ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বড় ইফতার অনুষ্ঠান না করার নির্দেশনা

প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান কার্যকর হোক- জাতির প্রত্যাশা
বড় ইফতার অনুষ্ঠান না করার নির্দেশনা

আসন্ন পবিত্র রমজানে সরকারিভাবে বড় ধরনের কোনো ইফতার পার্টির আয়োজন না করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দেন। সেই সঙ্গে বেসরকারিভাবেও এ ধরনের বড় ইফতার পার্র্টির আয়োজনকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। ইফতার পার্টির আয়োজন না করে, সেই টাকা দিয়ে খাদ্য কিনে গরিব মানুষের মধ্যে বিতরণ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন তিনি।

একই দিনে বিকালে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রমজান তো হলো- কৃচ্ছ্রসাধনের মাস। অনেকেরই দেখি রমজানের সময় যেন খাওয়াটা একটু বেড়েই যায়। আসলে সেজন্য তো রমজান নয়, রমজান হলো- সংযমের মাস, সংযম করতে হবে। এখন বিশেষ কোনো একটা জিনিস না খেলেই রমজান আর হবে না, রোজা রাখা যাবে না, বা ইফতার করা যাবে না, এ মানসিকতা বদলাতে হবে। তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশে যা পাওয়া যায়, তা দিয়েই কিন্তু রোজা করতে পারি। এটি না খেলে চলছেই না, এরকম তো কোনো কথা নেই। অন্য সময় মানুষ যেভাবে খায়, সেভাবেই খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। রমজান মাসের আগে প্রধানমন্ত্রীর এই ধরনের নির্দেশনা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ এবং সমসাময়িক। আমাদের দেশের মানুষ ও সরকারের আমলারা সব সময় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের অপেক্ষায় থাকেন।

প্রধানমন্ত্রী না বলা পর্যন্ত কোনো কিছু করা যাবে না, এই ধরনের মন-মানিসকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। জনগণের কল্যাণে কি পদক্ষেপ নেয়া দরকার, সেটা তো উচ্চ শিক্ষিত পদস্থ সরকারি কর্মকর্তারা জানেন। তাহলে কেন তারা কোনো সাধারণ নির্দেশনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের অপেক্ষায় থাকেন? সেটা বোধগম্য নয়। তাদের এমন মন-মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে। আমাদের দেশের বর্তমান অথনৈতিক প্রেক্ষাপটে ইফতার পার্টির আয়োজন করা সমীচীন হবে কি না, এই কথাটি কি কোনো পদস্থ সরকারি আমলা কিংবা মন্ত্রীদের মনে আসেনি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সে কারণে হয়তো এবার বড় ধরনের ইফতার পার্টির আয়োজন করা হবে না।

তবে আশা থাকবে- প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা কার্যকর হবে। আমাদের দেশে ইফতার পার্টির নামে যা হয়, তা নিয়ে ইসলামে কি ধরনের ব্যাখা বিশ্লেষণ রয়েছে, সেটা শুধু আলেমণ্ডওলামারা ভালো জানেন। তবে মসজিদে জুমার দিন ইমাম সাহেব খুতবার আগে যে আলোচনা করেন, সেখানে জাঁকজমকভাবে ইফতার করার আহ্বান জানিয়ে কোনো বয়ান শোনা যায় না। আমাদের নবী-রাসুলদের জামানায় তারা কি দিয়ে ইফতার করতেন, সেটাও আলেমণ্ডওলামায়েদের মুখ থেকে অনেকেই হয়তো শুনেছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে আরো জানিয়েছেন, পণ্যের উচ্চমূল্য রোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে। তারপরও যদি কেউ এভাবে ইচ্ছেকৃতভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়ায়, অবশ্যই তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে পবিত্র রমজান মাস শুরুর আগেই আরেক দফা বেড়েছে বেশ কিছু নিত্যপণ্যের দাম। এই মূল্যবৃদ্ধির জন্য চারটি কারণ চিহ্নিত করেছেন ব্যবসায়ীরা।

সেগুলো হলো- ডলার-সংকট ও এর বাড়তি দাম, চাঁদাবাজি, সিন্ডিকেট এবং উচ্চশুল্ক। গত বুধবার এক মতবিনিময় সভায় দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যবসায়ীদের নিজেদের যে ‘দায়িত্ব-কর্তব্য’ রয়েছে, সেটি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছেন, অতি মুনাফা ও মজুতদারি থেকে বেরিয়ে আসতে ব্যবসায়ীদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। রমজানে নিত্যপণ্যের উৎপাদন, আমদানি, মজুত, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে’ গত বুধবার আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় ভোগ্যপণ্যের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বড় কোম্পানির প্রতিনিধি, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী, ঢাকার বিভিন্ন বাজার কমিটির নেতা, বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রতিযোগিতা কমিশনসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘এটা ঠিক আমরা চ্যালেঞ্জের মধ্যে ব্যবসা করি। কোনো ব্যবসায়ী পণ্যের বেশি দাম রাখবেন না। আপনারা রমজান মাসে ন্যায্য লাভ করেন। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে সতর্ক আছেন। তাই সবাইকে সাবধান হতে হবে। ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন অভিযোগ ও পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে করণীয় বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম জানান, বর্তমানের দেশের অর্থনীতিতে স্বাভাবিক পরিস্থিতি নেই। এই মুহূর্তে ডলার-সংকট নিরসন ও শুল্ক কমানো কঠিন। তবে চাঁদাবাজি ও সিন্ডিকেট বন্ধ তুলনামূলক সহজ। চাঁদাবাজি বন্ধে ব্যবসায়ীদের জোরালো অবস্থান নিতে হবে। স্থানীয় বাণিজ্য সংগঠনগুলোর মাধ্যমে চাঁদাবাজির তথ্য সংগ্রহ করে তা সরকারের কাছে দিয়ে রাজনৈতিকভাবে এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। আর সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে আইন সংস্কার করে ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের উৎপাদন এবং পণ্য সরবরাহের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। একচেটিয়া ব্যবসা ভাঙতে পারলেই সিন্ডিকেট কমবে। কি করতে হবে আর কি করতে হবে না, তার বিশ্লেষণ না করে ওই পদক্ষেপ নেয়া উচিত- যাতে রমজানে দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে থাকে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত