ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শিক্ষার স্বপ্ন নাকি স্বপ্নের শিক্ষা

কামরুন নাহার সাথী
শিক্ষার স্বপ্ন নাকি স্বপ্নের শিক্ষা

শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন নিয়ে এরইমধ্যে যথেষ্ট আলোচনা-সমালোচনা হয়ে গেছে। তা হবেই, পরিবর্তন মানেই ভিন্ন মতাবলম্বীর মন্তব্য। এ কথা সত্য। যে দৃষ্টিকোণ থেকে পরিবর্তনের দুয়ার খোলা হয় এটি শতভাগ, পৃথিবীর কোনো নজিরে নেই। পরিবর্তনের পরবর্তী ধাপ সফল-অসফল বা আশানুরূপের চেয়ে ভিন্ন। এভাবেই পরিবর্তনকে মেনে নেওয়া হয়। বাংলাদেশের প্রাথমিক মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষাব্যবস্থার যে পরিবর্তন এসেছে। অভিভাবক তথা শিক্ষাবান্ধব প্রায় অনেকের মনে ক্ষোভ আর হাস্যপরিহাসের অন্ত নেই। কথা হলো- ভালো শিক্ষা বলতে আসলে কী? তিন-চার বছরের একটি বাচ্চাকে দশটি পাঠ্যধারার সঙ্গে যুদ্ধে নামিয়ে দেওয়া। অধিক পরিমাণের যানবাহন ও যাত্রীসংখ্যার ভিড়ে, মস্ত ব্যাগসহ আদরের সন্তান নিয়ে দু’চার বেলা করে রাস্তা পারাপার। এত বই এত পড়ালেখা, বাচ্চারা হাসতে ভুলে যায়। ভয়ে থাকে পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে। এসবের প্রভাবে কিছুটা দুর্বল মনে হলেই পিটিয়ে খাবার দেওয়া। হর্ষ উৎসাহের দ্বারপ্রান্তে না গিয়ে নির্দিষ্ট সীমাবদ্ধতায় ফেলে দেওয়া। অতিরিক্ত হোমওয়ার্কের জন্য বাসায় মায়ের মমতাহীন কৌশল অবলম্বন করা।

ভালো শিক্ষা বলতে কী শুধু ব্যবসাকেন্দ্রিক? অলিগলি কোনো একটি ফাঁকা না রাখা। কিন্ডারগার্টেন, কোচিং সেন্টার, প্রাইভেট সেন্টার, হাতের লেখা সুন্দরকরণের সেন্টার। এভাবে আলাদা আলাদা অর্থক্রয়ের শিক্ষা গ্রহণ করে বেকারত্বের অংশী হওয়া। মাসের পর মাস কোনো শিক্ষার্থী স্কুলে না গেলে তাকে স্কুলমুখী না করে প্রাইভেটে ঠেলে দেওয়া। বাংলাদেশের ধারা অনুযায়ী একজন মাধ্যমিক শিক্ষার্থীর জন্য নিম্নে দশ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা। এমন অভিভাবক কী গণনা করা হয়েছে। তাদের অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ একত্রে পঞ্চাশ হাজারে দাঁড়ালে কতজন অভিভাবক স্বস্তিতে বহন করতে পারবেন। ভালো শিক্ষা বলতে কী সময়জ্ঞান নয়? সৃষ্টিকর্তা তার প্রদত্ত গুণাবলির দুটি শক্তি মানুষকে দিয়েছেন- একটি জীবনীশক্তি অন্যটি জ্ঞানের শক্তি। জীবনীশক্তি আপনাআপনি বিকশিত হয় আর জ্ঞানের শক্তি অর্জন করতে হয়। শিক্ষার ক্ষেত্রে এটি মানা খুবই জরুরি। বলছি এজন্য, আমাদের সমাজে একশ্রেণির অভিভাবক আছেন। সন্তানের সব কিছুর মধ্যে ঢু মারেন। ডাক্তার হতে হবে, ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে, ক্রীড়াকৌতুকে সময় নষ্ট করা যাবে না। এখন সমাজ খুব খারাপ, আমাদের কালের সেই দিন নেই। মানুষ নষ্ট হয়ে গেছে- কাজেই আমার সন্তানের ভালো-মন্দ আমি ঠিক করে দেবো। আসলে এভাবে ঠিক হয় না। ভাগ্য বিড়ম্বনা বলে একটি বাক্য আছে আবার পরিশ্রমই সফলতার চাবিকাঠি এবং সঠিক সময়ে সঠিক ব্যবহার সফলতার উৎস। এরপরও আমরা যেটিকে পারিবারিক শিক্ষা বলি এটি জাস্ট একজন শিশুকে জানান দেওয়া। সে একটি পরিবারের সদস্য। পরিবারটির পরম্পরায় নিয়মকানুন, আচার-অনুষ্ঠান আছে। গ্রহণীয় রীতিনীতি নির্ধারণে শ্রদ্ধা রেখে পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে সামাজিক ডেভেলপমেন্টে সচেতন করে তুলাই পারিবারিক শিক্ষা। শিক্ষার প্রকৃত রূপ সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মস্বতন্ত্র, বর্তমানের প্রযুক্তিগত ও আচরণগত শিষ্টাচার যাবতীয় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। কাজেই পরিবর্তন চলমান প্রক্রিয়া না হলে শিক্ষাপদ্ধতি অচল থাকার মতোই ব্যবস্থা। কেননা, সময় মস্তিষ্কের সবচেয় বড় শাসক সে প্রভাবিত করবেই। প্রতিটি জেনারেশন এর মাঝেখানে সময় নিজেই শক্তিশালী দেয়াল। সময়োপযোগী কারিকুলাম প্রতিষ্ঠা না পেলে বিশ্বদরবারে দাঁড়ানো ঘুমন্ত স্বপ্ন মাত্র। তাই অভিভাবক নিরঙ্কুশভাবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কোনো একটি নিজ শিক্ষার্থীর মতো নির্বাচন করে তাকে সময়ের বাহনে ছেড়ে দেওয়া। কাজের কাজ শিক্ষক ছাত্রের কমিউনেকেশন কতখানি তা জানা। বিষয়বস্তর পাঠ শিক্ষক তার শিক্ষার্থীকে জানার কৌতুহল যোগাচ্ছে কিনা। সেকেলে মুখস্থ পাঠে ঘনঘন পরীক্ষার কোনো প্রয়োজন আছে। কবুতরের খুপরি ক্লাসঘর নিয়েই শিক্ষাকেন্দ্র খুলে বসা কতটা গ্রহণীয়। বাইরের দেশগুলোতে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রয়োজনে কয়েকটা বই খুঁজে নির্ভুল উত্তর লিখতে দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেই শিক্ষার্থীই পারবে যেই শিক্ষার্থী পূর্বে বইটি ভালোভাবে পড়েছে। এটিই পরীক্ষা। নিয়মিত ক্লাসে শিক্ষক বিদ্যালয়ে শিক্ষা দিয়ে থাকেন। বাসায় স্বল্প পরিসরে হোমওয়ার্ক শিক্ষক বুঝিয়ে দেন। পরদিন শিক্ষার্থী নিজে নিজে হোমওয়ার্ক সম্পন্ন করে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়। বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার কোনো যুক্তিক কারণ নেই। এই কথাগুলো আপা বলতেন। তিনি সপরিবারে লন্ডনে থাকেন। দেশে এলে আপার সঙ্গে আমার বাচ্ছাদের পড়াশোনা ওখানে আপার বাচ্ছাদের পড়ালেখার যে সমস্ত অমিল এসব নিয়ে প্রায়ই কথা হয়। আসলে বাংলাদেশের শিক্ষা প্রাইভেটমুখী। এজন্য অভিভাবকের অত্যাচার সীমাহীন। প্রযুক্তি যেখানে জীবনধারার মান সহজ করে দিয়েছে কলুর বলদ সেজে পরিশ্রম করা শিল্প নয়। সঠিক পদ্ধতি খুঁজে বের করাই হলো শৈল্পিকগুণ। ভালো শিক্ষা বলতে কী শুধুই পরিবর্তন? নাকি কোনো পরিবর্তনই নয়? অবশ্যই একটি আরেকটির ঊর্ধ্বে না। আমরা বাঙালি। আমাদের দেশ বাংলাদেশ। একদিকে আমরা যেমন মাটির মতো সহনশীল অন্যদিকে আমাদের অধিকারের জন্য তেমনই লড়াকু। এই বাঙালির জন্য অনুসরণ, অনুকরণ নয়। এটি যেমন সত্য তেমনি সত্যি বাঙালিরা পৃথিবীর প্রায় দেশে নিজ দেশীয় তাল মিলিয়ে চলতে শিখেছেন। ভিনদেশে বসবাস করে খুঁজে বের করেন কোথায় বসে বাঙালি হাটবাজার। দেশের বাইরে থেকেও অর্জিত দিবস আনন্দের সঙ্গে পালনের মধ্যে গর্ব করেন আমাদের আছে- একুশে ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর। বাঙালির রক্তে, মস্তিষ্কে স্থান করে নিয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত