ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি রোধে পুলিশ-র‌্যাব

সাফল্য দেখতে আশায় থাকবে ভোক্তা
পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি রোধে পুলিশ-র‌্যাব

সব ধরনের প্রচেষ্টার পর এবার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে মাঠে নামছে পুলিশ ও র‌্যাব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রীরা আগামী রমজানে পণ্যের মুল্য সহনশীল রাখতে নানা পদক্ষেপের কথা বলেছেন। ভোক্তা অধিদপ্তরের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনও নানাভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোও পণ্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে নানা রকম আলোচনা-সমালোচনা করছে। দ্রব্যমূল্য বাড়ার পেছনে সিন্ডিকেট খুঁজছেন অনেকে। সিন্ডিকেট আসলে আছে কি না, তাও বোধগম্য নয়। সিন্ডিকেট থাকলে তা ভাঙা যাচ্ছে না কেন- সেই প্রশ্নও উঠে আসছে। সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে কারা, তারাও তো অদৃশ্য কোনো ব্যক্তি বা বস্ত্র নয়। তাদের শনাক্ত করা কি আসলেই কঠিন? যদি কঠিনই হয়, তাহলে প্রশাসনের ভূমিকাই বা কী? প্রশাসন থেকে যদি সিন্ডিকেট বা অবৈধ মজুতদার শক্তিশালী হয়, তাহলে তো দেশ দেশের মতো চলবে না। ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে বিএনপির পৃষ্টপোষকতায় ব্যবসায়ীরা পণ্যের অবৈধ মজুত গড়ে তোলায় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। তা হলে প্রশ্ন হচ্ছে- ব্যবসায়ীরা যদি বিএনপিরই কথাই শুনে তাহলে ক্ষমতাসীন দলের কথা কোন ব্যবসায়ী শুনবেন, তাদের খুঁজে বের করে আনতে হবে। প্রশাসনের প্রতি অনুগত ব্যবসায়ীদের খুঁজে না বের করলে জনগণ তো আগামী রমজানে দুর্ভোগের মধ্যে পড়বে। মোট কথা, যা যা করলে আসন্ন রমজান মাসে মানুষ পণ্যমূল্য নিয়ে স্বস্তিতে থাকতে পারবে, সে ব্যবস্থা করতে হবে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ করে পুলিশ ও র‌্যাব মাঠে নামলে যদি পরিস্থিতির উন্নতি হয়, তাহলে মন্দ কী? তারাও যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে আর কার কাছে এই দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে- সেই চিন্তাভাবনা থেকেও দূরে যাওয়া যাবে না। সবচেয়ে বড় কথা, যে কোনো প্রকারে হোক জনগণকে স্বস্তি দিতে হবে। ‘ভোগ্যপণ্য লুকিয়ে রেখে যারা দাম বাড়ায় তাদের গণধোলাই দেওয়া দরকার’- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ মন্তব্যের পর সক্রিয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরই মধ্যে রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখতে অবৈধ মজুতদারের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে তারা। অবৈধভাবে মজুতে সংশ্লিষ্টতা মিললেই বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবে পুলিশ-র‌্যাব। পণ্যবাহী গাড়িতে যারা চাঁদাবাজি করে তাদের বিরুদ্ধেও এরই মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য কার্যকর ভূমিকা পালনের নির্দেশ দিয়েছে সরকারের নীতি-নির্ধারক মহল। মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক রেখে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে তৎপর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোও। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে পাঁচ মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে সমন্বিত বৈঠক করেছে। বাণিজ্য, অর্থ, খাদ্য, কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ নীতি-নির্ধারণী বৈঠকে অংশ নেন। নিত্যপণ্যের বাজারে সিন্ডিকেট ও অবৈধ মজুতদার রয়েছে, তা স্বীকার করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলে আসছে সব মন্ত্রণালয়ই। কিন্তু সিন্ডিকেট সদস্য ও অবৈধ মজুতদারদের কিছু কিছু নাম মন্ত্রণালয়গুলোর হাতে থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়ার পর্যাপ্ত তথ্য নেই। এবার এই সিন্ডিকেট সদস্য ও অবৈধ মজুতদারদের সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য-প্রমাণসহ শনাক্ত করতে চায় সরকার। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অবৈধ মজুত ও স্বাভাবিক মূল্য রাখার লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত সভায় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা কার্যকর করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে অনুষ্ঠিত অপরাধ পর্যালোচনা সভায় আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। রোজা শুরুর আগেই যাতে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে সেজন্য নজরদারি জোরদারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সচিবদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকেও আলোচনায় এসেছে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, যারা সৎভাবে ব্যবসা করবে, তাদের সব ধরনের সহায়তা করা হবে। তবে যারা মজুতদারি করে পণ্যের দাম বৃদ্ধির চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে সরকার একটুও পিছপা হবে না। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের ভয়-ভীতি দেখানো সরকারের উদ্দেশ্য না। আমরা সবার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে চাই। সরবরাহ ব্যবস্থায় কোনো ঘাটতি হলে, সবার সঙ্গে কথা বলে তা সমাধান করা হবে। তবে কেউ মজুতদারি করলে সরকার কঠোর হতে পিছপা হবে না। ডিলাররাও (সরবরাহকারী) যাতে জবাবদিহির আওতায় আসে, সেজন্য প্রতি বছর তাদের নিয়োগ নবায়ন করা হবে। অবৈধভাবে চাল মজুত করলে মজুতদারদের জরিমানা অথবা মামলা দিয়ে জেলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।

তিনি বলেছেন, তারা যে দলের, যার আত্মীয়ই হোক না কেন, কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। সারাদেশে মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে, থাকবে। কেউ চালের দাম বাড়ালে সেটা বরদাশত করা হবে না। চালের দাম বাড়ানোর বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ব্যবসায়ীদের চালের দাম বাড়ানোর কোনো যুক্তিই গ্রহণযোগ্য নয়। মজুতদার ও সিন্ডিকেটকে বিএনপি মদদ দিচ্ছে বলে অভিযোগ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি সিন্ডিকেট লালন-পালন করছে, মজুতদারদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে। র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানিয়েছেন, ‘আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে চলমান মজুতদারি ও পণ্যবাহী যানবাহনে চাঁদাবাজি বন্ধে মাঠে নেমেছে র‌্যাব। সবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম অযৌক্তিকভাবে বাড়াতে যারা কারসাজি করছে, যারা পণ্য মজুত করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করবে, তাদের পরিচয় যাই হোক শনাক্ত করে কঠোর আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এজন্য গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও অভিযান পরিচালনার জন্য প্রতিটি ব্যাটালিয়নকে নির্দেশ দিয়েছে র‌্যাব। কমান্ডার মঈন আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন এ ধরনের মজুতদার ও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিতে যারা কারসাজি করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। সামনে রমজান। রমজানে যেন নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক থাকে সেজন্য র‌্যাবের প্রতিটি ব্যাটালিয়নকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চাঁদাবাজ, মজুতদার ও নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিতে যারা কারসাজি করছে তাদেরও শনাক্ত করা হবে।’ পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর জানিয়েছেন, ‘পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে অনুষ্ঠিত অপরাধ পর্যালোচনা সভায় আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। রোজা শুরুর আগেই যাতে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে সেজন্য নজরদারি জোরদারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। পণ্য সরবরাহ চেনের ওপর নজর রাখা হবে।’ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, ‘আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে ডিএমপির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে বাজার মনিটরিং করা হবে। প্রশাসনের এসব কর্তাব্যক্তিদের এমন নির্দেশনায় ভোক্তারা আশ্বস্ত হয়েছেন এটা নিসন্দেহে বলা যাবে। তবে ভোক্তরা আশায় থাকবে তাতের সাফল্য দেখার জন্য।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত