ্ধারও হচ্ছে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য। তার পরও মাদক ব্যবসা বন্ধ হচ্ছে না। পুলিশের একার পক্ষে মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। মাদক নির্মূল করতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। ‘মাদক আমাদের জন্য হুমকি। এটা কারো একার পক্ষে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে হবে। মাদক সেবন ও বিক্রি যারা করবে, তাদের ধরিয়ে দিতে সর্বস্তরের মানুষের এগিয়ে আসা প্রয়োজন। তরুণ সমাজ, দেশকে রক্ষা করতে হলে মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। মাদকে আসক্ত করতে তরুণদের টার্গেট করা হয়। প্রথমে ছলেবলে, আলাপের ছলে বিনামূল্যে মাদক দেওয়া হয়। পরে তারা মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ে। সব ধরনের রোগে তারা আক্রান্ত হয়। স্থায়ীভাবে যৌন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। মাদকের কারণে মানবিক বিপর্যয় ঘটছে। দেশের তরুণ সমাজকে রক্ষা করতে হলে মাদকের বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে সব শ্রেণিপেশার মানুষের সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। পরিবারের মতো অনেক পরিবার মাদকাসক্তদের চিকিৎসা করাতে গিয়ে আজ সর্বান্ত। মাদক নির্মূলে রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনসহ সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া এটি নির্মূল সম্ভব নয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত