ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অসম বিয়ে ও সামাজিক সংকট

বয়স নির্ধারণে আদালতের নির্দেশনা দরকার
অসম বিয়ে ও সামাজিক সংকট

ঢাকার মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সাবেক সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদ ও একই প্রতিষ্ঠানের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী সিনথিয়া ইসলাম তিশার মধ্যে বিয়ে হওয়ার পর খবরটি এখন অনেক খানি মুখরোচক। এ নিয়ে আলোচনা সমালোচনা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষ নানা রকম মন্তব্য করছেন। কেউ মুশতাকের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করছেন এই বলে এই বৃদ্ধ লোকটি আজ বাদে কাল মারা যাবেন। তিনি আগে বিয়ে করেছেন কিনা তাও জানা যায়নি। তিনি কেন একজন নাতির বয়সী মেয়েকে বিয়ে করলেন। জেদ কিংবা আবেগের কাছে পরাজিত হয়ে তিনি বিয়ে করেছেন কিনা সেটাও জানা যায়নি। তার বিয়ের দরকার হলে তিনি তার সমকক্ষ কোন একজন নারীকে বিয়ে করতে পারতেন। তিনি তার সম বয়েসী একজন নারীকে বিয়ে করলে তাতে কোন সমস্যা ছিলনা। তবে তিনি সর্বনাশটা করেছেন একজন কিশোরী মেয়েকে বিয়ে করে। এই মেয়েটির সংসারটা কতটা সুখের হবে তা দেখার জন্য হয়তো দুই এক বছর অপেক্ষা করতে হবে। এই বিয়েটা মুশতাক ব্যক্তিহগতভাবে কিভাবে নিয়েছেন তাও বোধগম্য নয়। তিশাই বা কিভাবে বিয়ে করলেন সেটাও জানা দরকার। কেননা আমাদের পরিবারের তিশার মতো অনেক মেয়ে আছে। তারাও যেন আগামী দিনে তিশার মতো জীবন বেছে না নেয় সে জন্য একটা নৈতিক শিক্ষা গ্রহণ করা দরকার। মুশতাক তিশা এখন মানুষের বিনোদনের খোরাক হলেও তিশার অসহায় পরিবারের কাছে তা বিষাদের মতো। তিশার ওপর মানুষ ক্ষুব্দ এ কারণে যে টাকা পয়সা থাকলেই যে একজন দাদার বয়সী পুরুষের জীবন সঙ্গী হতে হবে সেটা কেমন কথা। মানুষ কোন বিয়ে করে সেই সাধারণ জ্ঞান তার এই বয়সে হওয়ার কথা। তিশা স্বামীর কাছ থেকে সেই অধিকার হয়তো পাবেনা। তা ছাড়া শিক্ষাজীবনের মাঝামাঝি পর্যায়ে এসে একজন বৃদ্ধকে বিয়ে করায় তাকে নিয়ে সমাজ ও আত্মীয়-স্বজন পর্যায়ে কি ধরণের কথাবার্তা হচ্ছে বা আগামী দিনেও হবে সেই আগাম চিন্তা চেতনা তার মধ্যে কেন গড়ে উঠলনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মানুষ বলছে মুশতাকের অর্থ কড়ি আছে তাই তিশা তাকে বিয়ে করেছে। এ ব্যাপারে মুশতাক ও তিশা দুই জনে মিলে জনসম্মুখে তাদের অবস্থান তুলে ধরলে আমাদের সমাজে তিশা ও মুশতাকের মতো মনোভাবাপন্ন মানুষ সতর্ক হবেন। তাদের এই ধরণের জীবন যাপন মানুষ স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে পারছেনা। তারা দুই জনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে ভিডিও ছিড়েছে তা সরিয়ে নিতে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জাকির হোসাইনের পক্ষে অ্যাডভোকেট মো. তানভীরুল ইসলাম। ডাকযোগে পাঠানো এ নোটিশে বলা হয়, এই দম্পতির অসম বিয়ে, বিয়ের পূর্বের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে তারা ভিডিও তৈরি করছেন এবং সাক্ষাৎকার দিয়ে সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করছেন। মুশতাক-তিশার এ ধরনের ভিডিও সমাজের জন্য কোনো উপকার বয়ে আনে না। বরং তরুণ প্রজন্মকে কুপথের দিকে ধাবিত করে। নোটিশ পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে মুশতাক-তিশা দম্পতির দৃশ্যমান যত প্রকাশনা, ভিডিও ও সাক্ষাৎকার রয়েছে তা সরিয়ে নিতে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো ভিডিও তৈরি থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। যদি নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে ভিডিও যদি ডিলিট না করা হয় এবং ভবিষ্যতে মুশতাক-তিশা দম্পতির এমন ভিডিও করতে থাকে তাহলে সাইবার সিকিউরিটি আইন, ২০২৩ ও দেশের প্রচলিত আইনের অধীনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে। মুশতাক ও তিশার বিয়ের খবর পুরনো। তবে অমর একুশে বইমেলায় মুশতাকের লেখা দুটি বই প্রকাশ নিয়ে নতুন করে আলোচনায় আসে এ দম্পতি। তাদের নিয়ে সমালোচনাও কম হচ্ছেনা। কয়েকদিন আগে তিশা-মুশতাক দম্পতিকে এক প্রকার তাড়া করে বইমেলা ছাড়া করেন পাঠক, ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা। এ নিয়ে নিজেদের নিরাপত্তা চেয়ে শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন তারা। দ্বারস্থ হয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছেও। এদিকে, ধর্ষণের অভিযোগে মুশতাকের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের ১ আগস্ট ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮-এ নালিশি মামলা করেন তিশার বাবা সাইফুল ইসলাম। সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালতের শর্ত অনুযায়ী, মুশতাক ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ থেকে পদত্যাগ করেন। অভিযোগ রয়েছে তিশাকে ক্লাস থেকে অধ্যক্ষের রুমে ডেকে নিয়ে বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখাত মুশতাক। কিছুদিন পর মুশতাক তাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কুপ্রস্তাব দেন। এতে রাজি না হওয়ায় তিশাকে তুলে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক বিয়ে করেন মুশতাক। পাশাপাশি ভুক্তভোগী ও তার পরিবারকে ঢাকা ছাড়া করবেন বলেও হুমকি দেন মুশতাক। তিশার বাবা সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন তার মেয়ে তিশাকে ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ে করেছেন মুশতাক। মুশতাক তার মেয়ের অশ্লীল ছবি ও ভিডিও ধারণ করে রেখেছে। পরে সেগুলোকে পুঁজি করে তিশাকে ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ে করেছেন। তিনি এভাবে অনেক মেয়ের জীবন নষ্ট করেছেন। শেষ পর্যন্ত আইনি লড়াই চালিয়ে যাবো। তবে সাইফুল ইসলামের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মুশতাক।

তিনিও বলেছেন, আমি তিশাকে দেশের আইন মেনে এবং ইসলামি শরিয়াহ মোতাবেক বিয়ে করেছি। তাকে বিয়ে করার জন্য কোনো জবরদস্তি করিনি। ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলা থেকে মুশতাকে অব্যাহতির সুপারিশ করে ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান থানার উপপরিদর্শক সোহেল রানা। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ৩ মার্চ এ মামলার শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এর বিচারক বেগম মাফরোজা পারভীন। স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মুশতাকের সঙ্গে পরিচয় হয় তিশার। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এমনকি বিভিন্ন সময়ে স্কুল ফাঁকি দিয়ে খন্দকার মুশতাকের সঙ্গে ঘুরতে যেতেন তিশা। ২০২৩ সালের ২৫ মার্চ তিশা স্বেচ্ছায় ১০ লাখ টাকা দেনমোহরে মুশতাকেকে বিয়ে করেন। রাজধানীর বিজয়নগর কাজী অফিসে ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী তাদের বিয়ে হয়। বিয়ে হওয়ার মধ্য দিয়ে তা বৈধতা পেয়েছে। তবে নায্যতা পায়নি। এই বিয়েটি একটি অসম বিয়ে এবং এতে সামাজিক সংকট তৈরি হয়েছে। মুশতাক ও তিশা আমাদের সমাজ এবং আইন আদালতের কাছে একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তাদের কি করা উচিত ছিল কিংবা এখন এবং আগামী দিনে তাদের কর্মকান্ড কেমন হবে সে ব্যাপারে আদালতের একটা দিক নির্দেশনা দরকার। মুশতাক-তিশা সম্পর্কটা অস্বাভাবিক বলেই মনে করছেন অভিভাবকরা। তারাও তাদের কন্যা সন্তানদের জীবনাচরণ নিয়ে উৎকন্ঠিত।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত