তারুণ্যের ভাবনায় ভাষার মাস

হাসান মাহমুদ শুভ

প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

বছর ঘুরে আবার এসেছে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। মনের ভাব প্রকাশের ধারক ও বাহক হলো- ভাষা। প্রতিটি জাতির নিজস্ব ভাষা থাকে। ঠিক তেমনি আমাদের হচ্ছে- বাংলা ভাষা তথা মায়ের মুখের ভাষা। আর এই বাংলা ভাষাকে বিশ্বের বুকে সু-প্রতিষ্ঠিত করতে পলাশ, কৃষ্ণচূড়ার রাঙা ফাগুনে তাজা রক্ত দিয়ে জীবন্ত ইতিহাস রচনা করেন বাংলার দামাল ছেলেরা। যা বিশ্বের বুকে কোথাও এমন নজির নেই। যা আমরা পেরেছি। বাংলার দামাল তরুণরা পেরেছে। জীবনের বিনিময়ে পাওয়া বাংলা ভাষার যথাযথ মর্যাদা আমরা কি রক্ষা করতে পেরেছি? 

-না, পারিনি! জেঁকে বসা অপসংস্কৃতি আর ভিনদেশী ভাষার ক্রমশ আগ্রাসনে হারিয়ে বসেছে নিজস্ব অস্তিত্ব এবং অহংকার। কিন্তু, কেন? আমরা বোধহয় ভুলে গেছি বাংলা ভাষা আমাদের অস্তিত্ব। আমাদের শেকড়। এই শেকড় টিকিয়ে রাখতে হবে। যত্ন করতে হবে। না হয় একদিন আমরা অস্তিত্বহীনতা অনুভব করব। তখন খুব বেশি আফসোস হবে। লাভ হবে না তখন! সময় আছে এখনো। আমরা যেভাবে ভাষার অপপ্রয়োগ শুরু করেছি, খুব শিগগিরই ভাষাগত ঐতিহ্য হারিয়ে যাবে। হারিয়ে যাওয়ার পথে। কাগজে কলমে রাষ্ট্রীয় ভাষা বাংলা হলেও জনমুখে বাংলা ভাষার পুরোপুরি স্থান পায় নাই। দুঃখজনক! বাংলা ভাষা জানা যেমন জরুরি ঠিক তেমনি শুদ্ধ উচ্চারণ ও লেখা তারচেয়ে বেশি জরুরি। অশুদ্ধ বাক্যগঠন আর ভিনদেশি ভাষার মিশ্রণে প্রতিনিয়ত মায়ের ভাষাকে ধর্ষন করে চলেছি। ইংরেজি বা অন্য কোন বৈদেশিক ভাষায় কথা বলার মধ্যে আমরা নিজেকে স্মার্ট মনে করি। আমরা ভুলে গেছি নিজস্ব ভাষার সঠিক প্রয়োগই হলো সত্যিকারের ভাষাগত আর্ট। বর্তমানে তরুণদের মধ্যে বাংলিশ ব্যবহারের মাত্রা বেড়েই চলেছে। এই বাংলিশ ব্যবহার থেকে তরুণদের বেরিয়ে আসতে হবে। তরুণদের ভুলে গেলে চলবে না; এই তরুণদের রক্তের বিনিময়ে বাংলা ভাষা নিজেদের করে পেয়েছি। নিজেদের দ্বারা ভাষাশহীদদের অবমাননা হোক এমনটা কাম্য নয়। মাতৃভাষার স্বকীয়তা রক্ষায় তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় তরুণ প্রজন্মকে কাজ করতে হবে। একুশের চেতনায় উদ্ভুদ্ধ হয়ে দেশ ও দশের জন্য কাজ করতে হবে। বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের প্রতিটি পর্যায়ে ‘৫২-র ভাষা আন্দোলন অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করেছে। তাই একুশ আমাদের জাতীয় জীবনে এক অন্তহীন অনুপ্রেরণার জায়গা। ভাষার মাস আসলেই মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা আর নানা আয়োজনের মাধ্যমে উৎযাপনের কমতি থাকে না! স্কুল, কলেজ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নানা সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালতেও থাকে নানা আয়োজন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে কবিতা, ছড়া লিখে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এতসব আয়োজন শুধু ফেব্রুয়ারী মাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। এসবের দ্বারা কি ভাষাশহীদদের প্রতি প্রকৃত মর্যাদা প্রদর্শন করা যায়? - না! ভাষাশহীদদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা তখনই হয় যখন-মাতৃভাষার সঠিক ও শুদ্ধ প্রয়োগ হয়। বাংলা ভাষাকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে বাংলা সাহিত্য চর্চা করতে হবে। সাহিত্যকে সময় দিতে হবে, ভালোবাসতে হবে।