ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কিশোর গ্যাংয়ের উত্থান ও সামাজিক সমস্যা

প্রতিরোধে কঠোর হতে হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে
কিশোর গ্যাংয়ের উত্থান ও সামাজিক সমস্যা

ঢাকার যাত্রাবাড়ী ও কেরানীগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের ৫০ সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‌্যাব। শুধু র‌্যাব নয়, পুলিশসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরও কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে। গত মঙ্গলবার রাতে পৃথক পৃথক অভিযান চালিয়ে র‌্যাব তাদের আটক করা হয়। মাদক ও কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে ‘অলআউট অ্যাকশনে’ যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন র‌্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন। তিনি বলেছেন, বর্তমানে বাংলাদেশ হচ্ছে মাদকের একটি ট্রানজিট রুট। এ থেকে বাঁচতে হলে সবাইকে সম্মিলিতভাবে মাদকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে। রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও মিরপুরে এই কিশোর গ্যাংয়ের বিস্তার খুব বেড়ে যাওয়ার পর র‌্যাবের অভিযানে তা অনেকখানি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কিশোর গ্যাংকে কেউ না কেউ আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়- উল্লেখ করে এম খুরশীদ হোসেন বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি কিশোর গ্যাংকে সমূল কীভাবে বিনাশ করা যায়। পাশাপাশি যারা তাদের পরিচালনা করছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। আমরা চাই, সমাজের মানুষ যাতে কিশোর গ্যাংয়ের হাত থেকে রেহাই পায়।

মাদক নিয়ে র‌্যাবের মহাপরিচালক বলেন, মাদকের বিষয়টি এমন হয়েছে যে, শুধু পুলিশ-র‌্যাব ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর দিয়ে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশ মাদক নিয়ন্ত্রণে অনেক বেআইনি পদক্ষেপ নিলেও আমরা সেই পথে যাচ্ছি না, আইনের মধ্যে থেকেই মাদক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি। বাংলাদেশের সমাজ দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। নৈতিকতার সূত্রটি হচ্ছে- ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস-অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ’। শৈশবে সঙ্গী বা বন্ধু নির্বাচন নিয়ে হিসাবি হতে হবে। গত ১০ থেকে ১৫ বছরে বাংলাদেশে নতুন ধরনের অপরাধী গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। এ কথা সত্য, শতভাগ অপরাধমুক্ত সমাজ নেই, যা বিবেচনায় নিতে হবে তা হলো, সমাজে আবির্ভূত অপরাধগুলো কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। একটি সমাজে নতুন ধরনের অপরাধচর্চা শুরু হলে তার বিহিত করা খুব সহজ নয়। গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের সমাজে যে নতুন ধরনের অপরাধ ও অপরাধী চক্র গড়ে উঠেছে, সেগুলো কিশোর গ্যাং নামে পরিচিত। রাজধানীর পাড়া-মহল্লায় কিশোর গ্যাংয়ের বিনাশি কর্মকাণ্ড সামাজিক নেতাদের ভাবিয়ে তুলেছে। বয়সের দিক থেকে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা ১৭ থেকে ১৮ বছর বয়সের। একেকটি গ্যাং ছয় থেকে সাতজনকে নিয়ে গড়ে ওঠে। এরা যেসব অপরাধ করে, সেগুলো অনেক ক্ষত্রেই ভিন্ন ধরনের। এদের উৎপাতে পাড়া-মহল্লায় শান্তি বিনষ্ট হচ্ছে এবং তা সমাজপতিদের উদ্বিগ্ন করে তুলছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সংশ্লেষ দেখা যায়। এর ফলে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। এদের ব্যবহার করে ভোট জালিয়াতি করা হয়, রাজনৈতিক বিরোধীদের ভয় দেখানো হয়। সমাজকে কিশোর গ্যাংয়ের আস্ফালন ও বাড়াবাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে প্রয়োজন নষ্ট রাজনীতিকে প্রতিহত করা। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা আরো অনেক ধরনের অপরাধকর্ম করে। ইভটিজিং এদের এক ধরনের খেলায় পরিণত হয়েছে। রাজনীতিকে খেলা মনে করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা রাজনীতিকে আরো বিষাক্ত করে তুলবে। বিষাক্ত রাজনীতি দিয়ে রাষ্ট্রের নাগরিকরা কোনোরকম ভালো কাজ করতে সক্ষম হবেন না। মানুষ তার জীবনে কোনো না কোনো একটি সময়ে অপরাধ করতে পারে। অপরাধ বিজ্ঞানের একটি ধারণা থেকে জানা যায়, ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত সময়ে মানুষ কিছুটা হলেও অপরাধপ্রবণ থাকে। দেখা গেছে, এ বয়সে যারা নিয়মিত অপরাধ করেছে, তারা এ বয়সটি পেরিয়ে এসে অপরাধমূলক কাজে যুক্ত থাকে না। বাংলাদেশে কিশোর অপরাধীরা এ রকম বয়সেই সমাজের জন্য ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। অর্থনীতির ক্ষেত্রে এ পরিস্থিতি ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড লাভ করার জন্যও বাধা হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশে এখনো আমরা কাদের কিশোর অপরাধী বলব, তা নিয়ে আরো চিন্তা করার অবকাশ আছে। কিশোর অপরাধীদের সমাজে পুনর্বাসিত করার জন্য আমাদের কার্যকর পদ্ধতি খুঁজে বের করতে হবে। এসব অপরাধীকে কিশোর সংশোধনাগারে পৌঁছানো হলেই দায়িত্ব এড়ানো যায় না। যেহেতু কিশোর গ্যাংয়ের মাধ্যমে অল্প বয়সি অপরাধী তৈরি হয়েছে, সেহেতু এ বিষয়ে অবশ্যই যৌক্তিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কিশোর গ্যাং এখন একটা সামাজিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু কীভাবে এই উপদ্রব থেকে মানুষ রেহাই পেতে পারে, সে ব্যাপারে একটি সমন্বিত কর্মপন্থা বের করতে হবে। কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত