অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ পদক্ষেপ ও সমাধান

মো. মাঈনউদ্দিন

প্রকাশ : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের অর্থনীতির কথা বলতে গেলে উঠে আসে মূল্য, ডলার সংকট, হুন্ডি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া, আর্থিক খাতের বিশৃঙ্খলা, দুর্নীতি ও বৈষম্য প্রসঙ্গ। সংবাদপত্র ও টিভির টক শোতেও এসব বিষয় নিয়ে নিয়মিত আড্ডা দেখা যায়। সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির অবস্থা। এছাড়া অর্থনীতিতে রয়েছে নানা ক্ষত, সংকট ও চ্যালেঞ্জ। চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে মূল্য নিয়ন্ত্রণে আনা, ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা আনা, বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ বৃদ্ধি করা, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি, রপ্তানি বাজার ঠিক রাখা, অর্থপাচার, সিন্ডিকেট দমন, ব্যাংক খাতের সংস্কার ও জ্বালানি তেলের সরবরাহ ঠিক রাখা। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিবেদনেও বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান পাঁচটি ঝুঁকির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হিসেবে জ্বালানি স্বল্পতাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। অন্য ঝুঁকিগুলো হলো উচ্চমূল্য ও প্রবৃদ্ধির গতি কমে যাওয়া? সম্পদ ও আয় বৈষম্য, সরকারি ঋণ বেড়ে যাওয়া ও বেকারত্ব। শিল্প খাতের বড় সমস্যা হলো চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ না থাকা। ক্ষুদ্র বাজারি শিল্পগুলো চাহিদা মতো গ্যাস পাচ্ছে না। একইসঙ্গে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণে শিল্পের উৎপাদন খরচ বাড়ছে, শিল্পের সম্প্রসারণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, কর্মসংস্থান হ্রাস পাচ্ছে। তার মানে বেকারত্ব বৃদ্ধি প্রবণতা দেখা দিচ্ছে। অর্থনীতিতে ক্রমাগতভাবে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ঊর্ধ্বমুখী প্রভাবে নিম্নবিত্ত মধ্যবিত্তসহ সবাই বড় কষ্টে দিনাতিপাত করছে। তাছাড়া মূল্যস্ফীতির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবও রয়েছে। প্রত্যক্ষ প্রভাবের মধ্যে শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির দাবি ও মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া। পরোক্ষ প্রভাব হলো উচ্চমূল্য স্ফীতি কারণে ব্যবসায়ীদের দীর্ঘবিরোধী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তার মুখে পতিত হওয়া। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে লেনদেনের ভারসাম্য থাকে না। ব্যবসায়ীদের ঋণপত্র এলসি খুলতেও সমস্যা হয়। রপ্তানিকারকদের রপ্তানিতে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা কমে যায়? অর্থনীতির গবেষণায় দেখা যায় বর্তমানে অর্থনীতিতে বড় ক্ষত হলো বৈষম্য ও দুর্নীতি। গিনি সহগের মাত্রা থেকে জানা যায়, দেশের বৈষম্য এখন বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। আঞ্চলিক বৈষম্য ক্রমবর্ধমানভাবে বেড়ে চলেছে। অর্থনীতিতে সম্পদ ও আয় উভয়ের মধ্যে বৈষম্য উন্নতম ঝুঁকির কারণ। সিপিডির গবেষণা দেখা যায়, উচ্চ আয় বৈষম্য থাকলে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা তেমন একটি বাড়ে না। সমাজে উচ্চ শ্রেণির মানুষের হাতে সম্পদ ও অর্থ জড়ো হলে তারা অতিরিক্ত অর্থ বেশি ব্যয় করে না। অনেকে অর্থ বিদেশে ব্যয় করেন। মধ্যম শ্রেণির ভোক্তারা হলো সমাজের মূল ভোক্তা। তাদের আয় না বাড়লে অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের গতি কমে যায়? সমাজে উচ্চ বৈষম্য থাকলে সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হয়। একসময়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে নানা প্রতিকূলতা দেখা দেয়। দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলছে ডলার সংকট। এতে আমদানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আব্দুলনির্ভর অর্থনীতিতে দীর্ঘ সময় ধরে আবদালি বাধাগ্রস্ত হওয়ায় এর ক্ষত ছড়িয়ে পড়েছে। শিল্প খাতে সব উপকরণ আমদানি করা উৎপাদন ও নতুন শিল্প স্থাপন হ্রাস পেয়েছে। থেকে দেশি-বিদেশি ফলে বেড়েছে সব পণ্যের দাম ও মূল্যস্ফীতির। কবে যাচ্ছে মানুষের জীবনযাত্রার মান? সরকার আমদানি নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ নিলেও শতভাগ মার্জিনে অনেকেই এলসি করলে ডলারের কারণে রিজার্ভ থেকে ডলার দিয়ে দেনা শোধ করতে হচ্ছে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্স ও কাঙ্ক্ষিত হারে না আসায় বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ দিনদিন বাড়ছে।